Translate

Tuesday, February 14, 2023

আমরা অশ্বমেধের ঘোড়া।

(Thanks Google and research gate for image.) তারপর আকাশে জেগে উঠলো এক ধ্বনী। অনেকদিন পর, লক্ষ কোটি হাজার বছরের ঘুম ভেঙ্গে উঠলো সে। যার নিঃশ্বাসে প্রবাহিত হয় তার ইচ্ছে। ইচ্ছের তো কোন মাধ্যম লাগে না। ইচ্ছে মনের ভেতরে হয়। অন্তরের অন্তঃস্থলে যাকে আমরা নিজেরা দেখতে পাই, সে কি করে নিজেকে প্রকাশ করবে? নিজেকেই দেখতে পাওয়ার রূপ হল তার "পশ্যন্তি" অবস্থা। আর এই পশান্তি অবস্থা সৃষ্টি হয় তার কিছু "সংস্কারে"র থেকে। যাকে আমরা "মায়িক" বা "আণবিক মল" বলতে পারি। যা তার "পরা"র সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। ওই পশ্যন্তি, তার সংস্কার অনুযায়ী যে প্রকাশিত হলো, তার অন্তরে, এবার তাকে প্রকাশ করার পালা। শুরু হয় কোন মাধ্যম দিয়ে। তাই তাকে বলা হয় "মাধ্যমিকী"। কিন্তু যখন তিনি এক ও একই ভুত। সেখানে তো তার মাধ্যমের প্রয়োজন নেই। তার তাই প্রথমেই ইচ্ছা হল 'আমি বিস্তার লাভ করব' এবং তাই হল "বিগ ব্যাং"। এর প্রভাবে কেন্দ্রীয় ভৌতপদার্ধ মহাবিশ্বের কোণে কোণে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু জেগে আছে তাদের টান। অন্তরের ভালোবাসা। এক অব্যক্ত পারস্পরিক আকর্ষণীয় শক্তি সবাইকে টেনে রেখেছে। এর নাম মাধ্যাকর্ষণ। এই টান, এই প্রেম, তড়িৎ-চুম্বকীয় কনা 'ফোটনে'র ভেতরেও আছে। ছড়িয়ে পড়েছিল সে বাতাস হয়ে, গ্যাস হয়ে। তার ভেতরে জমা ছিল শতাধিক মৌল কণার অস্তিত্ব। আর সূর্যের কোল হতে ছিটকে আসা যে পৃথিবীতে আজ আমরা বাস করছি, তার মধ্যে সেই কণারা আজও সোনা, রুপো, হীরে হয়ে আমাদের কাছে জ্বলজ্বল করছে। অক্সিজেন হয়ে প্রাণ দিচ্ছে। অক্সিজেন হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে, জল রুপে এই পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগ ধরে রেখেছে। তাই এই অবস্থার নাম "জাগ্রত অবস্থা"। ঘুমের ঘোরে যিনি ছিলেন "সুষুপ্ত", প্রকাশে তিনি হলেন "জাগ্রত"। তার বিন্যাস কিভাবে হল? নিজস্ব প্রেমে। মাধ্যাকর্ষণের বল বলে যাকে বোঝাচ্ছি ভৌত মহাবিশ্বে, সেটাই প্রেম বা আকর্ষনের প্রধান কারণ হয়ে আজও জেগে আছে প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে, যা পরমেশ্বরের অস্তিত্বের প্রকাশ। সমস্ত কিছুই সংস্কার রূপে, বীজরূপে সেই প্রাথমিক অবস্থার ভেতরে ছিলেন। আজকে যা যা পশুপাখি, গাছপালা দেখছি সমস্ত কিছু "সংস্কারে" ছিল সে প্রাথমিক অবস্থায়। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমাদের সামনে আজ নিত্য নতুন ভাবে ধরা দিচ্ছে। মানুষের বিবর্তন ক্রমাগত যে হয়ে চলেছে।‌ তার মধ্যে তিনি নিজেকে বার বার পরিশোধিত করেছেন। এই পরিশোধনের মধ্যেই তিনি তৈরি করেছেন মানুষ থেকে বহু মহামানুষ। কিন্তু শ্রী অরবিন্দ যে বলেছেন মানুষ থেকে সৃষ্টি হবে অতিমানুষের অতিমানস নিয়ে। বাস্তবে যা দেখছি এ কি তারই পরিনাম? মনেতো হয় পৃথিবী যেন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদল দুর্বিনীত, যারা মানুষকে ভালোবাসে না, যারা চায় কেবলমাত্র ক্ষমতায়ন, সেই মানুষরা স্রষ্টার অভিব্যক্তির ধারার, প্রাণের বিকাশের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্রষ্টা কি মুখ বুজে সহ্য করবে এই দুর্বীনিত বর্বরদের? স্রষ্টা কি নিজের পথে নিজের এই বাধাকে অতিক্রম করবে না ? পৃথিবীতে অতিমানুষের যুগ কি আসবেনা? যে মহা মানুষরা বারবার বলে গেলেন, সবাইকে ভালোবাসো, সব ঘৃণা, সব বিদ্বেষ সরিয়ে ফেলো। তাদের পথে কি এই মানুষ জাতি চলবে না! বিশ্বব্যাপী মানব সমাজের কথা চিন্তা করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা শ্রেণীর বিন্যাসগুলোকে গুলিয়ে ফেলি। এইতো আমের ই কত জাত। পেয়ারার কত জাত। প্রতিটা পশু, পাখি, প্রাণীর ভেতরে কত জাত। কত রকমের তাদের দেখতে। কত রকমের গঠনের বৈচিত্র্য। একই প্রাণী তবু তাদের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া আছে , সাম্য ও শান্তি আছে । এই সবাইকে নিয়ে চলা। এটাই প্রকৃতির স্রষ্টার সঠিক পথ বা আপন খেয়াল। সৃষ্টির ধারা। একে অস্বীকার করবো কেমন করে? এই যে এত কিছু কর্মযজ্ঞের আয়োজন এর উদ্দেশ্য কি? এর উদ্দেশ্য নিজেই নিজেকে ভালোবাসা। নিজেই নিজেকে জানা। নিজের আনন্দে নিজে মগ্ন থাকা। যারা ভাবে যে "সে" নেই , আমি তাদের বলি,- ভাবতে হবে না "সে" আছে কিনা, কিন্তু তুমি তো আছো। তোমার বাবা মা আছেন‌। তাদের বাবা মা ছিলেন। তার পূর্বপুরুষরা ছিল। তার মানে এটা একটা ধারা। যেটা হল "মানবের ধারা"। এই মানবের মতো আবার আছে অন্য প্রাণীরা ।তাহলে আমরা তাকে বলতে পারি "পশুদের ধারা"। গাছপালা ঘিরে রেখেছে সবাইকে। অক্সিজেন, খাদ্য দিচ্ছে। তার হ'ল "উদ্ভিদা ধারা"। আর এই পশুরা, মানবরা বেঁচে আছে তাদের উপর নির্ভর করে। আবার এই আমরা সবাই প্রাণী জগৎ বেঁচে আছি জলবায়ু মাটির উপর। একে আমরা বলতে পারি ভৌতধারা। বা প্রাকৃতিক ধারা। যার মধ্যে পৃথিবীর এবং অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রের মতো ভৌত বস্তুগুলির ধারা রয়েছে সূর্যের আবর্তে, সেটি "সৌর ধারা"। সেগুলি রয়েছে আবার কিছু নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে। তাই তার নাম " নাক্ষত্রিক ধারা"। যেভাবে সৃষ্টি হয়ে গেছে মহাবিশ্ব। মানে তোমার থেকে শুরু করে "এক বিশাল তুমি " যা বাস্তব সত্য যা মহাবিশ্ব পর্যন্ত বিস্তৃত এখানে তো "সে" আছে কিনা মানার দরকার নেই। এইবার এই যে "মানব ধারা", যেখানে তুমি আছো, সেই মানবের মধ্যে দেখো কিছু মানুষ আছে, যারা সব সময় মানুষকে ভালোবাসে, যারা মহৎ, যারা ত্যাগের গুণগান করে, ক্ষমাকে গুরুত্ব দেয়, যোগ, জপ, ধ্যানের মধ্যে আছে। এই ধরনের মানুষ যুদ্ধ বিবাদ করে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য, আত্মসম্মানের জন্য, দেশ রক্ষার জন্য। এছাড়া তারা হিংসা করে না। কাউকে ঘৃণা করে না। এই যে জাতি, তা তোমার আমার থেকে উন্নত। কারণ এদের দিয়ে বিশ্বের কল্যাণ সাধিত হয়।‌ আমরা ছুটে বেড়াচ্ছি অর্থের জন্য, সম্মানের জন্য, দুমুঠো ভাতের জন্য। লোভ ও কামের জন্য। আর ওই মানুষগুলো এই সামাজিক খ্যাতি, অর্থের লোভ, যশের আকাঙ্ক্ষা, কামের তাড়না, সবকিছু কন্ট্রোল করে তোমার আমার কল্যাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে । তাই তারা আমাদের থেকে, তোমার থেকে উন্নত‌। এবার দেখ তোমার মধ্যে, আমার মধ্যে ও তাদের মধ্যে একটা মানসিক জগত আছে। এই মানসিক জগতের মধ্যে রয়েছে অনেক ভাবের বিকাশ। তাদের মনের ভাবকে আমরা বলতে পারি "দেবতার ভাব"। "মহামানবের ভাব"। আর আমাদের ভাব হলো যারা ঝগড়া করি, মারামারি করি, হিংসা করি, কামুক, ক্রোধী ও লোভী‌। এই হল "পশু ভাব"। তাই ওই দেবত্বের ভাব, উন্নততর মানবিকতার ভাব আমাদের বিকাশের ধারার তুরীয় অবস্থা। এর মধ্যে "তা৺কে"বোঝার দরকার নেই।‌ কিন্তু এটা বোঝা যায় যে ওই মহাবিশ্ব থেকে যতদূরে আমি, আর আমার থেকে যত দূরে ওই দেবতার মত মানুষরা, এই যে বিরাট অস্তিত্ব, এটা সত্য।এটাই প্রত্যক্ষ দেবতা। এটাই প্রত্যক্ষ ঈশ্বর। এর ধ্যান করলে তৎক্ষণাৎ মুক্তি হয়। ব্যপ্তি হয়, বিস্তৃতি হয়। পশুমানুষ দেবমানুষে পরিণত হয়। আর সেই দেবমানুষ দেখতে পায়, -সেই যে বিগ ব্যাং দিয়ে সমস্ত ভুতগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তার মধ্যে যে আকর্ষণবলে এখন মহাবিশ্ব স্তম্ভিত ও চক্রায়িত, আর তার নিজের মনের ভেতরে সবাইকে ভালোবাসার যে আকর্ষণ, সে দুটো একই জিনিস। আসলে সে যে "সে"ই হয়ে আছে। কিন্তু বুঝবো কেমন করে? তখনই এসে যায় নিজেকে চেনার পালা‌। নিজেকে বোঝার পালা। আত্মন্ অশ্বটির কর্মযোগের চরম যোগে পরম পদে আহুতি দেবার পালা। তাই এবার শুরু হয় চির চলমান অশ্বমেধের যজ্ঞ। কোথাও একটা ঘরের ভেতর বা অফিসের এক কোণে, অথবা হোস্টেলের কোথাও, কোথাও একটা কোন একটা টাইমে, একবার সারা দিনের শেষে, অথবা সকালে সন্ধ্যায়, অথবা রাত্রে নিজের কাছে নিজে বসা। এই সময়টুকুর ভেতর দুম করে পৃথিবীর সবখানে ছড়িয়ে পড়া মনকে বুকের ভিতর আনা মোটেও সহজ নয়। কিন্তু যদি 'আসন' পৃথিবীর তড়িৎ বল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে তখন একটা অভ্যন্তরীণ বল তৈরি হয়। এই বলের সাথে মন স্থাপন করলে আস্তে আস্তে‌ একটা অভ্যাস তৈরী হয়। চোখ বন্ধ করে এভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বারবার নিতে নিতে মন শান্ত হয়। চিন্তার স্রোত "নির্দিষ্ট কোন শব্দের মধ্যে" বারবার উচ্চারণ করলে মন শান্ত হয়। তখন আরো ধীরে কারো আসে আলোকিত অবস্থা, আর কারো বা ঝংকৃত । পরে পরে দুটোই আসে। তখন সৃষ্টি হয় পুলক। আর সেই পুলকে, সেই আনন্দে মানুষ দেবমানুষে পরিণত হয়। চোখে ঝরে জল। শরীরে, মুখে উজ্জ্বল জ্যোতি। এই অবস্থাই হল নিজেকে নিজের পাওয়ার অবস্থা। এখন এই যে 'আসনে'র কথা বলছিলাম এটা আগে একটু ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার। আমাদের শরীরে আছে "সোম"‌। এই সোম হল আমাদের শরীরের তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি। যা হলো আমাদের "স্নায়বিক শক্তি" ও "জীবনী শক্তির"(খেয়াল করা চাই যে , তড়িৎচুম্বকীয় শক্তিও দুটি শক্তি) একত্রিত নাম। যা নিস্তেজ হয়ে যায় অনিয়ন্ত্রিত জীবনে, অতিরিক্ত মৈথুনে। আর সতেজ থাকে ছন্দে, সুরে , নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত জীবনে । তাই এই সোমকেই বীর্যের আরেক রূপ বলা হয়। এই বীর্য যত ধারণ করা যায় তত শরীরের স্বাভাবিক শক্তি স্থির থাকে। ( নারীর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। একে ঊর্জাও বলা হয়।) আর এই শক্তি আমরা পাই খাদ্য বা অন্য থেকে। অন্ন থেকে তৈরি হয় "রস"। যার নাম "গ্লুকোজ"। এই গ্লুকোজ থেকে তৈরি হয় আমাদের শক্তি যা দিয়ে মস্তিষ্ক চলে। স্নায়ুরা চলে। আর মাংসপেশী, যা দিয়ে ক্ষত্রিয় কাজ হয়, তা চলে খাদ্যের প্রোটিন অংশ দিয়ে। যাকে বলা হয় "পয়ঃ"। আর সোম, যা স্নায়বিক শক্তির আধার তা আসে ফ্যাট থেকে। তাকে আমরা "স্নেহ" বলি। এই দিয়ে তৈরি হয় স্নায়বিক শক্তি। "স্নেহ" আবার "রস" বা গ্লুকোজ থেকেও তৈরী হয়। প্রত্যক্ষভাবে বীর্যের শক্তির সঙ্গে ওই খাদ্যের রস গ্লুকোজের মত ফ্রুক্টোজ এর যোগ আছে। অতএব এই সোম ই হল আমাদের জীবনে শক্তির আধার। মস্তিষ্কের শক্তির আধার। চিন্তার শক্তি আধার । ধ্যানের মূল কেন্দ্রে কিভাবে তাকে রাখা যায় সেটা আগে বুঝতে হয়। নিজেকে জানতে গেলে সেটা আগে বুঝতে হয়। এখন পৃথিবীর থেকে এমন কোন বস্তু, যা তড়িৎ এর কুপরিবাহী বা বিদ্যুতের কুপরিবাহী তা দিয়ে আমাদের শরীরকে যদি বিচ্ছিন্ন করে রাখি তাহলে শুধু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছাড়া পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের তড়িৎ-চৌম্বকীয় শক্তির যোগটা সাময়িক বিচ্ছিন্ন করা থাকবে এবং শরীরের নিজস্ব তড়িৎচুম্বকীয় শক্তি শরীরেই থাকবে। আর এইবার যদি বারবার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে তড়িৎ চুম্বকীয় দণ্ডের আবর্তে ফুসফুস চালনা করা যায় শরীরের মধ্যে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ফুসফুসের চালনা ছাড়াও মনের শক্তিতে তড়িৎচুম্বকীয় দণ্ড বা মেরুদন্ডটির আধান বৃদ্ধি করা সম্ভব। একেই "যোগ শক্তি" বলে। এগুলো ভারতীয় সনাতনী বিজ্ঞান। আমাদের মে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান পড়ান হয়েছে, তাতে এসব নেই। এই শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ শ্রুতিগোচর ও দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। একেই দূরদর্শন, দূরশ্রবণ বলা হয়। তাই যোগ বিদ্যা হল নিজেই নিজেকে চেনা ও নিজের অজানা ক্ষমতাগুলো বাড়িয়ে নেবার এক এক্সারসাইজ। এই যোগ বিদ্যার অভ্যাস একদিন দুদিন করলে হবে না। বহু বছর, ছোটবেলা থেকে করে রাখতে হবে। তবে এই যোগ বিদ্যায় এই যোগ শক্তি ক্রিয়া করতে শুরু করবে। কিন্তু এ তো গেল শক্তির কথা। নিজেকে চেনার কি হলো? সেকথা আবার কোনদিন হবে। ধ্যানে বসে একটি নির্দিষ্ট শব্দ বা কিছু অক্ষর বারবার জপ করা হয় ।এই জপের ফলে শরীরের মধ্যে তড়িৎ-চুম্বকীয় বা "স্নায়ু-জীবনী" তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।‌ কিন্তু এই জপটি কেবল কেঠো নিরস হলে হবে না। কাঠের উপরে কাঠ যেমন ঠক্ ঠক্ করে ঠুকে, সেরকম করে ঠুকলে হবে না। জপটি হতে হবে "ধ্বনিত"। অনুরণনটি নিজের অনুচ্চারিত শব্দে নিজের মনের ভেতর সেই শব্দের ঝংকারে অনুভব করতে হয়। তাই শব্দের যে ক'টি অক্ষর আছে, আগে তাকে বাইরে উচ্চারণ করলে, যাকে "বৈখরি" বলা হয়, তাতে কেমন আওয়াজ হয় সেটা কানে নিতে হয়। মোট কটি মাত্রার মন্ত্র সেটিকে আগে জানতে হয় তারপর অনুরণন শুরু করতে হয। উদাহরণস্বরূপ, প্রণব যদি উচ্চারণ করা হয় তার তিনটি বা চারটি মাত্রা(ওম্ বা ঔম্) কিন্তু "অনুরণন" করে আট মাত্রার করতে হলে আরো চারটি বা পা৺চটি মাত্রায় করতে হয়। এটি জাতিভেদে পরিবর্তিত হয়। যেমন একটা পেটা ঘন্টা বাজলে শুধু ঘন্টার আওয়াজ হয়না তারপরে তার বেশ কিছুক্ষন একটা অনুরণন চলে। এইটাই নিজের শরীরকে তরঙ্গায়িত করে তোলে। কারণ যে তিনটি মাত্রা আমার স্বরযন্ত্র বা মনো যন্ত্র দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে নিরবে তারপরের যে পাঁচটি বা চারটি মাত্রা, যা উচ্চারিত হচ্ছে আমার শরীরে স্বরযন্ত্রে বা ভেতরে মনোযন্ত্রে, তার কোন প্রকাশ নেই। প্রকাশিত তিনটি বা চারটি মাত্রা হলো "ক্ষর" আর অপ্রকাশিত পাঁচটি বা চারটি মাত্রা হলো। "অক্ষর" অবস্থা। এই অক্ষর অবস্থায় মনস্থিতি দৃঢ় হলেই দেহ তদ্গত হয়। এই পরাশক্তিময় অবস্থায় সমাধি আসে‌। সম্প্রজ্ঞাত সমাধি। সম তে অধিগাহন। সেই অমৃতে ডুব দেওয়া। এই অনুরণন স্পষ্টতর করার জন্যই দেবালয়ে গম্ভীরা চুড়াকৃতি ও ফাঁপা। কক্ষের আয়তন অল্প হয়।‌ এটি সনাতনী নাদবিজ্ঞান। আমরা পড়িনি। সহজ উপায় হ'ল বাথরুমে অনুভব। এখানে বায়ুস্তম্ভ খুব নীচু আওয়াজেই ধ্বনীটিকে প্রকট করে। ভৌত বিজ্ঞানে একে সমমেল বলে। আর একটি উদাহরণ। তাজমহলের প্রধান ঘরে উপর দিকে যে বিশাল গম্বুজাকার ফাঁকা, কোন আওয়াজ সেখানে কেমন অনুরণন সৃষ্টি করে। অসংখ্য মানুষের আওয়াজে এক অদ্ভুত ধ্বনী অনুরণিত হয়। এতো মে বললাম, এসব সমর্থ গুরুরা নিজের শক্তিপাত করে শিষ্যের ভেতর সৃষ্টি করেন‌। যদিও বিজ্ঞান দিয়ে অনেক কিছু বোঝালাম, কিন্তু, তা৺র কৃপা ও গুরুকৃপা ছাড়া সহজে এসব হয় না। শুধু এখন সময় এসেছে। তাই ডাক পড়ছে বার বার। চারদিকে ঢাকের বাদ্যে, দুন্দুভীর নাদে সেই মানুষগুলোকে এক করার ডাক পড়ছে। বারবার সেই "সত্য যুগে"র কথা সবার কাছে তুলে ধরা, আর তার জন্য এ যুগে বার বার রবীন্দ্রনাথেরা আসছেন, আসছেন স্বামীজি। আসবেন আরো অনেকে। এখনো আছেন। একটাই উদ্দেশ্য। এইসব মানুষগুলোকে, শুভ বুদ্ধিগুলোকে একত্রিত করা। আর যা কিছু দূর্বী্নিত,পাশবিক, স্বার্থপর, তাদেরকে প্রেম দিয়ে, বুঝিয়ে, প্রয়োজনে অস্ত্র দিয়ে করাভূত করা‌। এ গতির মহাপ্লাবনে স্নান করে এসো সবাই মাভৈঃ বলে সেই বীরের কাজে যোগ দিই। যার কোন বাস্তবিক ভোট নেই, সংগঠন নেই। সমস্ত কিছু হচ্ছে ও হবে অন্তরের নির্দেশে। এই সেই আত্মার আত্মীয়তা। আত্মার সংগঠন। এই সেই অটুট বন্ধন।

No comments:

Popular Posts