Translate

Tuesday, July 11, 2023

ভারতীয় উন্নয়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

 


 

 শ্রী রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায় (শ্রীডক্টর) - ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ ।।

" ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ ইংরেজি সংস্করণে এটা আমাদের এই ব্লগ এ লেখা আছে। নীচে তারই বাংলা সংস্করণ দেওয়া হল।"
শুধু "শ্রীযোগ সেন্টারে"র উদ্দেশ্যটি বাংলায় নতুন সংযোজন করলাম। ….

(INDOLOGY- একটি বিষয়।  তবে  আমার ব্লগে(www.indologyblog.blogspot.com) আসন্ন দিনগুলিতে স্বর্গীয় পৃথিবী সম্পর্কে কথা বলার জন্য, অনুগ্রহ করে একজন অনুসরণকারী হন এবং অনুসরণ করার জন্য অন্যদের পরামর্শ দিন।)

তাদের কাজ করতে দিন।  আসুন আমরা তাদের সাথে কাজ করি।

ভারতীয় উন্নয়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক যা এখন আমাদের মহান প্রধানমন্ত্রী চান

  [একজন ডাক্তারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যিনি গ্রামীণ এলাকায় অবস্থান করছেন শুধুমাত্র এই স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং গণ মানসিকতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য।]


  যেহেতু আমি বাংলার আরামবাগ এলাকায় বাংলায় থাকি, আমার দৃষ্টিভঙ্গি এই এলাকার উপর ভিত্তি করেই হবে।  তবে আমি মনে করি এটি অন্যান্য জায়গায়ও প্রযোজ্য হবে।  কারণ আমি জনগণের মনস্তত্ত্বও জানার চেষ্টা করছি।

  1. পরিচ্ছন্ন ভারত :

  টয়লেট

  আমি মনে করি, যদি টয়লেটগুলি সরকার দ্বারা তৈরি করা হয় এবং এটি যদি কারো কাছে কোনো নির্দিষ্ট মূল্য না নিয়ে, তিনি যেটুকু দান করতে পারেন, তার বিকল্প থাকে,   তাহলে প্রকল্পটি সফল হবে।

  যুক্তি

এখানে জনসাধারণ, বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে পছন্দ করে।  পুকুর বা নদীতে স্নান করতে পছন্দ করে।  এটাই মনোবিজ্ঞান।  সুতরাং আপনি তাদের যা বলবেন তা অকার্যকর থাকবে।  কোনো রাজনৈতিক দল তাদের এটা করতে বাধ্য করবে না।  এবং আমাদের আত্ম উপলব্ধি প্রয়োজন।  কিন্তু সরকার যদি তাদের একটি সুযোগ দেয়... বিনা খরচে তা করার... এবং একটি বিকল্প মাধ্যম রাখুন ...'সামান্য দান'... যা টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এবং জল, আলো ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে  । আমি মনে করি এটি একটি সফল পরিকল্পনা হবে।

  গতি অসুস্থতা

  রেডিও টিভির মাধ্যমে গণশিক্ষা, স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে যেমন আশা কর্মী স্কুল যদি বাসে বমি করার জন্য প্লাস্টিক বা বর্জ্য ব্যাগ বহন করার জন্য এবং বাস থেকে নামার পর ডাস্টবিনে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।


  আমি এখানে লক্ষ্য করেছি, যখন লোকেরা বাসে ভ্রমণ করে বিশেষ করে মহিলারা, তারা সাধারণত গতি অসুস্থতায় ভোগে।  এবং তারা জানালা দিয়ে বমি করে।  সেই সময়ে তারা বাসের কাছে অন্য লোকের চলাফেরা বা আসা সম্পর্কে চিন্তা করে না।

  পুকুর

  অন্তত একটি পুকুর অবশ্যই গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্য এবং গ্রামের প্রতিটি এলাকায় স্নানের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

  শ্রমিক শ্রেণীর জন্য ‘স্নান করার জন্য বাথরুম’ খুব একটা কার্যকর হবে না।  বরং প্রতিটি এলাকায় চাষের জমি বা মৎস্য চাষ থেকে কোনো কীটনাশক ছাড়াই যদি একটি পুকুর স্যানিটাইজ (জীবাণু মুক্ত) করা হয়।  এটি শুধুমাত্র স্নান, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য হবে। তাহলে সরকার তাদের আরও ভাল স্বাস্থ্য দিতে পারে।



  2. সরাসরি বিপণন :

  ঔষধি গাছ এবং এর পণ্য এবং চাষের পণ্যের বাজারজাত করা কঠিন।  ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে যদি এই সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে গ্রামীণ এলাকা উপকৃত হবে।

  3. ব্যক্তিগত সাজসজ্জা :

যদি  ই-শিক্ষার মাধ্যমে কৃষকের ছেলে ও মেয়েকে ‘ব্যক্তিগত সাজসজ্জা’ শেখানো হয়।  এটি জনগণের আস্থার স্তরকে বাড়িয়ে তুলবে।  এবং দেশকে আন্তঃমিশ্রণ, বিপণন, পরীক্ষা, দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে৷

  যুক্তি :

  এখন পর্যন্ত ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষ এবং সাহেবের আচরণ ভারতীয় মনের উপর প্রাধান্য পেয়েছে।  এটি মনোবিজ্ঞান।  আসুন আমরা একটি ....'কৃষকের ছেলে সাহেব'......তাকে গ্রামে রাখি।  অন্যথায় ..... একটি 'শহর-গ্রাম' ব্যবধান ঘটছে।  এটি জীবন এবং মানের মধ্যে গণনা করে।  'স্বদেশী'-এর সমস্ত বক্তৃতা গ্রামের জন্য থাকে এবং এমনকি যখন এটি সম্পর্কে কথা বলতে হয়, সে ইংরেজিতে কথা বলে।  স্বদেশীরা পছন্দ করে মেট্রো সংস্কৃতির লোকদের গ্রামের সংস্কৃতিতে পরিণত করতে বা তাদের একটি সহজ জীবনধারা অনুসরণ করার জন্য সাহায্য করতে।  কিন্তু তারা গ্রামের ছাত্রদের কাছে মেট্রো সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করে না।  তাহলে কেন আমার কৃষকের ছেলে ইংরেজিতে পারদর্শী হবে না?  তাই ই-শিক্ষার মাধ্যমে তাদের সাজসজ্জা শেখান, এটি মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।  এবং শেষ পর্যন্ত আত্ম সংমিশ্রণ, বিপণন, পরীক্ষার শর্তে দেশকে সাহায্য করবে, দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে।

  তারা আধুনিক মেট্রো সংস্কৃতি এবং চরম স্বদেশী সংস্কৃতির মধ্যে দমিত হয়ে যাচ্ছে, কোনটিই একজন সাধারণ মানুষের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।

  4. সংহত ঔষধ :

  একটি নতুন মেডিক্যাল পদ্ধতি শুরু করতে যেখানে একটি হোলিস্টিক প্রণালী চিকিৎসা দেওয়া হবে।  যার লক্ষ্য হল কম অ্যান্টিবায়োটিক, কম খরচ, কম তদন্ত, কম সার্জারি এবং দীর্ঘ স্বাস্থ্যকর জীবন।

  যুক্তি: গ্রামীণ এলাকায় আমিও খুঁজে পাচ্ছি অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতির পাশাপাশি দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাও জনসাধারণের কাছে সমান জনপ্রিয় এবং সস্তা।  ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার বিভিন্ন ধারা রয়েছে যা কখনও কখনও একে অপরের বিপরীত।  এই চিকিৎসা ধারাগুলির মধ্যে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমন্বয় সৃষ্টি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে এই থেরাপির পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

(ডাঃ রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়)

Saturday, June 24, 2023

ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তার সমাধান

শ্রী রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায় (শ্রীডক্টর) - ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ।।

" ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ ইংরেজি সংস্করণে এটা আমাদের এই ব্লগ এ লেখা আছে। নীচে তারই বাংলা সংস্করণ দেওয়া হল।"


শুধু "শ্রীযোগ সেন্টারে"র উদ্দেশ্যটি বাংলায় নতুন সংযোজন করলাম। ….

INDOLOGY- একটি বিষয়।  তবে এখানে আসন্ন দিনগুলিতে স্বর্গীয় পৃথিবী সম্পর্কে কথা বলার জন্য............... অনুগ্রহ করে একজন অনুসরণকারী হন এবং অনুসরণ করার জন্য অন্যদের পরামর্শ দিন..........



 ভারতে দুর্নীতি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত।
তার "স্বচ্ছতার সূচক" খুবই কম৷
এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের
১. অপেক্ষা করতে হবে এবং
২. কঠোর পরিশ্রম করতে হবে "নতুন প্রজন্ম" গড়ে তোলার জন্য।
এটা ছাড়াও নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর সরকারের জোর দেয়া উচিৎ।
১.শৈশব থেকেই আমাদের নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন।
 ২ নিজস্ব  সনাতন‌ ভিত্তিক ভারতীয় সমন্বয়ী দর্শন।
৩. আত্মাকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রণ।
৪.  নিয়মিত যোগ ও
৫.ধ্যান  অনুশীলন করা প্রয়োজন।
 এগুলি ভারতীয়দের জন্য অপরিহার্য। এটি একটি ন্যূনতম জীবনযাপনের শৈলী তৈরি করবে।
৬. আমাদের প্রয়োজন নিজস্ব পণ্যের উদ্ভাবন,
৭.জ্বালানি,
৮.প্রযুক্তি এবং  
৯.অলঙ্কার।
তাহলে আমরা অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাব।

জ্বালানি:
সম্পদ নিষ্কাশনের প্রধান উৎস হিসাবে এটি অপরিহার্য এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নে বিকল্প উৎসকে ফলপ্রসূভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অনেক দেশ এটা সমর্থন করবে।
আমাদের প্রবল বিরোধিতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে।




 [একটি আলোর চারপাশে মাকড়সার জাল যার মধ্যে অনেকগুলি পোকা রয়েছে।]


তাই এর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা এবং নতুন মস্তিকের প্রয়োজন।


পণ্য ও প্রযুক্তি:
চীন দেশকে দেখুন। তারা কতটা উদ্ভাবনী। আজ প্রায় সমগ্র ভারত তাদের উদ্ভাবনে পরিপূর্ণ।  আমাদের নিজেদেরই স্থির থাকতে হবে কারও কাছ থেকে কোনো পুরস্কারের আশা না করে।

অলঙ্কার:
এটা সর্বদাই লোভজনক প্রত্যেকের কাছে। বেশিরভাগই  সোনার অলঙ্কারের পক্ষে।  কিন্তু যদি সমস্ত   ভারতবাসীদের মনের গঠন এমন হয়ে যায় যে বেশিরভাগ মানুষ সোনার গয়নার চেয়ে আসল ফুলের  গয়না বেশী ভালবাসবে,(এটা সম্ভব কয়েক প্রজন্ম ধরে শিক্ষা ও চিন্তাভাবনায় ফুলের সপক্ষে বিষয় আনতে হবে।)
"ফুল" যেটিকে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যে, ফুলটি হবে প্রাকৃতিক। অথচ নতুন জিনগতভাবে উদ্ভাবন হয়ে সেটি সর্বদাই সতেজ হয়ে থাকে ও সগন্ধ যুক্ত। তাহলে সোনার চাহিদা কমে হবে এবং এর পরিবর্তে বিদেশ থেকে টাকা এদেশে আসবে।

 এগুলি সফল করতে ভারতীয়দের
১০.আত্মসম্মান,
১১.আত্মবিশ্বাস ও
১২. বেদের গভীর জ্ঞানের সাথে নতুন প্রজন্মের নতুন মস্তিকের যোগাযোগের দাবি রাখে [যেহেতু এটি উদ্ভাবনী চিন্তার মূল প্রবাহ]।
এছাড়াও ১৩. নিজস্ব সমন্বয়ী চিকিৎসা,
১৪. ভারতীয় ঘরাণার বিশ্ব বিপনণ‌
১৫.  পৃথিবীর কম জনসংখ্যা অন্চলে ভারতীয়দের পাঠান‌ভ্ বসবাস ও উপার্জনের জন্য।
১৬. গ্লোবাল ট্যুরিজম।

 এর প্রয়োগগুলি উন্নত ভারতীয় জীবনের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন।  তাহলেই ভারত শক্তিশালী হতে পারে।
 
ভারত সরকার সহ সমস্ত রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল, যারা ভারতকে ভালবাসে, সকলকেই এই মিশনটিকে সফল করতে এগিয়ে আসা উচিৎ, অন্যথায় ভারতের দুর্দশা কখনই কাটবে না।


ডাঃ রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়। 

 



Wednesday, June 7, 2023

৹ || আগামী পৃথিবী ও সুখের সন্ধান || ৹


INDOLOGYBLOG- অনুগ্রহ করে একজন অনুগামী হন এবং অন্যদের অনুসরণ করার পরামর্শ দিন......

" ১৪ ই মে, ২০১২ ইংরেজি সংস্করণে এটা আমাদের এই ব্লগ এ লেখা আছে। নীচে তারই বাংলা সংস্করণ দেওয়া হল।"
শুধু "শ্রীযোগ সেন্টারে"র উদ্দেশ্যটি বাংলায় নতুন সংযোজন করলাম। ....
 
-প্রতিদিন আমি আনন্দ এবং জীবনী শক্তির অমৃত আহরণ করি এবং প্রতিদিন আমি মনে করি আমাকে অবশ্যই এটি সকলকে বলতে হবে।

আসুন সকলকে এই অভিজ্ঞতা লাভ করতে দিন! সম্পূর্ণ সার্কেডিয়ান(সারাদিনের) ছন্দের সাথে এই অনুভূতিটি কত সুন্দর। আমি মনে করি বিশ্বের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও এটি শেখানো উচিৎ।

  কিন্তু এটা কি কেউ শুনছে? আমার সন্দেহ হয়, অন্যথায় অবশ্যই কিছু প্রশ্ন থাকত।
 বেদ দ্বারা নির্দেশিত অথচ স্ব-নির্মিত(প্রত্যেকের নিজস্ব) নির্দিষ্ট ছন্দের সাথে জীবন পরিচালনার জন্য যদি কিছু বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ শুরু করা হয় তবে একটি বিশ্বব্যাপী নিজেদের বাড়ি তৈরি হবে।

 সেখানে আমরা( যারা যারা ঐভাবে জীবন পালন করবেন, তাদের) শৃঙ্খলার সাথে এই সংসার ত্যাগ না করেই সবকিছু উপভোগ করতে পারি।
আসুন... এখানে আমার কাছে আসুন। আমরা নতুন জীবন গড়ি।
এটাকে শ্রীযোগ বলে। বেদেই এসব ছন্দের সন্ধান আছে। তার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি আমি খুঁজে পেয়েছি। একে "সবন" বা "সবনম্" বলে।

"শ্রীযোগ সেন্টার" নামে একটি আশ্রম তৈরি করেছি। বিশ্বের মানুষ যাতে রাতে এটি শিক্ষা নিতে পারেন।

 আসুন। শিখুন। অন্যকেও শেখান।  বিশেষ করে বিদেশিদের। গড়ে উঠুক বিশ্বব্যাপী একটি পরিবার। যেখানে সবাই থাকবে ( যদি আমরা ছন্দায়িত হই,)। পরস্পরের আত্মীয়তা গড়ে উঠুক।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাক 'সারা পৃথিবীতেই আমাদের ঘরের' র স্বপ্ন। আপনি কি চান না সারা বিশ্বে আপনার আত্মীয়রা থাকবে আপনার সুখে ও দুঃখে। আর আপনি তাদের কাছে বেড়াতে যাবেন, অন্য দেশের লোকও আপনার কাছে আসবে আপনার আশেপাশের জায়গায় বেড়াতে যাবার জন্য?
শ্রী রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায় (শ্রীডক্টর)।

সব এক
একই সব।।


Thursday, June 1, 2023

৹ || Indology - আসন্ন দিনে স্বর্গীয় পৃথিবীর জন্য একটি বিষয় || ৹

 




" ৪ ঠা মার্চ, ২০১০ ইংরেজি সংস্করণে এটা আমাদের এই ব্লগ এ লেখা আছে। নীচে তারই বাংলা সংস্করণ দেওয়া হল।"

শ্রী ভগবত গীতা এবং বেদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলছেন জীবনের বৈদিক পথ অনুসরণ না করতে, এটি প্রত্যাশায় পূর্ণ, স্বর্গ (স্বর্গীয় সুখ), কারণ এটি নিরর্থক।  তাঁর উপদেশ হল - তাঁকে অনুসরণ করা , সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, তাঁর শরণ নেওয়া। সমস্ত দ্বান্দ্বিকতার ঊর্ধ্বে এটিই চিরন্তন আনন্দের পথ।
 এখন আমরা কোথায়?  এটা স্পষ্ট যে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের যুগ থেকেই এই ধারণা সমগ্র ভারতে নিহিত ছিল। পরবর্তীতে ভারতে বিভিন্ন ধর্মের বিকাশ ঘটেছে;  জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম...... ইসলাম এবং ইশাইজমের (খ্রিস্টান) মত অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি সহ বিভিন্ন রাজবংশ দিয়ে শাসিত হয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ মৌলিক ধারণা একই রকম...... তাই, আমরা একে বলতে পারি.....  .  শ্রী কৃষ্ণের পরবর্তী সময়কাল।  যার শেষটি তীক্ষ্ণভাবে ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণের কালের সাথে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা একে যুগ বলতে পারি।  এটা ছিল কলিযুগ।
এখন আমরা সত্যযুগে আছি।  
এটা সমমনা গোষ্ঠীর সমস্ত মানবজাতির মধ্যে আন্তঃসংযোগের  যুগ।
এটা জ্ঞান বিনিময়ের সময়।‌ উচ্চ বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনের সময়।  
এক নতুন মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এই শ্রেণীটি স্পষ্টতই একটি পার্থিব সম্প্রদায় যা জাতি/ক্ষেত্র/দেশ/ধর্ম/ভাষা/অর্থ শক্তি/পেশী শক্তি/যেকোনো পার্থিব জিনিসের মধ্যে আবদ্ধ নয়।  
এটি বিবর্তন.......প্রকৃতি থেকে একটি নির্বাচন......একটি স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি।
ফুলের কুঁড়ির মতো....সারা বিশ্ব জুড়ে।  
তাদের সাম্য-পুনরাবৃত্তি তাদের একত্রিত করবে...... তাদের চিন্তার আদান-প্রদান, বিশ্বের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, প্রকৃতির প্রতি তাদের সেবা পৃথিবী এবং মানবজাতির জন্য কল্যাণকর কাজ ...... এই সবই তাদের একত্রিত করছে।  ......এই বিবর্তন জিনগত।
 সারা বিশ্বের সুপারমাইন্ডেড প্রজাতির কিছু মহা মানুষের প্রভাবে এটি এই যুগের ফলাফল।
  .....নতুন যুগ মানে এই নয় যে পুরোনোদের নির্বাসিত/সমাপ্ত করা হয়েছে ; সবকিছুই অক্ষত। তবে এখন একটা তাগিদ, অন্য কিছুর প্রতি ঝোঁক স্পষ্ট। ......আর একটা  স্পষ্ট বিষয় হল স্বর্গের (স্বর্গ) সুখের প্রতি অনুরাগ।

 বেদে জীবনের লক্ষ্য হল চতুর্বর্গ। ধর্ম (নীতি, আচার), অর্থ (অর্থ, সম্পর্ক), কাম (সামাজিকভাবে স্বীকৃত ইচ্ছা, প্রজাতির ধারাবাহিকতার জন্য প্রজনন) মোক্ষ (ত্যাগ, আত্মজ্ঞান, জীবন্মুক্তি।)
সব যুগের জন্য এটাই জীবনের লক্ষ্য।  

কিন্তু কৃ্ষ্ণত্তোর যুগে জোর দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র তপস্যা , শরণ ও বিচক্ষণতার দিকে।

 এখন মানুষ চায় চতুর্বর্গ। শক্তি (দুর্গা, কালী,‌ইত্যাদি), শিব, গনেশ ইত্যাদি এজন্যই পূজা করে।
অহিংস‌ ও দীনতার ভাব অনেক উঁচুতে। কিন্তু জগত আজ শুধু এটিই চায় না।
 নিশ্চয়ই এই  বৈষ্ণব বিচার ও আত্ম নিয়ন্ত্রণের অন্তর্নিহিততা আমরা অর্জন করেছি/আমরা গ্রহণ করেছি/আমরা স্বীকার করছি.......কিন্তু  আজ লক্ষ্য ভিন্ন, চতুর্বর্গ।

শ্রী রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়।

Friday, April 21, 2023

৹|| পশুত্ব থেকে মুক্তি ||৹

 



"রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪ ইংরেজি সংস্করণে এটা আমাদের ব্লগ এ লেখা আছে। নীচে তারই বাংলা সংস্করণ দেওয়া হল।"

|| পশু এবং পশুপতি ||
পশু [প্রাণী] এবং পশুপতি [প্রভু]।
জন্ম থেকেই আমরা নিজেদের মধ্যে পশু এবং পশুপতি উভয়ই বহন করি। মানব-প্রাণী। খারাপ শোনালেও, প্রাণী বা পশু সমার্থক। কিন্তু অন্যদের থেকে আলাদা। এর মধ্যে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা, উন্মাদনা আবার আত্মনিগ্রহনীতি এবং পরার্থপরতা যা অন্যান্য সাধারণ প্রাণীদের মধ্যে নেই।

আমাদের আত্মা-শক্তির জটিল অবস্থার (Soul- Energy Complex) তিনটি স্তর রয়েছে।  1. তম 2. রজ  3. সত্ত্ব। তাই পশুর তিনটি স্তর আমাদের মধ্যে রয়েছে। তম তে মানব পশু বিকৃতের সঙ্গে খুন, ধর্ষণ,ড্রাগ, ইত্যাদিতে কুলুষিত। রজ তে মানুষ লোভ, ক্রোধ, লালসা ও সম্মানের জন্য পাগল। সত্ত্বতে এর অত্যাধিক প্রদর্শনী বৃত্তি ও অহংকার আছে।  [এগুলি এই পশুদের গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃত্তি। কিন্তু সকলেরই নয়।] সর্বোপরি একটি ঐশ্বরিক পশুও আমাদের মধ্যে রয়েছে। দৈনিক চক্রের চারপাশে তারা বিনিময়যোগ্য। তাই শরীর সবকিছু অনুভব করতে পারে এবং কেউ কেউ তাদের জীবনে মাধ্যমে তা অনুভব করতে পারে না। এই অনুভূতি আবার এক প্রকার যাত্রা[আত্মার যাত্রা]। এবং নিজেকে একটি ঐশ্বরিক পশুতে প্রতিষ্ঠিত করাই গন্তব্য। যেখানে পশুপতি আবির্ভূত হন। এটিই আধ্যাত্মিক জীবনের মূল উদ্দেশ্য।
সকালে সত্ত্ব, দিনে রজ এবং রাতে তম পশু আবির্ভূত হওয়া উচিৎ। বাস্তবে তা ঘটছে। না। এখন মানুষের এই তম ও রজ রূপটিই বেশী প্রকাশিত। যত সহজে রাজসিক ও তামসিক হওয়া যায়, সাত্ত্বিক ও ঐশ্বরিক তত সহজে হওয়া যায় না।
1/2/3/4/5/6/7 বার নিয়মিত নিজেকে প্রত্যাহার করা/ সবন/প্রার্থনা/ধ্যান/জপ/শরণ করা,  এগুলি প্রতিদিন করা আবশ্যক। সকল মানুষ তাদের নিজস্ব ধর্ম/গুরুর উপদেশ/ শ্রীগুরু /সম্ভাবনা এবং ক্ষমতা এই সব অনুসরণ করে জীবনকে ছন্দময় করে তোলা, যোগের মাধ্যমে শারীরিক পরিবর্তনে সাহায্য করা, পরিষ্কার জলে সাধারণ স্নান এবং পবিত্রতা হল তমপশু র শেষ বিন্দু।

প্রার্থনা, পূজা, উপবাস, হোম/যজ্ঞ, প্রাণায়াম হল রজ পশুর শেষ বিন্দু।
প্রতিটি প্রশ্বাসে বীজ মন্ত্রের অবিরল অভ্যন্তরীণ জপ এবং গুরু কৃপা হল সত্ত্ব পশুর শেষ বিন্দু।
করুণা এবং করুণার সমান এবং নিরপেক্ষ দান হল ঐশ্বরিক পশুর শেষ বিন্দু।

পৃথিবীর সমস্ত সমস্যা এই নর-পশুর[মানব-প্রাণী] জন্যই উদ্ভূত হচ্ছে।  শুধুমাত্র মানুষ নিয়মিত অনুশীলনে এই পশুত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।  এইভাবে আমরা এই সমস্ত পশুত্ব এবং অনেক রোগ থেকেও মুক্তি পেতে পারি।

This article in English was posted 10 years back. here is the link.

Wednesday, April 5, 2023

৹|| "শ্রীমদ্ভগবৎ গীতা" কেন পড়া উচিত? ||৹

 

 

 


 

গীতা হচ্ছে শ্রীকৃৃষ্ণের বানী। কে এই শ্রীকৃৃষ্ণ? তিনি হচ্ছেন হিন্দু বিশ্বাসমতে ঈশ্বর বা ভগবান। তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন রূপে দুনিয়াতে এসেছেন মানুষের হেদায়েতের জন্য। তিনি রাম হয়ে এসেছিলেন রামায়ন যুগে। মহাভারত যুগে তিনি শ্রীকৃৃৃষ্ণ রূপেই এসেছিলেন।

শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে ও দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বেড়ে যাবে, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য ভক্তের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর “অবতার” রূপ নিয়ে থাকেন।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হচ্ছে মহাভারতের অন্যতম ধর্মযুদ্ধ। একই পরিবার উদ্ভূত পাণ্ডব ও কৌরব শিবিরের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধের বর্ননা হচ্ছে মহাভারত। পাণ্ডবরা ন্যায়, কর্তব্য ও ধর্মের পক্ষ। অন্যদিকে কৌরবরা অন্যায়, জোর-জবরধস্তি ও অধর্মের পক্ষ।

সেই যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের পক্ষ নিয়ে উনার শিষ্য অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে করনীয় নিয়ে বানী প্রদান করেন। সেই সাথে কিভাবে নিজের জীবন গঠন করতে হবে সেই বানীর প্রদান করেন। কিভাবে অসুরের বিনাশ ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে সেই বর্ননার সন্নিবেশ হচ্ছে ভগবৎ গীতা।

 

এই ধর্মগ্রন্থ কেন পড়া উচিত?

 

১. পরিপূর্ণ মানব জীবন কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তার সন্ধান রয়েছে গীতায়।

২. বিভ্রান্ত মানুষকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দেয়।

৩. গীতাপাঠ মানুষকে সৎ কর্মের পথে দিক নির্দেশনা দেয়।

৪. জীবনের চলার পথে কোনও সঙ্কটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় গীতা অধ্যয়নে।

৫. গীতা মানব দর্শনের কথা বলে।


Wednesday, March 22, 2023

অমৃতকথা | বীরেশ্বরানন্দ | দশম সংঘাধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন


এই অমূল্য উপদেশগুলি  পরমপূজ্যপাদ দশম সঙ্ঘগুরু স্বামী বীরেশ্বরানন্দজীর শ্রীমুখ নিঃসৃত:-

¤ জপ    মানে   কি ?  
ঈশ্বরের  কোন বিশেষ   মূর্তি   যিনি   আমার   ইষ্ট  দেবতা  তাঁর   নাম  বা  মন্ত্র   পুনঃ  পুনঃ   আবৃত্তি   করার   নাম  জপ ।   

¤  মন্ত্র   মানে  কি ?   
যা  আমাদের   মনকে  বাইরের   জগৎ থেকে   টেনে   এনে  ভগবৎ  পাদপদ্মে   ধরে  রাখে।  আর   বীজ  মন্ত্র   হচ্ছে   ---  যে - মন্ত্র জপের   দ্বারা   অন্তরের  আধ্যাত্মিক শক্তির  স্ফূরণ  হবে , যে  শক্তির  জোরে  মানুষকে  আস্তে   আস্তে  ভগবদ্দর্শনের  দিকে  নিয়ে যাবে।

¤ সেইজন্যই   জপ  করাটাই    হচ্ছে   মুখ্য   জিনিস ।  জপের    ভিতর  যে  বীজমন্ত্র  তার  মধ্যে  তোমার    সমস্ত  আধ্যাত্মিক  শক্তি   আছে।  জপ   না  করলে   সেই  শক্তির   স্ফূরণ   হবে  না। সেইজন্য   শুধু  ১০৮ -  বার   জপ   করলে   কি করে  এগুনো   যাবে ?   বেশি   জপ   করতে   হবে।   কিন্তু   অনেকেরই   হয়তো   সংসারের   নানা  কাজের    জন্য   বেশি   সময়  থাকে   না ।

¤ তাদের  জন্য  বলা  হয়েছে,  সবসময়  তোমরা  মনে  মনে  জপ   কর।  তোমাদের  কাজকর্মের  ভিতরে  মনে   মনে   জপ   কর। আমাদের   সংসারের   কাজকর্মের   সঙ্গে  সঙ্গে  ভগবানের  নাম  নিতে  হবে। মনে  মনে  স্মরণ করতে  হবে ।  এটা  যদি করতে   পার,  তবে  কম  সময়ের   জন্য   জপ  করলেও   পূরণ   হয়ে  যাবে।  দীক্ষা   নিয়ে   ১০৮  বার   জপ  করব,  তার   জন্য   দীক্ষা   নয়।  তোমাদের   জপ  করতে  হবে   সবসময় ।  

¤ এছাড়া  আর  একটা  জিনিস  হচ্ছে  আমরা  যতই   ধর্মজীবন  যাপন   করি ,  আমাদের   সংসারের   প্রতি  টান   থাকে।  তাহলে   বেশি   এগুনো   যাবে   না।  আমাদের    বৈরাগ্য   অবলম্বন   করতে   হবে।  বৈরাগ্য    অবলম্বন   করতে   গেলেই   প্রথমে    বিচার   করতে   হবে। বিচার   করে  আমরা    দেখব  সংসারের   কোন   কিছুই   স্থায়ী   নয়,  সবই  নশ্বর ।  অতএব  যিনি    সর্বদা   আছেন   সেই  ভগবানকে   আমাদের   পেতে   হবে।  যখন  মনে  এই ভাবটি  ওঠে , তখনই   আমাদের   ধর্ম জীবনের   পক্ষে   সুবিধা ।

¤ সংসারে  তিনটি   জিনিস   দুর্লভ  সেই  তিনটি   জিনিস   হচ্ছে  -------   মনুষ্যজন্ম , ভগবান  লাভ করার  ইচ্ছা,  আর  মহাপুরুষের সঙ্গ।  আমাদের  সকলের   মনুষ্যজন্ম   তো   হয়েছেই , আশা   করি,  আমাদের   সকলেরই   ভগবান    লাভ   করার   ইচ্ছাও  আছে।

¤  যাঁরা  মহাপুরুষের  সংস্পর্শে  আসতে  পারেননি,    তাঁরা  কথামৃত  পড়লে  ঠিক  সেই   মহাপুরুষসঙ্গ , সাধুসঙ্গ    পাবেন  ।   যদি    ধীর   ভাবে   কেউ   কথামৃত  পড়ে  কোন   একটা  দিনের   ঘটনাকে  ধ্যান   করে ,  তবে   সে   ঠিক  দক্ষিণেশ্বরে   চলে    যাবে   ঠাকুরের  ঘরে  ,   আর ধ্যানে   বসে  সে   ঠাকুরের  কথাই   শুনবে। ঠিক  এইভাবে   চিন্তা   করতে  হবে। এই  ভাবে  যদি  হয় তবেই       সাধুসঙ্গ  হয়ে   গেল।

¤  রাজা   মহারাজ   বলতেন  "তোমাদের  এক   কথায়   ব্রহ্মজ্ঞান   দিচ্ছি   আমি।   রোজ  কথামৃত    পড়লে   সংসারের   যা   ঝামেলা,  সংসারের    দিকে    আসক্তি,  এসব   আস্তে  আস্তে   কমে   যাবে।  আর  ভগবানলাভের   জন্য   মনে   খুব    তীব্র   ইচ্ছা   হবে ।"

. সংগৃহীত

Friday, March 10, 2023

|| বেদে দ্বৈত স্বত্বা ||

 বেদে দ্বৈত স্বত্বা।

  বৈদিক যুগে  কিছু ঋষি নারীতে পরিণত হয়েছিলেন।
  ( ঋক বেদ: অষ্টম  মন্ডল, 33 সূক্ত।
  ইন্দ্র দেবতা, কাণ্ব গোত্রের প্রিয়মেধা ঋষি, গায়ত্রী এবং অনুস্তুভ ছন্দ। স্তোত্র: 17,18 19।)
  "ইন্দ্রের চিদ ঘা....ব্রহ্ম বভুবিথা"।
 ( পবিত্র ও ঐশ্বরিক ঋষি প্রিয়মেধা নিজের সাথে কথা বলছেন।)
  "তোমার আত্মচেতনা ভগবান ইন্দ্র। তোমার মন একটি মহিলার মত।  খুব চঞ্চল, হালকা এবং গল্পপ্রিয়।  তোমার নাক জোড়া যমজ অশ্বিনী। এটি আপনাকে এবং আপনার রথ বা শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে।  এইভাবে প্রাণায়ামের মাধ্যমে আপনি উপরের স্তরে উন্নীত হতে পারেন এবং ইন্দ্রকে খুঁজে পেতে পারেন।  হে ভদ্রমহিলা (স্বয়ং) লাজুক মহিলাদের মত নিচের দিকে তাকান।  সরাসরি উপরে  তাকাবেন না।  মূলাধারে মনোনিবেশ করুন।  মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন।  ধীরে ধীরে উপরের দিকে সাঁতার কাটুন।  অন্যথায় আপনি ব্রহ্ম অনুভব করতে পারবেন না।"
  বৈদিক যুগে একজন পুরুষের নারীর মতো আচরণ করা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
  ঐশ্বরিক জগতে, আমাদের ভগবান শিবের একটি রূপ আছে।  অর্ধনারীশ্বর।  আদি শঙ্করের একটি সুন্দর স্তোত্র আছে।  "অর্ধনারীশ্বর স্তোত্রম"।  ভারতবর্ষে, "শ্রী" ব্যবস্থা, বৈষ্ণবদের মধ্যে, বাউলদের মধ্যে, সর্বোচ্চ তান্ত্রিক পদ্ধতিতে, বৌদ্ধধর্মে, সর্বত্রই নিজেকে উন্মোচনের, আত্মার বিপরীত সত্ত্বাকে আবিষ্কার করার এই যাত্রা বিদ্যমান।  এটি একটি উচ্চতর সিদ্ধি।  এতে নিজের মধ্যে তৃপ্তি আসে।  প্রকৃতির দ্বৈততার প্রকৃত অর্থ দেয়।
  কিন্তু আমরা পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনে পুষ্ট।
   কিছু দিন আগেও, আমাদের শিশুরোগের চিকিৎসা সম্বন্ধীত পাঠে এটি একটি ব্যাধি হিসাবে শেখানো হয়েছিল।  একে জিআইডি বা জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসর্ডার বলা হয়।  এর ফলে ছেলে ওমেয়েদের মধ্যে Transvestism, Transexualism এবং Tom Boy প্রকৃতি দেখা যায়।  এটি সমকামিতারও দিকে পরিচালিত করতে পারে।
  আজকাল, এটি একটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য।  তারা নিজেদের LGBTQ বলে।

Tuesday, February 14, 2023

আমরা অশ্বমেধের ঘোড়া।

(Thanks Google and research gate for image.) তারপর আকাশে জেগে উঠলো এক ধ্বনী। অনেকদিন পর, লক্ষ কোটি হাজার বছরের ঘুম ভেঙ্গে উঠলো সে। যার নিঃশ্বাসে প্রবাহিত হয় তার ইচ্ছে। ইচ্ছের তো কোন মাধ্যম লাগে না। ইচ্ছে মনের ভেতরে হয়। অন্তরের অন্তঃস্থলে যাকে আমরা নিজেরা দেখতে পাই, সে কি করে নিজেকে প্রকাশ করবে? নিজেকেই দেখতে পাওয়ার রূপ হল তার "পশ্যন্তি" অবস্থা। আর এই পশান্তি অবস্থা সৃষ্টি হয় তার কিছু "সংস্কারে"র থেকে। যাকে আমরা "মায়িক" বা "আণবিক মল" বলতে পারি। যা তার "পরা"র সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। ওই পশ্যন্তি, তার সংস্কার অনুযায়ী যে প্রকাশিত হলো, তার অন্তরে, এবার তাকে প্রকাশ করার পালা। শুরু হয় কোন মাধ্যম দিয়ে। তাই তাকে বলা হয় "মাধ্যমিকী"। কিন্তু যখন তিনি এক ও একই ভুত। সেখানে তো তার মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। তার তাই প্রথমেই ইচ্ছা হল 'আমি বিস্তার লাভ করব' এবং তাই হল "বিগ ব্যাং"। এর প্রভাবে কেন্দ্রীয় ভৌতপদার্ধ মহাবিশ্বের কোণে কোণে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু জেগে আছে তাদের টান। অন্তরের ভালোবাসা। এক অব্যক্ত পারস্পরিক আকর্ষণীয় শক্তি সবাইকে টেনে রেখেছে। এর নাম মাধ্যাকর্ষণ। এই টান, এই প্রেম, তড়িৎ-চুম্বকীয় কনা 'ফোটনে'র ভেতরেও আছে। ছড়িয়ে পড়েছিল সে বাতাস হয়ে, গ্যাস হয়ে। তার ভেতরে জমা ছিল শতাধিক মৌল কণার অস্তিত্ব। আর সূর্যের কোল হতে ছিটকে আসা যে পৃথিবীতে আজ আমরা বাস করছি, তার মধ্যে সেই কণারা আজও সোনা, রুপো, হীরে হয়ে আমাদের কাছে জ্বলজ্বল করছে। অক্সিজেন হয়ে প্রাণ দিচ্ছে। অক্সিজেন হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে, জল রুপে এই পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগ ধরে রেখেছে। তাই এই অবস্থার নাম "জাগ্রত অবস্থা"। ঘুমের ঘোরে যিনি ছিলেন "সুষুপ্ত", প্রকাশে তিনি হলেন "জাগ্রত"। তার বিন্যাস কিভাবে হল? নিজস্ব প্রেমে। মাধ্যাকর্ষণের বল বলে যাকে বোঝাচ্ছি ভৌত মহাবিশ্বে, সেটাই প্রেম বা আকর্ষনের প্রধান কারণ হয়ে আজও জেগে আছে প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে, যা পরমেশ্বরের অস্তিত্বের প্রকাশ। সমস্ত কিছুই সংস্কার রূপে, বীজরূপে সেই প্রাথমিক অবস্থার ভেতরে ছিলেন। আজকে যা যা পশুপাখি, গাছপালা দেখছি সমস্ত কিছু "সংস্কারে" ছিল সে প্রাথমিক অবস্থায়। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমাদের সামনে আজ নিত্য নতুন ভাবে ধরা দিচ্ছে। মানুষের বিবর্তন ক্রমাগত যে হয়ে চলেছে।‌ তার মধ্যে তিনি নিজেকে বার বার পরিশোধিত করেছেন। এই পরিশোধনের মধ্যেই তিনি তৈরি করেছেন মানুষ থেকে বহু মহামানুষ। কিন্তু শ্রী অরবিন্দ যে বলেছেন মানুষ থেকে সৃষ্টি হবে অতিমানুষের অতিমানস নিয়ে। বাস্তবে যা দেখছি এ কি তারই পরিনাম? মনেতো হয় পৃথিবী যেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদল দুর্বিনীত, যারা মানুষকে ভালোবাসে না, যারা চায় কেবলমাত্র ক্ষমতায়ন, সেই মানুষরা স্রষ্টার অভিব্যক্তির ধারার, প্রাণের বিকাশের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্রষ্টা কি মুখ বুজে সহ্য করবে এই দুর্বীনিত বর্বরদের? স্রষ্টা কি নিজের পথে নিজের এই বাধাকে অতিক্রম করবে না ? পৃথিবীতে অতিমানুষের যুগ কি আসবেনা? যে মহা মানুষরা বারবার বলে গেলেন, সবাইকে ভালোবাসো, সব ঘৃণা, সব বিদ্বেষ সরিয়ে ফেলো। তাদের পথে কি এই মানুষ জাতি চলবে না! বিশ্বব্যাপী মানব সমাজের কথা চিন্তা করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা শ্রেণীর বিন্যাসগুলোকে গুলিয়ে ফেলি। এইতো আমের ই কত জাত। পেয়ারার কত জাত। প্রতিটা পশু, পাখি, প্রাণীর ভেতরে কত জাত। কত রকমের তাদের দেখতে। কত রকমের গঠনের বৈচিত্র্য। একই প্রাণী তবু তাদের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া আছে , সাম্য ও শান্তি আছে । এই সবাইকে নিয়ে চলা। এটাই প্রকৃতির স্রষ্টার সঠিক পথ বা আপন খেয়াল। সৃষ্টির ধারা। একে অস্বীকার করবো কেমন করে? এই যে এত কিছু কর্মযজ্ঞের আয়োজন এর উদ্দেশ্য কি? এর উদ্দেশ্য নিজেই নিজেকে ভালোবাসা। নিজেই নিজেকে জানা। নিজের আনন্দে নিজে মগ্ন থাকা। যারা ভাবে যে "সে" নেই , আমি তাদের বলি,- ভাবতে হবে না "সে" আছে কিনা, কিন্তু তুমি তো আছো। তোমার বাবা মা আছেন‌। তাদের বাবা মা ছিলেন। তার পূর্বপুরুষরা ছিল। তার মানে এটা একটা ধারা। যেটা হল "মানবের ধারা"। এই মানবের মতো আবার আছে অন্য প্রাণীরা ।তাহলে আমরা তাকে বলতে পারি "পশুদের ধারা"। গাছপালা ঘিরে রেখেছে সবাইকে। অক্সিজেন, খাদ্য দিচ্ছে। তার হ'ল "উদ্ভিদা ধারা"। আর এই পশুরা, মানবরা বেঁচে আছে তাদের উপর নির্ভর করে। আবার এই আমরা সবাই প্রাণী জগৎ বেঁচে আছি জলবায়ু মাটির উপর। একে আমরা বলতে পারি ভৌতধারা। বা প্রাকৃতিক ধারা। যার মধ্যে পৃথিবীর এবং অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রের মতো ভৌত বস্তুগুলির ধারা রয়েছে সূর্যের আবর্তে, সেটি "সৌর ধারা"। সেগুলি রয়েছে আবার কিছু নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে। তাই তার নাম " নাক্ষত্রিক ধারা"। যেভাবে সৃষ্টি হয়ে গেছে মহাবিশ্ব। মানে তোমার থেকে শুরু করে "এক বিশাল তুমি " যা বাস্তব সত্য যা মহাবিশ্ব পর্যন্ত বিস্তৃত এখানে তো "সে" আছে কিনা মানার দরকার নেই। এইবার এই যে "মানব ধারা", যেখানে তুমি আছো, সেই মানবের মধ্যে দেখো কিছু মানুষ আছে, যারা সব সময় মানুষকে ভালোবাসে, যারা মহৎ, যারা ত্যাগের গুণগান করে, ক্ষমাকে গুরুত্ব দেয়, যোগ, জপ, ধ্যানের মধ্যে আছে। এই ধরনের মানুষ যুদ্ধ বিবাদ করে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য, আত্মসম্মানের জন্য, দেশ রক্ষার জন্য। এছাড়া তারা হিংসা করে না। কাউকে ঘৃণা করে না। এই যে জাতি, তা তোমার আমার থেকে উন্নত। কারণ এদের দিয়ে বিশ্বের কল্যাণ সাধিত হয়।‌ আমরা ছুটে বেড়াচ্ছি অর্থের জন্য, সম্মানের জন্য, দুমুঠো ভাতের জন্য। লোভ ও কামের জন্য। আর ওই মানুষগুলো এই সামাজিক খ্যাতি, অর্থের লোভ, যশের আকাঙ্ক্ষা, কামের তাড়না, সবকিছু কন্ট্রোল করে তোমার আমার কল্যাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে । তাই তারা আমাদের থেকে, তোমার থেকে উন্নত‌। এবার দেখ তোমার মধ্যে, আমার মধ্যে ও তাদের মধ্যে একটা মানসিক জগত আছে। এই মানসিক জগতের মধ্যে রয়েছে অনেক ভাবের বিকাশ। তাদের মনের ভাবকে আমরা বলতে পারি "দেবতার ভাব"। "মহামানবের ভাব"। আর আমাদের ভাব হলো যারা ঝগড়া করি, মারামারি করি, হিংসা করি, কামুক, ক্রোধী ও লোভী‌। এই হল "পশু ভাব"। তাই ওই দেবত্বের ভাব, উন্নততর মানবিকতার ভাব আমাদের বিকাশের ধারার তুরীয় অবস্থা। এর মধ্যে "তা৺কে"বোঝার দরকার নেই।‌ কিন্তু এটা বোঝা যায় যে ওই মহাবিশ্ব থেকে যতদূরে আমি, আর আমার থেকে যত দূরে ওই দেবতার মত মানুষরা, এই যে বিরাট অস্তিত্ব, এটা সত্য।এটাই প্রত্যক্ষ দেবতা। এটাই প্রত্যক্ষ ঈশ্বর। এর ধ্যান করলে তৎক্ষণাৎ মুক্তি হয়। ব্যপ্তি হয়, বিস্তৃতি হয়। পশুমানুষ দেবমানুষে পরিণত হয়। আর সেই দেবমানুষ দেখতে পায়, -সেই যে বিগ ব্যাং দিয়ে সমস্ত ভুতগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তার মধ্যে যে আকর্ষণবলে এখন মহাবিশ্ব স্তম্ভিত ও চক্রায়িত, আর তার নিজের মনের ভেতরে সবাইকে ভালোবাসার যে আকর্ষণ, সে দুটো একই জিনিস। আসলে সে যে "সে"ই হয়ে আছে। কিন্তু বুঝবো কেমন করে? তখনই এসে যায় নিজেকে চেনার পালা‌। নিজেকে বোঝার পালা। আত্মন্ অশ্বটির কর্মযোগের চরম যোগে পরম পদে আহুতি দেবার পালা। তাই এবার শুরু হয় চির চলমান অশ্বমেধের যজ্ঞ। কোথাও একটা ঘরের ভেতর বা অফিসের এক কোণে, অথবা হোস্টেলের কোথাও, কোথাও একটা কোন একটা টাইমে, একবার সারা দিনের শেষে, অথবা সকালে সন্ধ্যায়, অথবা রাত্রে নিজের কাছে নিজে বসা। এই সময়টুকুর ভেতর দুম করে পৃথিবীর সবখানে ছড়িয়ে পড়া মনকে বুকের ভিতর আনা মোটেও সহজ নয়। কিন্তু যদি 'আসন' পৃথিবীর তড়িৎ বল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে তখন একটা অভ্যন্তরীণ বল তৈরি হয়। এই বলের সাথে মন স্থাপন করলে আস্তে আস্তে‌ একটা অভ্যাস তৈরী হয়। চোখ বন্ধ করে এভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বারবার নিতে নিতে মন শান্ত হয়। চিন্তার স্রোত "নির্দিষ্ট কোন শব্দের মধ্যে" বারবার উচ্চারণ করলে মন শান্ত হয়। তখন আরো ধীরে কারো আসে আলোকিত অবস্থা, আর কারো বা ঝংকৃত । পরে পরে দুটোই আসে। তখন সৃষ্টি হয় পুলক। আর সেই পুলকে, সেই আনন্দে মানুষ দেবমানুষে পরিণত হয়। চোখে ঝরে জল। শরীরে, মুখে উজ্জ্বল জ্যোতি। এই অবস্থাই হল নিজেকে নিজের পাওয়ার অবস্থা। এখন এই যে 'আসনে'র কথা বলছিলাম এটা আগে একটু ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার। আমাদের শরীরে আছে "সোম"‌। এই সোম হল আমাদের শরীরের তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি। যা হলো আমাদের "স্নায়বিক শক্তি" ও "জীবনী শক্তির"(খেয়াল করা চাই যে , তড়িৎচুম্বকীয় শক্তিও দুটি শক্তি) একত্রিত নাম। যা নিস্তেজ হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত জীবনে, অতিরিক্ত মৈথুনে। আর সতেজ থাকে ছন্দে, সুরে , নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত জীবনে । তাই এই সোমকেই বীর্যের আরেক রূপ বলা হয়। এই বীর্য যত ধারণ করা যায় তত শরীরের স্বাভাবিক শক্তি স্থির থাকে। ( নারীর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। একে ঊর্জাও বলা হয়।) আর এই শক্তি আমরা পাই খাদ্য বা অন্য থেকে। অন্ন থেকে তৈরি হয় "রস"। যার নাম "গ্লুকোজ"। এই গ্লুকোজ থেকে তৈরি হয় আমাদের শক্তি যা দিয়ে মস্তিষ্ক চলে। স্নায়ুরা চলে। আর মাংসপেশী, যা দিয়ে ক্ষত্রিয় কাজ হয়, তা চলে খাদ্যের প্রোটিন অংশ দিয়ে। যাকে বলা হয় "পয়ঃ"। আর সোম, যা স্নায়বিক শক্তির আধার তা আসে ফ্যাট থেকে। তাকে আমরা "স্নেহ" বলি। এই দিয়ে তৈরি হয় স্নায়বিক শক্তি। "স্নেহ" আবার "রস" বা গ্লুকোজ থেকেও তৈরী হয়। প্রত্যক্ষভাবে বীর্যের শক্তির সঙ্গে ওই খাদ্যের রস গ্লুকোজের মত ফ্রুক্টোজ এর যোগ আছে। অতএব এই সোম ই হল আমাদের জীবনে শক্তির আধার। মস্তিষ্কের শক্তির আধার। চিন্তার শক্তি আধার । ধ্যানের মূল কেন্দ্রে কিভাবে তাকে রাখা যায় সেটা আগে বুঝতে হয়। নিজেকে জানতে গেলে সেটা আগে বুঝতে হয়। এখন পৃথিবীর থেকে এমন কোন বস্তু, যা তড়িৎ এর কুপরিবাহী বা বিদ্যুতের কুপরিবাহী তা দিয়ে আমাদের শরীরকে যদি বিচ্ছিন্ন করে রাখি তাহলে শুধু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছাড়া পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের তড়িৎ-চৌম্বকীয় শক্তির যোগটা সাময়িক বিচ্ছিন্ন করা থাকবে এবং শরীরের নিজস্ব তড়িৎচুম্বকীয় শক্তি শরীরেই থাকবে। আর এইবার যদি বারবার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে তড়িৎ চুম্বকীয় দণ্ডের আবর্তে ফুসফুস চালনা করা যায় শরীরের মধ্যে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ফুসফুসের চালনা ছাড়াও মনের শক্তিতে তড়িৎচুম্বকীয় দণ্ড বা মেরুদন্ডটির আধান বৃদ্ধি করা সম্ভব। একেই "যোগ শক্তি" বলে। এগুলো ভারতীয় সনাতনী বিজ্ঞান। আমাদের মে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান পড়ান হয়েছে, তাতে এসব নেই। এই শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ শ্রুতিগোচর ও দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। একেই দূরদর্শন, দূরশ্রবণ বলা হয়। তাই যোগ বিদ্যা হল নিজেই নিজেকে চেনা ও নিজের অজানা ক্ষমতাগুলো বাড়িয়ে নেবার এক এক্সারসাইজ। এই যোগ বিদ্যার অভ্যাস একদিন দুদিন করলে হবে না। বহু বছর, ছোটবেলা থেকে করে রাখতে হবে। তবে এই যোগ বিদ্যায় এই যোগ শক্তি ক্রিয়া করতে শুরু করবে। কিন্তু এ তো গেল শক্তির কথা। নিজেকে চেনার কি হলো? সেকথা আবার কোনদিন হবে। ধ্যানে বসে একটি নির্দিষ্ট শব্দ বা কিছু অক্ষর বারবার জপ করা হয় ।এই জপের ফলে শরীরের মধ্যে তড়িৎ-চুম্বকীয় বা "স্নায়ু-জীবনী" তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।‌ কিন্তু এই জপটি কেবল কেঠো নিরস হলে হবে না। কাঠের উপরে কাঠ যেমন ঠক্ ঠক্ করে ঠুকে, সেরকম করে ঠুকলে হবে না। জপটি হতে হবে "ধ্বনিত"। অনুরণনটি নিজের অনুচ্চারিত শব্দে নিজের মনের ভেতর সেই শব্দের ঝংকারে অনুভব করতে হয়। তাই শব্দের যে ক'টি অক্ষর আছে, আগে তাকে বাইরে উচ্চারণ করলে, যাকে "বৈখরি" বলা হয়, তাতে কেমন আওয়াজ হয় সেটা কানে নিতে হয়। মোট কটি মাত্রার মন্ত্র সেটিকে আগে জানতে হয় তারপর অনুরণন শুরু করতে হয। উদাহরণস্বরূপ, প্রণব যদি উচ্চারণ করা হয় তার তিনটি বা চারটি মাত্রা(ওম্ বা ঔম্) কিন্তু "অনুরণন" করে আট মাত্রার করতে হলে আরো চারটি বা পা৺চটি মাত্রায় করতে হয়। এটি জাতিভেদে পরিবর্তিত হয়। যেমন একটা পেটা ঘন্টা বাজলে শুধু ঘন্টার আওয়াজ হয়না তারপরে তার বেশ কিছুক্ষন একটা অনুরণন চলে। এইটাই নিজের শরীরকে তরঙ্গায়িত করে তোলে। কারণ যে তিনটি মাত্রা আমার স্বরযন্ত্র বা মনো যন্ত্র দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে নিরবে তারপরের যে পাঁচটি বা চারটি মাত্রা, যা উচ্চারিত হচ্ছে আমার শরীরে স্বরযন্ত্রে বা ভেতরে মনোযন্ত্রে, তার কোন প্রকাশ নেই। প্রকাশিত তিনটি বা চারটি মাত্রা হলো "ক্ষর" আর অপ্রকাশিত পাঁচটি বা চারটি মাত্রা হলো। "অক্ষর" অবস্থা। এই অক্ষর অবস্থায় মনস্থিতি দৃঢ় হলেই দেহ তদ্গত হয়। এই পরাশক্তিময় অবস্থায় সমাধি আসে‌। সম্প্রজ্ঞাত সমাধি। সম তে অধিগাহন। সেই অমৃতে ডুব দেওয়া। এই অনুরণন স্পষ্টতর করার জন্যই দেবালয়ে গম্ভীরা চুড়াকৃতি ও ফাঁপা। কক্ষের আয়তন অল্প হয়।‌ এটি সনাতনী নাদবিজ্ঞান। আমরা পড়িনি। সহজ উপায় হ'ল বাথরুমে অনুভব। এখানে বায়ুস্তম্ভ খুব নীচু আওয়াজেই ধ্বনীটিকে প্রকট করে। ভৌত বিজ্ঞানে একে সমমেল বলে। আর একটি উদাহরণ। তাজমহলের প্রধান ঘরে উপর দিকে যে বিশাল গম্বুজাকার ফাঁকা, কোন আওয়াজ সেখানে কেমন অনুরণন সৃষ্টি করে। অসংখ্য মানুষের আওয়াজে এক অদ্ভুত ধ্বনী অনুরণিত হয়। এতো মে বললাম, এসব সমর্থ গুরুরা নিজের শক্তিপাত করে শিষ্যের ভেতর সৃষ্টি করেন‌। যদিও বিজ্ঞান দিয়ে অনেক কিছু বোঝালাম, কিন্তু, তা৺র কৃপা ও গুরুকৃপা ছাড়া সহজে এসব হয় না। শুধু এখন সময় এসেছে। তাই ডাক পড়ছে বার বার। চারদিকে ঢাকের বাদ্যে, দুন্দুভীর নাদে সেই মানুষগুলোকে এক করার ডাক পড়ছে। বারবার সেই "সত্য যুগে"র কথা সবার কাছে তুলে ধরা, আর তার জন্য এ যুগে বার বার রবীন্দ্রনাথেরা আসছেন, আসছেন স্বামীজি। আসবেন আরো অনেকে। এখনো আছেন। একটাই উদ্দেশ্য। এইসব মানুষগুলোকে, শুভ বুদ্ধিগুলোকে একত্রিত করা। আর যা কিছু দূর্বী্নিত,পাশবিক, স্বার্থপর, তাদেরকে প্রেম দিয়ে, বুঝিয়ে, প্রয়োজনে অস্ত্র দিয়ে করাভূত করা‌। এ গতির মহাপ্লাবনে স্নান করে এসো সবাই মাভৈঃ বলে সেই বীরের কাজে যোগ দিই। যার কোন বাস্তবিক ভোট নেই, সংগঠন নেই। সমস্ত কিছু হচ্ছে ও হবে অন্তরের নির্দেশে। এই সেই আত্মার আত্মীয়তা। আত্মার সংগঠন। এই সেই অটুট বন্ধন।

মুক্ত আত্মার আনন্দ ও নির্দেশের দাসেরা

ক। বৈচিত্রময় এই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী ও‌ ধর্মের লোকেদের পাশাপাশি একসাথে বেঁচে থাকতে গেলে যেটা প্রথমেই দরকার সেটা হল সহযোগিতা এবং পরস্পরকে কিছুটা মানিয়ে নেওয়া।‌ আমরা জানি যে জঙ্গলে সিংহ, বাঘ থাকে আর হরিণ , খরগোশ তারাও থাকে। হিসেবে তারা খাদ্য-খাদক। কিন্তু তা বলে হরিণের বা খরগোশের বংশ কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় নি। এটাই পৃথিবীর নিয়ম ।প্রকৃতির নিয়ম বা ঈশ্বরের নিয়ম। কিন্তু যদি কোন প্রজাতি মনে করে যে শুধু পৃথিবীতে আমরাই থাকবো আর বাকি সমস্ত জাতি নষ্ট হয়ে যাবে সেটা কি অসুস্থতার পরিচয় নয়? হ্যাঁ বন্ধুরা, এই প্রজাতি, যারা আজ মাথাচাড়া দিচ্ছে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপদ। উষ্ণায়ন এর চাইতেও বড় বিপদ। বিশ্বযুদ্ধের চাইতেও বড় বিপদ। কারণ, এরা দ্বিপদ প্রাণী। যাদের মস্তিষ্ক আছে ।হাতে অস্ত্র আছে এবং আছে তাদের এক সর্বোচ্চ তথাকথিত আইন যেখানে নির্দেশাবলী আছে যে, যারা তোমার মতের সঙ্গে নয় তাদেরকে অধিকার করো, বোঝাও। না বুঝলে হাটুগেড়ে কর দেয়া করাও। (কর দেওয়া টা ১০০০ বছর ধরে হয়েছে । ) অথবা নিকেশ করে দাও । পৃথিবীতে তোমাকেই প্রতিষ্ঠা করো। এটাই তোমার সংগ্রাম। এটাই তোমার অভিযান। এটাই তোমার প্রতিজ্ঞা। এর জন্য তোমার মৃত্যুর পরে অপেক্ষা করছে শত শত যুবতীর যৌবন।সুরাপাত্র। স্বর্গের উপাদান। এই লোভের কারণে তুমি ছুটে চলো। এ জীবনে "ত্যাগের ধর্ম" করবে স্বর্গে সুখ ভোগের জন্য। লোভ। মৃত্যুর পরে আরো ভোগ করবো এর জন্য তুমি ধর্ম করো। প্রায় দেড় হাজার মাত্র বছরে যে জাতি গঠিত হয়েছে যারা নিজেদেরকে সেরা ভাবে, সারা পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য তারা উদ্যত অথচ মুখে শান্তির কথা বলে। যারা ভাবে যে আমরাই পৃথিবীতে থাকবো তাদের যদি ইতিহাস এ কয়েক হাজার বছরের দেখি যে পৃথিবীতে তারা কি দান করেছে ? তাহলে দেখব , হি়ংসা, ক্রোধ,ধংস, সমাজ বিরোধী কাজ এবং ভোগবিলাস। আর যাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে তারা দান করেছে বিজ্ঞান। সেই বিজ্ঞানকে এরা যখন গ্রহণ করে তখন ওদের লজ্জা করে না। এখন কথা হচ্ছে এই হ-য-ব-র-ল মার্কা মানুষের চরিত্র, তার জীবনযাত্রা‌ ও আচার অনুষ্ঠান,এর ভেতরেই প্রাচীনতম কতগুলি মানুষ আছে তারা অসংখ্য জাতিতে বিভক্ত। ভেদে বিভক্ত।খাদ্যাভাসে বিভক্ত। মানুষগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে অশিক্ষা,অর্থের অভাবে দরিদ্রতায়, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে। তবু তাদের মধ্যে একটা সহনশীলতা রয়েছে। নিজেদের মধ্যে যেমন অসংখ্য কোটি কোটি গোষ্ঠী, তেমনি যারা তাদের ঘৃণা করে পুজা নামে চিন্তাহীন উন্মাদনা র জন্য, তাদের ভাবে ওরাও এ দেশে তাদের অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো একটি গোবেচারা শান্ত গোষ্ঠী। আজ আমি দেখাবো যে, সনাতন গোষ্ঠীর কিছু জায়গা যেখানে তাকে ধরে ওই আরেক বিরোধী গোষ্ঠী বারবার আক্রমণ চালাচ্ছে এবং নির্লজ্জ সনাতনপন্থীরা , যারা নিজেদের বই কিছুই পড়াশোনা করে না, তাদের সেই বইয়ে (যাকে বিকৃত করে বিরোধী গোষ্ঠীরা বারবার তুলে ধরবার চেষ্টা করছে), ঐ জায়গাগুলোতে আসলে কি কি বলা আছে। প্রথমেই ধরা যাক "পুরুষ সূক্ত"। এটি ঋকবেদেও আছে। এটি অথর্ববেদীয় আবার এটি যজুর্বেদীয়।এই পুরুষ সূক্তের যে অংশ থেকে সনাতনকে প্রত্যাঘাত করা হয় তা হল "স্বয়ং ঈশ্বর মস্তিষ্ক থেকে ব্রাহ্মণ এবং হস্ত থেকে ক্ষত্রিয় জংঘা থেকে বৈশ্য ও পা থেকে শুদ্র সৃষ্টি করেছেন"। অতএব সনাতনের মধ্যে জাতিভেদ তাদের ধর্মেই নিহিত আছে। বন্ধুরা এখানে এটা বলে রাখা আবশ্যক যে এখানে কিন্তু কোথাও এমন সূক্ত/মন্ত্র নেই যেখানে বলা হচ্ছে যে শুদ্ররা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্রাহ্মণরা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ইত্যাদি।‌ একটা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ আছে। মাথা আছে। তার পাও আছে। সে মানুষের শরীর টা চালাতে গেলে মাথা যেমন দরকার, তেমনই দরকার পা।‌ তাহলে একটা শরীরের কল্পনাতে মাথা থাকলে তার পা আসবেই।‌ মাথাকে তো মাথা-ই বলতে হবে পাকে তো পা-ই বলতে হবে। মাথার কাজটা মাথাই করবে। পায়ের কাজটা তো পা ই করবে। এখানে যদি তুলনা করা হয় পা উৎকৃষ্ট না মাথা উৎকৃষ্ট? তার তো উত্তর দেওয়া কঠিন। সবটা নিয়ে একটা সংস্থা। কত বিভেদকামী মানসিকতা হলে এভাবে আলাদা আলাদা করে দেখা হয় । আমরা যারা সামাজিকভাবে একত্রিত হয়ে আছি, যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজগুলো করছি, যদি আলাদা ভাবে দেখি, তাহলে বলতে হবে, যে রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা সে নিকৃষ্ট আর ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, টিচার, ইত্যাদি গণ উৎকৃষ্ট। তাহলে আমাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে ভুল রয়ে গেল। কারণ সমাজে কিন্তু সব জাতিকেই চাই। নিকৃষ্ট বলছি যাদের ওরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওদেরই কাজে সমাজ চলছে।‌ মস্তিষ্কের কাজ চিন্তা,সূক্ষ্মতা । তেমনি শারীরিক বল ও চাই। অর্থ ও চাই। এগুলো না হলেও সমাজে কিছুই হবে না। সুতরাং কখনোই এরকম খন্ড দৃষ্টিতে সমাজ কে বিচার করা , রাষ্ট্রকে বিচার করা এবং জাতিকে বিচার করা চলবে না। চলেনা। চলার কোন অর্থ হয় না। আধুনিক যে সনাতন ধর্ম সেখানে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব থেকে শুরু করে স্বামী বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আরো পিছিয়ে যান চৈতন্য মহাপ্রভু, এমনকি শঙ্করাচার্যের সময় পর্যন্ত আপনি তাকিয়ে দেখুন, এইভাবে আমাদের দেশকে বা মানুষকে ঐ মহামানবরা চিন্তা করেননি।‌ এই সমস্ত কথাগুলো শুধু আমাদের মধ্যে বিভেদ করবার জন্যই বিরোধীরা বলে বলে বেড়াচ্ছে এবং সনাতনী ছেলে মেয়েদের বোঝা দরকার আপনারা বেদপাঠ করুন। দেখুন সেখানে কি লেখা আছে।অর্থগুলো কি লেখা আছে। এটাকে খণ্ড খণ্ড ভাবে ব্যবহার করে বিকৃত করবেন না। এই মুহূর্তে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ইত্যাদি যে কথাগুলো বলছি তার তো অন্য ব্যাখ্যাই হয়ে গেছে। যে মস্তিষ্কের কাজ করছে সেই ব্রাহ্মণ।(হলায়ুধ প্রনীত "ব্রাহ্মণসর্বস্বম্" পড়ুন। দেখুন সেখানেও ব্রাহ্মণের কাজ অনুযায়ী ভাগ আছে। মগজ যদি সাধনা‌ ও আধ্যাত্মিকতা তে লাগে তাকে বলা হয় "ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ"‌।এই দৃষ্টিভঙ্গিতে যিনি সনাতনী নন এরকম অন্য ধর্মের মানুষ আছেন যারা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিকতাতে মগ্ন, হিংসা-বিদ্বেষ তাদের মধ্যে নেই,প্রেম-ভালোবাসা এবং অসহিষ্ণুতা তাদের মধ্যেও আছে তারা কিন্তু ব্রাহ্মণ। যেমন শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, বুদ্ধদেব , আব্দুল গফুর। তেমনি যিনি ব্রাহ্মণ হয়েও ব্রাহ্মণের কিছুই পালন করেন না; অকাজ,কুকাজ করেন নির্বিচারে আহার করে তাকে বলা হয় "চন্ডাল ব্রাহ্মণ" বা "শূদ্র ব্রাহ্মণ"। ধর্ম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলেই তাকে পরিবর্তন করা যায়। দস্যু রত্নাকর বাল্মিকী হয়েছিলেন। ) এইভাবে সব মানুষেরই কাজ অনুযায়ী তার শ্রেণী তৈরী হয়ে গেছে। সুতরাং জাত কারুর পৈত্রিক সম্পত্তি নয় এবং জন্মগতভাবে ও তা হয় না। যে ব্রাহ্মণ মগজকে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগায় তারা অবশ্যই "বৈশ্যব্রাহ্মণ" হবেন। ব্রাহ্মণ তার মস্তিষ্কের বুদ্ধিকে দেশ সংরক্ষণ, দেশ গঠন ইত্যাদিতে কাজে লাগান তিনি "ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ" হবেন যেমন ছিলেন চাণক্য‌‌।‌) আধুনিক যুগে‌ যারা সমাজের ও দেশের পরিচালক ও রক্ষণাবেক্ষণ করে যেমন পুলিশ, প্রশাসন, মিলিটারিরা "ক্ষত্রিয়"। কর্ম অনুযায়ী এভাবে জাতি বিন্যাসকে বেরিয়ে আপনি যাবেন কেমন করে? তাই "পুরুষ সূক্তাম্" আজও সঠিকভাবে বিচার করে সবার জন্যই প্রযোজ্য। ।খ। আরেকটি সূক্ত নিয়ে আলোচনা করা হয় সেখানে বলা আছে "ন অস্য প্রতিমা অস্তি" । তাকে ব্যাখ্যা করা হয় যে বেদে না কি বলা আছে যে ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই। কিন্তু এটি একটি খণ্ড উদ্ধৃতি ।যদিও অদ্বৈতবাদের কথা বেদ বলে কিন্তু বেদের মধ্যেই আমরা রুদ্র , ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি , গণেশ, শিব ইত্যাদি দেবতা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গা ইত্যাদি দেবী দেরও আলোচনা আছে । এমন কি মা মনসার উদ্ধৃতি আছে। সুতরাং সনাতনী বাঙ্গালীদের কাছে এটাই আমার অনুরোধ ভালো করে বাংলায় লেখা বেদ পড়ুন।‌ না হলে প্রতিপক্ষ এর সামনে দাঁড়াবেন কি করে? খড়কুটোর মতো উড়ে যাবেন । থিম পুজো ছাড়া আপনাদের আর কিছু সম্বল থাকবে না। নিজের ধর্মের উপর শ্রদ্ধা থাকবেনা। ধান্দা হবে কর্পোরেট ব্যবসা। তারা আমাদেরকে আঘাত করে এই বলে যে, আমাদের বইয়ে নাকি বহু দেবতার পূজা করা হয় এবং অংশবাদ এর পুজো করা হয়।‌ আমরা কি কেউ লক্ষ্য করিনি যে যখনি যা৺র পুজো করা হয় সেখানে তাকে পূর্ণ দেবতা হিসেবে দেখানো হয়, অংশ হিসেবে নয়। তাকে আমরাই মহা সমারোহে পুজো করে তাকেই আবার বিসর্জন দিয়ে দিই। ‌যদি আমরা মূর্তি পূজা চরম মানতাম, তাহলে কি আমরা বিসর্জন দিতাম ? প্রতিমা সনাতনীদের কাছে ঠিক বিজ্ঞানীদের এক গবেষণাগারের মত। তার মধ্যে ঈশ্বরের "এক একটি ক্রিয়া" বা "গুণের" বা "ভাবের" চিন্তাকেই আমরা এক এক সময়ে একেক রকম রূপে সামনে তুলে আনি আমাদের নিজস্ব ভাবনায়। আমরা এটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারব যে আমাদের নিজেদের মধ্যেই প্রতিমুহূর্তে ভাবের বদল হয় এবং একটি মানুষের ভাব,চিন্তাধারা ,ভালোলাগা আলাদা। আমাদের উদারতা এইযে, আপনার ভাবনা, আপনার ভালো লাগাতে আমি শাসন বসাবো না। আপনি আপনার উদারতায় আপনার মত করে সেই পরমেশ্বরের পথে এগিয়ে যান আপনার ভাবে। আর যে ধর্ম শুধু একমাত্র "এক দেবতার" কথাই চাপিয়ে দেয়, যাকে আপনি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন না, ভাবতেও পারছেন না। যিনি চাপাচ্ছেন তিনিও দেখেননি। সেই ধর্মটা কি সুরহীন, রসহীন, বৈচিত্র্যহীন একঘেয়ে ভয়ের আর লোভের শাসন দিয়ে তৈরি নয়? শেখানো হয়েছে তুমি শুধু এই এই কাজগুলি এইভাবে করো যাতে পরজন্মে গিয়ে স্বর্গে ভোগবিলাস করতে পারো। পাশাপাশি মিলিয়ে দেখুন একটা হল "নিজের পথে নিজেকে খুঁজে বার করে নিজের বৃহৎকে জানা" এবং "আত্মার অনুসন্ধান করা"। আরেকটা হল "চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশ"। ।গ। পরিশেষে বলব এই সনাতন জাতিকে সমর্থ হতে হলে এই জাতিভেদ প্রথা ভুলে নিজেদের বেদ উপনিষদ ইত্যাদি গ্রন্থ গুলি ঠিক করে পাঠ করতে হবে। বুঝতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তাকে প্রয়োগ করতে হবে। যদি কিছু প্রাচীন মনে হয়, যদি কিছু সংস্কার করার মনে হয় তাকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সংস্কৃত করে আধুনিক হয়ে উঠতে হবে। এবং সে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। সবচেয়ে বড় কথা হল যে সবাইকে নিয়ে চলতে গেলে, শান্তিতে থাকতে গেলে যদি সনাতনীদের মধ্যেও কোন উগ্রপন্থী সৃষ্টি হয় তাদেরকে দাবিয়ে রাখতে হবে। পরস্পরকে এই সম্মান জানানোর মধ্যেই পৃথিবীর শান্তি। আপন আপন পদ্ধতি পালন করা, বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে সমাজকে উন্নততর করে তোলার নামই হলো সত্যি কারের মানবতা। আসুন এই দুর্দিনে আমরা এই পথেই এগিয়ে চলি। মানুষকে এই কথাগুলো শেখাই। অন্বেষণ করে দেখুন এই লেখাটির মধ্যে কোন ত্রুটি আছে কিনা এবং আমাদের সংশোধন করুন। ।

Featured Posts

প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অপারেশন পদ্ধতি

(ভিত্তি: সুশ্রুত সংহিতা, চরক সংহিতা এবং অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থ) প্রাচীন ভারত ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বে অগ্রগণ্য। প্রাচীন চিকিৎস...

Popular Posts