In This Blog You Can Find Articles Regarding Indian Arts, Science, Culture, Philosophy ,History ,Spirituality ,Rational and CREATIVE THOUGHTS. To ENFORCE An Earthly Life Into The DIVINE Life keeping the normal life style intact,to innovate and to reveal the new things to serve THE MOTHER- EARTH and HER DWELLERS I am inviting you to join us. Be a follower and share your thoughts. Visit https:// www.sridoctor.com to know more.
Translate
Tuesday, October 21, 2025
সখারাম গণেশ পণ্ডিত: এক ভারতীয় যিনি আমেরিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ইতিহাস লিখেছিলেন
Saturday, October 18, 2025
আলো, শক্তি ও মা কালী: ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর আধ্যাত্মিক দৃষ্টি
কালীপুজোর রাতে বাংলার ঘর, উঠোন, বারান্দা, পথঘাট থেকে শ্মশান পর্যন্ত প্রদীপের আলোয় ঝলমল করে ওঠে। অনেকেই এটাকে শুধু উৎসবের সাজ বা অমাবস্যার আলো বলে মনে করেন, কিন্তু এই প্রদীপজ্বালানোর রীতির জড় roots রয়েছে প্রাচীন শাক্তধর্ম, গ্রামীণ লোকবিশ্বাস, পূর্বপুরুষ আর তন্ত্রসাধনার সঙ্গে। এই আলো কেবল অন্ধকার ভাঙে না, বরং দেবীর আহ্বান, অশুভশক্তি নিবারণ, জীবনীশক্তি রক্ষা এবং শক্তির অভিষেকের প্রতীক।
উৎস: অন্ধকার থেকে শক্তির আহ্বান
কালীপুজো হয় কার্তিক অমাবস্যায়—যে রাতে আকাশে একফোঁটা চাঁদের আলোও থাকে না। প্রাচীন শাস্ত্রে বলা আছে, “অন্ধকারই শক্তির অগ্নিপথ”, তাই সেই রাতে আলো জ্বালিয়ে শক্তির আগমনকে স্বাগত জানানোর প্রচলন গড়ে ওঠে। গ্রামবাংলায় বিশ্বাস ছিল, কার্তিকের অমাবস্যায় অশরীরী শক্তি, ভূতপ্রেত আর দুর্ভাগ্যের ছায়া নেমে আসে। তাই বাড়ির চার কোণে, দরজার সামনে, তুলসীতলার পাশে কাঁচা প্রদীপ জ্বালিয়ে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখা হত।
তন্ত্র ও প্রদীপ: শক্তির আসন প্রস্তুতি
তান্ত্রিক পূজায় আগুনকে ধরা হয় জীবন্ত মাধ্যম—‘অগ্নি দেবীশক্তির মুখ’। তাই আগে ঘরে যে প্রদীপ জ্বলত, তা ছিল কালীকে ডাকার এক আধ্যাত্মিক ডাক। শাস্ত্রে বলা আছে, মা কালী থাকেন দিকদিগন্তের অন্ধকারে, তাই আলো দিয়ে তাঁর পথ তৈরি করা হয়। অনেক তান্ত্রিক সাধক প্রদীপের শিখায় ধ্যান করতেন, এবং শিখাকে দেবীর জিভ, কেশ, বা চক্ষুর প্রতীক মানতেন। প্রদীপ জ্বালানো মানে পূজার মঞ্চে শক্তির আগমন ঘটানো।
সরষের তেলের প্রদীপ ও গ্রামীণ ঐতিহ্য
বাংলায় ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে সরষের তেলের যোগ সবচেয়ে গভীর। বিশ্বাস ছিল, সরষে তেল অশুভ শক্তিকে পুড়িয়ে দেয়। গ্রামে গৃহবধূরা সন্ধ্যায় উঠোনে, গোয়ালের পাশে, বারান্দায় এবং বট বা নিমগাছের নিচে প্রদীপ জ্বালাতেন, যাতে মা কালী অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন। অনেক পরিবার আজও অঘোরী তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে কালীকে সন্তুষ্ট করার রীতি বজায় রেখেছে।
পূর্বপুরুষের আত্মা ও ভূতচতুর্দশীর সংযোগ
কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী। এই রাতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মাকে শান্ত ও সন্তুষ্ট করার এক আদি প্রথা প্রচলিত। ধারণা ছিল, অমাবস্যার অন্ধকারে পিতৃপুরুষেরা ভাসতে থাকেন এবং আলো দেখে তারা পথ খুঁজে পান। তাই বারান্দা, সিঁড়ি, চাতাল, উঠোনে প্রদীপ রেখে পূর্বপুরুষকে আহ্বান ও আশীর্বাদ চাওয়া হত। এই বিশ্বাস থেকেই পরের দিনে কালী আরাধনার প্রদীপের সংস্কৃতি আরও গভীর হয়।
দরজা, জানালা ও ছাদে আলো: দেবীর পথপ্রদর্শন
গ্রামবাংলার বহু অঞ্চলে বিশ্বাস ছিল, দেবী কালরাত্রিতে আকাশপথে চলেন। তাই ছাদে, গাছের মাথায় বা বাঁশের উপর প্রদীপ বেঁধে আলো তুলে ধরা হত। একে বলা হত “আকাশবাতি” বা “দীপালোক”। আবার বাড়ির দিকনির্দেশে প্রদীপ রাখাকে ধরা হত কালী ও লক্ষ্মী দুই দেবীর পথপ্রদর্শন হিসেবে। কারণ এই রাতেই কিছু অঞ্চলে দুয়োকেই একসঙ্গে আহ্বান করা হয়।
অশরীরী শক্তি প্রতিরোধে প্রদীপের ভূমিকা
লোকবিশ্বাস ছিল, অমাবস্যায় ‘দুষ্ট আত্মা, শাকচুন্নি, ডাইনিবেগুনির’ আসর বেশি থাকে। প্রদীপের আগুনে আগুনদেবতা অশুভ শক্তিকে পুড়িয়ে নষ্ট করেন—এই ধারণা থেকেই ঘরের চারকোণে, পুকুরঘাটে ও উঠোনে প্রদীপ রাখা হত। আগুন মানে জীবন, আলোক, রক্ষা ও শক্তির উপস্থিতি।
কালীপুজোর প্রদীপজ্বালানো কোনো সাজসজ্জার অংশ নয়—এটি প্রাচীন আচার, তান্ত্রিক আহ্বান, পূর্বপুরুষ স্মৃতি, অশুভনাশ ও দেবীর শক্তির আলোক প্রতিষ্ঠা। ঘরে ঘরে প্রদীপ মানে একদিকে দেবীকে স্বাগত, অন্যদিকে নিজস্ব ভয়, অন্ধকার, মৃত্যুচিন্তা ও দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
আজ আলোর ঝলকানিতে অনেকেই এর মূল তাৎপর্য ভুলে গেছেন, কিন্তু বাংলার প্রদীপসন্ধ্যা এখনো বহন করে এক গভীর আত্মিক ইতিহাস—যেখানে প্রতিটি শিখা হল শক্তির চোখ, রক্ষার বলয় এবং আলোকের শপথ।
Saturday, October 4, 2025
লক্ষীপূজায় অন্নপূর্ণা ও ধনলক্ষ্মীর পার্থক্য — লোকবিশ্বাস বনাম পুরাণদৃষ্টি
লক্ষীপূজা মানেই সমৃদ্ধি, শুভ সময়, আলো এবং শান্তির আহ্বান। কিন্তু বাংলার লোকবিশ্বাস ও পুরাণদৃষ্টিতে লক্ষ্মীর একাধিক রূপের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে অন্নপূর্ণা ও ধনলক্ষ্মী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একজন খাদ্যের দেবী, অন্যজন ধনসম্ভারের অধিষ্ঠাত্রী। কিন্তু গ্রামীণ সংস্কৃতি, পৌরাণিক ব্যাখ্যা এবং আধুনিক পারিবারিক মানসিকতায় এই দু’টি রূপের মধ্যে নানা সূক্ষ্ম পার্থক্য ও মিল ধরা পড়ে। সেই দৃষ্টিতেই এখানে বিশ্লেষণ করা হলো।
পুরাণে ধনলক্ষ্মীর অবস্থান
ঋগ্বেদ, পদ্মপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে লক্ষ্মীকে মূলত ধন, সৌভাগ্য ও ঐশ্বর্যের দেবী হিসেবে দেখানো হয়। সমুদ্র মন্থনের ফলেই তাঁর আবির্ভাব, তাই তাঁকে ও ‘সমুদ্রকন্যা’ বলা হয়। বিষ্ণুর বক্ষলোকে তাঁর অবস্থান এবং স্বর্ণপদ্মে আসীন রূপ মহালক্ষ্মী নামে পরিচিত। গৃহস্থের ধনসম্পদ, ব্যবসার উন্নতি, গহনা, শস্যভান্ডার এবং ঐশ্বর্য তাঁর আধিপত্যক্ষেত্র। লক্ষীপূজার দিনে ধনলক্ষ্মীর আরাধনাকে অধিকাংশ শহুরে ও ব্যাবসায়িক পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে।
অন্নপূর্ণার ধারণা ও বৈদিক তাৎপর্য
অন্নপূর্ণা সাধারণভাবে পার্বতীর এক রূপ হিসেবে পূজিত হলেও, বাংলার ঘরোয়া সংস্কৃতিতে তাঁকে ‘অন্নলক্ষ্মী’ বা ‘গৃহলক্ষ্মী’ হিসেবেও দেখা হয়। স্কন্দ পুরাণ ও দেবী ভাগবত পুরাণে বলা আছে, অন্নপূর্ণা কেবল অন্নের যোগানদাত্রী নন, তিনি জীবনধারণের মূল ভিত্তি। শস্য, ধান, শাকসবজি, গোমাতা, জল ও প্রাচুর্য তাঁর অধীন। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ বাংলায় লক্ষ্মীর চেয়ে অন্নপূর্ণার গুরুত্ব কখনো কখনো বেশি বলে বিবেচিত হয়।
লোকবিশ্বাসে দুই দেবীর পৃথক পরিচয়
লোককথা ও দৈনন্দিন প্রবাদে বলা হয়— “যেখানে ধনলক্ষ্মী আসেন, সেখানে অন্নপূর্ণাও থাকতে হবে।” আবার “অন্নপূর্ণা রুষ্ট হলে শস্যহানি, ধনলক্ষ্মী রুষ্ট হলে আর্থিক সংকট”— এ ধরনের বিশ্বাসও প্রচলিত। গ্রামীণ বাংলার অনেক পরিবার লক্ষীপূজার সঙ্গে ‘নবান্ন’ রীতি মিলিয়ে একটি দিন অন্নপূর্ণার উদ্দেশ্যে মানত দেয়। শহুরে পূজায় মন্ত্রপাঠে ধনলক্ষ্মী বেশি গুরুত্ব পেলেও গ্রামে চাল, ধান, কলস, শস্যদানাকে কেন্দ্র করে অন্নপূর্ণার পূজা বেশি সমাদৃত।
গৃহলক্ষ্মী ধারণা এবং পারিবারিক সমান্তরালতা
অনেক ঘরে বউ বা নববধূকে ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলা হয়, যেখানে উভয় ধারণাই মিলেমিশে আছে—অন্নপূর্ণার অন্নরক্ষা এবং ধনলক্ষ্মীর সমৃদ্ধি। সংসারের প্রবাহ চালানোর জন্য যেমন টাকার প্রয়োজন, তেমনই দরকার খাদ্য ও ভান্ডার। এ কারণে লোকসংস্কৃতিতে বলা হয়, “অন্নপূর্ণা থাকলে ধনলক্ষ্মীর আগমন নিশ্চিত।”
আর্থিক সমৃদ্ধি বনাম খাদ্যনির্ভরতা — আধুনিক বাস্তবতা
শহরে ধনসম্পদ ও ব্যবসার বৃদ্ধি লক্ষীপূজার মূলচিন্তা হলেও, গ্রামে ফসলভিত্তিক জীবনযাত্রা এখনও অন্নপূর্ণার প্রতিই বেশি নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গেছে, যে অঞ্চলে কৃষিজীবীর সংখ্যা বেশি সেখানে চাল, তিল, সরষে, ধানের গাদা, কলাপাতা ও তালপাতা দিয়ে অন্নলক্ষ্মীর আরাধনা হয়। অন্যদিকে ব্যবসাকেন্দ্রিক অঞ্চলে ধনলক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে লক্ষ্যনীয়ভাবে দেনাপাওনা, হিসেবপত্র, সোনাদানা, ব্যবসার খাতা প্রার্থনার অংশ।
অন্নপূর্ণা ও ধনলক্ষ্মীকে অনেক সময় একই দেবীর দুই দিক বলে মানা হয়, আবার অনেক পরিবারে তাঁদের পৃথক প্রভাবও দেখা যায়। একজনে খাদ্য ও জীবনের নিশ্চয়তা দেন, অন্যজনে আর্থিক স্থিতি ও ভাগ্যসম্পদ আনেন। পুরাণে তাঁদের রূপ আলাদা হলেও লোকসংস্কৃতিতে তাঁরা একে অপরের পরিপূরক। লক্ষীপূজার আসল ভিত্তিও সেখানেই—অন্ন ও ধন, সংসার ও সাধনা, আস্থা ও আরাধনা মিলিয়ে জীবনের সম্পূর্ণতা অর্জন করা।
Sunday, September 28, 2025
দুর্গা পূজার পাঁচ দিনের মাঙ্গলিক মাহাত্ম্য: পঞ্চমী থেকে বিজয়া
দুর্গাপূজা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের জীবনের অশুভ শক্তি দূর করার, নৈতিকতা ও শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার উৎসব। প্রতিটি দিনেই একটি নির্দিষ্ট আচার ও অর্থ নিহিত রয়েছে। প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, এই পাঁচ দিনের প্রতিটি কাজ মানুষের মনকে শক্তিশালী করে, জীবনে নতুন আশা ও আনন্দ নিয়ে আসে।
পঞ্চমী: দেবীর বোধনের সূচনা
পঞ্চমী হলো দুর্গাপুজার আনুষ্ঠানিক সূচনা। এই দিনে দেবী দুর্গা আগমন করেন, অশুভ শক্তি ধ্বংস এবং শুভ শক্তি নিয়ে আসেন। প্রতিমা স্থাপন, ঢোল-ঢোলির তালে নাচ-গান এবং পুষ্প প্রদীপের ব্যবহার দেবীর শক্তি আহ্বান করার প্রতীক। পঞ্চমী দিয়ে শুরু হয় ভক্তির প্রবাহ, যা জীবনে নতুন শক্তি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে।
ষষ্ঠী: দেবীর বোধন অধিবাস ও স্বস্তি
ষষ্ঠী দিনে দেবী স্থায়ীভাবে মণ্ডপে অবস্থান নেন। দেবীর শান্তিপূর্ণ অবস্থান ভক্তদের মন ও সংসারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে। পুষ্প, ধূপ ও প্রদীপ দিয়ে দেবীর আগমনকে স্বাগত জানানো হয়। এই দিনটি বোঝায় যে ভক্তির পবিত্রতা জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক।
সপ্তমী: নবপত্রিকা প্রবেশ ও দেবীবন্দনা
সপ্তমীতে নবপত্রিকা বা নতুন পাতা দিয়ে দেবী বন্দনা করা হয়। বেলপাতা, তূলসীপাতা ও অন্যান্য পুষ্প দেবীর শক্তি ও নবজীবনের প্রতীক। এটি জীবনকে নবচেতনা এবং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে উদ্দীপিত করে।
অষ্টমী: দেবীর মহা অচর্না ও সন্ধি পূজা
অষ্টমী হলো দেবীর পূর্ণ শক্তির প্রকাশ। এই দিনে দেবীর শক্তি সর্বাধিক অবস্থায় থাকে। সন্ধি পূজা অষ্টমী ও নবমীর সংযোগ নির্দেশ করে এবং দেখায় যে জীবনের সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে ধৈর্য, একাগ্রতা এবং সততা অপরিহার্য।
নবমী: দেবীর মহিষাসুর বধের আচার
নবমী হলো দুর্গাপুজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। দেবী মহিষাসুর বধ করেন, যাতে দুষ্ট শক্তি ধ্বংস হয় এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মানুষের মনে নৈতিকতা, সতর্কতা ও আত্মশক্তি বৃদ্ধি করে।
দশমী: বিজয় ও সিঁদুর খেলা
বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন এবং সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি পুরনো নেতিবাচক শক্তি দূর করে নতুন সূচনার প্রতীক। ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান, যেন নতুন শক্তি, আনন্দ ও আশা নিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
দুর্গাপূজা শুধুই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। প্রতিটি দিনেই আছেন দেবীর বিভিন্ন রূপ, যা আমাদের শেখায় জীবনে সততা, সাহস, ধৈর্য এবং একাগ্রতার গুরুত্ব। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পাঁচ দিনের আচার ও অনুশীলন আমাদের জীবনকে শক্তিশালী, আনন্দময় এবং ন্যায়সঙ্গত করে। দুর্গাপূজা তাই কেবল উৎসব নয়, এটি জীবনের পথপ্রদর্শকও বটে।
Our Website:
https://www.sridoctor.com/about.php
Sri Yoga Centre Ashram Google:
https://share.google/b9sVmwJEpISflZsrL
Bengal Spirit Blog:
https://share.google/sKQyOtfeAIxKWHOrY
Ashram and Maths blog:
https://share.google/ZEwwsNBmuL2GwUmwQ
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Group:
https://www.facebook.com/share/g/1Z6QftRsFj/
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Page:
https://www.facebook.com/share/1CyybonM5p/
Sri Yoga Centre Ashram Youtube Channel:
https://youtube.com/@sriyoga_center?si=08LpHh8o1u2MrngM
Sridoctor Blog:
https://blog.sridoctor.com
Thursday, September 11, 2025
মাটিতে বসে খাওয়া: শাস্ত্রীয় মাহাত্ম্য ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
আমাদের বাঙালি ঘরে একসময় সবাই মাটিতে বা আসনে (পিড়ি, পাটি, আসন) বসে খেতেন।
আজকাল টেবিল-চেয়ারের যুগে এই অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু শাস্ত্র ও বিজ্ঞান বলছে — মাটিতে বসে খাওয়া শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের এক সেরা উপায়।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা
মাটিতে বসা মানে প্রকৃতির কাছাকাছি হওয়া।
ভূমি দেবীকে স্পর্শ করে খাওয়া মানে — অন্নগ্রহণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
সমতা ও বিনয়
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, খাবার সময় সবাই একসাথে মাটিতে বসলে ধনী–গরিব, ছোট–বড় ভেদাভেদ মুছে যায়।
মাটিতে বসা মানে বিনয় ও শৃঙ্খলার প্রকাশ।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
অঙ্গভঙ্গির উপকারিতা (Sukhasana বা পদ্মাসন)
মাটিতে বসে খাওয়ার সময় সাধারণত আমরা সুখাসন বা অর্ধপদ্মাসন-এর মতো ভঙ্গিতে বসি।
এতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে, পাচনতন্ত্রে চাপ কমে।
ডাইজেস্টিভ সিস্টেম সক্রিয় হয়
মাটিতে বসে খাওয়ার সময় খাবার তুলতে বারবার সামনে ঝুঁকতে হয়।
এই নড়াচড়া পেটের পেশী ও আন্ত্রিক অঙ্গকে সক্রিয় করে, ফলে হজম শক্তি বাড়ে।
মাইন্ডফুল ইটিং
টেবিলে বসে খাওয়ার চেয়ে মাটিতে বসলে আমরা ধীরে ও মনোযোগ দিয়ে খাই।
এতে অতিরিক্ত খাবার এড়ানো যায় ও স্থূলতা কমে।
রক্তসঞ্চালনের উন্নতি
আসনে বসে খাওয়ার সময় রক্তসঞ্চালন সমানভাবে পায়ে, পেটে ও মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
এতে খাবারের পর ক্লান্তি বা অলসতা কম হয়।
অঙ্গ-সন্ধির ব্যায়াম
প্রতিবার বসা–উঠা করতে হাঁটু, কোমর ও গোড়ালির ব্যায়াম হয়।
এতে শরীর নমনীয় হয় ও বয়সজনিত সমস্যা (আর্থ্রাইটিস) দেরিতে আসে।
শাস্ত্র বলছে — মাটিতে বসে খাওয়া ভক্তি, বিনয় ও সমতার প্রকাশ।
বিজ্ঞান বলছে — এটি পাচন, রক্তসঞ্চালন ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
অতএব, মাটিতে বা আসনে বসে খাওয়া শুধুই প্রাচীন রীতি নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যচর্চা, যেটি আজকের ব্যস্ত জীবনে আবার ফিরে আসা উচিত।
Our Website:
https://www.sridoctor.com/about.php
Sri Yoga Centre Ashram Google:
https://share.google/b9sVmwJEpISflZsrL
Bengal Spirit Blog:
https://share.google/sKQyOtfeAIxKWHOrY
Ashram and Maths blog:
https://share.google/ZEwwsNBmuL2GwUmwQ
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Group:
https://www.facebook.com/share/g/1Z6QftRsFj/
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Page:
https://www.facebook.com/share/1CyybonM5p/
Sri Yoga Centre Ashram Youtube Channel:
https://youtube.com/@sriyoga_center?si=08LpHh8o1u2MrngM
Sridoctor Blog:
https://blog.sridoctor.com
Tuesday, September 2, 2025
গোমূত্র ও গোবর গৃহপ্রবেশে ব্যবহৃত হয় কেন? এটা আদতে কি কোন কুসংস্কার?- প্রাচীন শুদ্ধিকরণ থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
হিন্দু বাঙালি ঘরে নতুন বাড়ি তৈরি হলে বা গৃহপ্রবেশের সময়ে একটি বিশেষ আচার পালিত হয়— গোমূত্র ও গোবর দিয়ে শুদ্ধিকরণ।
অনেকেই ভাবেন এটি শুধুই ধর্মীয় কুসংস্কার, কিন্তু বাস্তবে এর পিছনে রয়েছে গভীর শাস্ত্রীয় মাহাত্ম্য এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
গোমাতা পূজিত
হিন্দুধর্মে গরুকে “গোমাতা” বলা হয়।
অথর্ববেদে বলা হয়েছে — “গাভঃ সর্বসুখপ্রদা” অর্থাৎ গরুই সকল সুখ ও সমৃদ্ধির দাত্রী।
গোমূত্র পবিত্রতার প্রতীক
পুরাণে গোমূত্রকে অমৃততুল্য বলা হয়েছে।
গৃহপ্রবেশের সময়ে গোমূত্র ছিটিয়ে অশুভ শক্তি নিবারণ ও শান্তি কামনা করা হয়।
গোবরের মাহাত্ম্য
ঋগ্বেদ ও গৃহ্যসূত্রে উল্লেখ আছে যে গোবর অগ্নিদেবকে সন্তুষ্ট করে ও ভূমিকে পবিত্র করে।
আঙিনায় গোবর লেপন মানে ‘মাতৃভূমি’র সঙ্গে সংযোগ স্থাপন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
গোমূত্রের জীবাণুনাশক গুণ
আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে গোমূত্রে ফিনল, ইউরিয়া ও ভোলাটাইল অয়েলস থাকে।
এগুলি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক → ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করে।
গোবরের অ্যান্টিসেপ্টিক শক্তি
শুকনো গোবর জ্বালালে প্রচুর অক্সিজেন নির্গত হয়।
গোবর দিয়ে মেঝে লেপলে তা শীতল রাখে ও মশা-পোকামাকড় দূরে রাখে।
আধুনিক মাইক্রোবায়োলজি অনুযায়ী গোবর E. coli ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু মারতে সক্ষম।
বায়ু ও পরিবেশ বিশুদ্ধকরণ
গোমূত্র ও গোবর একসাথে মিশিয়ে ছিটালে ঘরের দুর্গন্ধ ও দূষণ কমে।
এটি একধরনের প্রাকৃতিক ডিসইনফেক্ট্যান্ট ও এয়ার পিউরিফায়ার।
মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
নতুন ঘরে প্রবেশ মানে নতুন জীবনের সূচনা।
গোমূত্র ও গোবরের ব্যবহার মানসিকভাবে বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়।
• শাস্ত্র যেমন বলে গোমূত্র ও গোবর অশুভ শক্তি দূর করে ও গৃহপবিত্র করে,
• তেমনই বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে এগুলি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক, এয়ার পিউরিফায়ার ও পরিবেশ রক্ষাকারী পদার্থ।
অতএব, গৃহপ্রবেশে গোমূত্র ও গোবর ব্যবহার কুসংস্কার নয়, বরং প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়কর মিলন।
Our Website:
https://www.sridoctor.com/about.php
Sri Yoga Centre Ashram Google:
https://share.google/b9sVmwJEpISflZsrL
Bengal Spirit Blog:
https://share.google/sKQyOtfeAIxKWHOrY
Ashram and Maths blog:
https://share.google/ZEwwsNBmuL2GwUmwQ
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Group:
https://www.facebook.com/share/g/1Z6QftRsFj/
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Page:
https://www.facebook.com/share/1CyybonM5p/
Sri Yoga Centre Ashram Youtube Channel:
https://youtube.com/@sriyoga_center?si=08LpHh8o1u2MrngM
Sridoctor Blog:
https://blog.sridoctor.com
Saturday, August 23, 2025
সন্ধ্যা আরতির সময় শঙ্খ, ঘণ্টা ও করতাল একসাথে বাজানো : আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
Sunday, August 17, 2025
অন্নপ্রাশন: কেন শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানো হয় পূজার মাধ্যমে
মানবজীবনের প্রতিটি ধাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাকে বাঙালি সমাজে উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো অন্নপ্রাশন—যেখানে শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানো হয় পূজার মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠান শুধু খাদ্যাভ্যাসের সূচনা নয়, বরং শিশুর শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক।
অন্নপ্রাশন কি?
অন্নপ্রাশন শব্দের অর্থ হলো—“অন্ন গ্রহণ”। সাধারণত ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে যখন শিশুর দাঁত গজাতে শুরু করে এবং সে মায়ের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তখন পরিবারে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে সাধারণত ষষ্ঠ মাসে এবং মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে পঞ্চম মাসে পালন করার রীতি প্রচলিত।
প্রাচীন বেদীয় উল্লেখ
• গৃহ্যসূত্র ও ধর্মশাস্ত্রে অন্নপ্রাশন – বেদ-উত্তরকালের গৃহ্যসূত্রে অন্নপ্রাশনকে “ষোড়শ সংস্কার” (মানুষের জীবনের ১৬টি প্রধান ধর্মীয় আচার) এর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
• মনুস্মৃতি – মনুস্মৃতিতেও অন্নপ্রাশনের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানোর সময় মন্ত্রপাঠ ও দেবতাদের আহ্বান করতে হবে।
• অর্থ – প্রাচীন ভারতীয়রা বিশ্বাস করতেন, প্রথম অন্ন শিশুর ভবিষ্যৎ দেহ-মন গঠনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই একে পূর্ণ আচার মেনে করা জরুরি।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা
• অন্নই ব্রহ্ম – বেদে বলা হয়েছে, “অন্নং ব্রহ্ম” অর্থাৎ অন্নই ব্রহ্ম। তাই প্রথম অন্নগ্রহণকে পবিত্র করে পূজার মাধ্যমে সূচনা করা হয়।
• দেবতার আশীর্বাদ – অনুষ্ঠানে দেব-দেবীর পূজা করা হয় যাতে শিশুর জীবনে অন্নের অভাব না হয় এবং সে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে।
• পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা – অনেক পরিবারে এই সময়ে পিতৃপুরুষদের নাম স্মরণ করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, তাঁদের আশীর্বাদে শিশুর জীবনে সমৃদ্ধি আসে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা
শিশুর সামাজিক পরিচিতি – অন্নপ্রাশনের মাধ্যমে শিশুকে সমাজে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্যগ্রহণকারীরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে অনুষ্ঠানের সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা হয়।
উৎসবের আনন্দ – বাঙালি জীবনে প্রতিটি আচার উৎসবমুখর। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পারিবারিক মিলনমেলা ঘটে, যা সমাজ-সংস্কৃতির অংশ।
ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত – কিছু পরিবারে অন্নপ্রাশনের সময় শিশুর সামনে কলম, বই, টাকা, গয়না ইত্যাদি রাখা হয়। শিশু যেটি বেছে নেয়, সেটিকে তার ভবিষ্যৎ প্রবণতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
• শারীরবৃত্তীয় প্রস্তুতি – ছয় মাস বয়সের পর থেকে শুধু মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টির জন্য যথেষ্ট হয় না। এ সময় শিশুর শরীর অতিরিক্ত শক্তি ও পুষ্টি চায়, তাই প্রথমবার শক্ত খাবার শুরু করার জন্য এই সময়কে বেছে নেওয়া হয়।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি – ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে হয়। অন্নপ্রাশনের মাধ্যমে শিশুকে শক্ত খাবারের জগতে প্রবেশ করানো হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়ক।
• পরিবারের অংশগ্রহণ – বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, শিশুর খাদ্যাভ্যাসের সূচনায় পরিবার সকলে মিলে মনোযোগ দেয়। এতে অভিভাবকরা শিশুর খাদ্যগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে।
অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা
• চীনে – চীনে শিশু ছয় মাস বা এক বছর পূর্ণ করলে “Zhuazhou” নামে একটি অনুষ্ঠান হয়, যেখানে শিশুর সামনে নানা জিনিস রাখা হয়। যা ধরে, সেটি তার ভবিষ্যতের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
• জাপানে – জাপানে “Okuizome” নামক একটি অনুষ্ঠান আছে। শিশুর জন্মের ১০০ দিন পর তাকে প্রতীকীভাবে খাবার খাওয়ানো হয়, যাতে সারাজীবন তার অন্নের অভাব না হয়।
• পশ্চিমে – পাশ্চাত্য দেশে শিশুর প্রথম খাবার শুরু করার নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নেই, তবে পরিবারিক উৎসব হিসেবে “baby’s first solid food” কে অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে পালন করে।
অন্নপ্রাশন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি শিশুর জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক রীতি, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি—সবকিছু একসাথে মিশে আছে। প্রাচীন বেদীয় শাস্ত্রের উল্লেখ থেকে শুরু করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পর্যন্ত—সবই প্রমাণ করে যে এই আচার শুধু কুসংস্কার নয়, বরং শিশুর সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবনের ভিত্তি স্থাপনের একটি উপায়।
Monday, July 28, 2025
Why is there a tradition in Hinduism of immersing idols of gods or goddesses in water?
Wednesday, July 23, 2025
Anjali — More Than Flowers: The Heart of Indian Spiritual Tradition
Saturday, July 12, 2025
দ্বারকা – এক হারানো পৌরাণিক শহরের গল্প
দ্বারকা (Dwarka) শব্দের অর্থই হল ‘দ্বার’ বা ‘দ্বারকা’ মানে ‘গেটওয়ে’। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এটি ছিল শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী, যিনি মথুরা ছেড়ে সমুদ্রের ধারে এক দুর্ভেদ্য নগরী গড়েছিলেন।
🕉️ পুরাণে দ্বারকা
মহাভারত এবং হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী, কৃষ্ণ যখন মথুরায় জরাসন্ধের আক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইলেন, তখন সমুদ্রের জলে এক নতুন শহর তৈরি করলেন – সেটিই দ্বারকা।
বলা হয়, দ্বারকা ছিল এক বিশাল দুর্গনগরী, সোনার প্রাসাদ, মণিমুক্তার দেয়াল আর বিস্তৃত বন্দর ছিল।
কৃষ্ণের মৃত্যুর পরে, পৌরাণিক গল্পে বলা হয় দ্বারকা সমুদ্রগর্ভে ডুবে যায়।
🔍 প্রাচীন গ্রন্থ ও বিদেশী বর্ণনা
গ্রীক এবং রোমান পর্যটক বা বণিকদের রেকর্ডে পশ্চিম ভারতের বন্দর নগরী হিসেবে দ্বারকার উল্লেখ আছে।
চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ও কিছু আরব পর্যটক দ্বারকার সমুদ্রপথের বাণিজ্যের কথা বলেছেন।
🌊 আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে?
🧭 আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)
১৯৮৩ সালে ভারতের ASI ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশিয়ানোগ্রাফি (NIO) সমুদ্রতলে প্রথম বড়সড় অনুসন্ধান চালায়।
গুজরাট উপকূলে বেত দ্বারকা (Bet Dwarka) ও দ্বারকা শহরের কাছে ৩০-৪০ ফুট গভীরে স্থাপনা, নোঙরের খুঁটি, দেয়ালের অংশ, পাথরের ব্লক, মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া যায়।
কার্বন ডেটিংয়ে এদের বয়স ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে।
কিছু পণ্ডিত বলেন, এগুলোই পৌরাণিক দ্বারকার অবশিষ্টাংশ।
🔍 আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান
সমুদ্রের নিচে পাওয়া কাঠামোগুলি প্রমাণ করে যে প্রাচীন সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং নদীর ধারা এই শহরটিকে ডুবিয়ে দিয়েছিল।
এখানকার স্থাপনা থেকে বোঝা যায় এটি সমুদ্রবাণিজ্যনির্ভর সমৃদ্ধ শহর ছিল।
⚖️ বিতর্ক
কিছু বিজ্ঞানী বলেন, এই কাঠামো প্রাকৃতিক।
অন্যদের মতে, এগুলো মানুষের তৈরি। তবে সরাসরি ‘কৃষ্ণের দ্বারকা’ কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়।
নতুন ডুবো অনুসন্ধান প্রমাণ করছে, অন্তত প্রাচীন এক বন্দরনগরী এখানে ছিলই।
🕍 বর্তমান দ্বারকা
আজকের দ্বারকা (গুজরাটের জামে নগর জেলার কাছে) হিন্দুদের ৭টি ‘মোক্ষধাম’ তীর্থের একটি।
দ্বারকাধীশ মন্দির (শ্রীকৃষ্ণ মন্দির) বছরে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে টানে।
সমুদ্রগর্ভে দ্বারকা এখনও রহস্য, যা পর্যটক ও গবেষকদের আকর্ষণ করছে।
দর্শনার্থীর জন্য তথ্য
কীভাবে যাবেন:
নিকটতম বিমানবন্দর: জামনগর (প্রায় ১৩৭ কিমি)।
ট্রেনে: দ্বারকা রেলস্টেশন দিল্লি, মুম্বাই, আহমেদাবাদ ইত্যাদি শহরের সঙ্গে সংযুক্ত।
রোডে: রাজ্য সড়ক বা বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়।
🏨 কোথায় থাকবেন:
দ্বারকায় বহু হোটেল, ধর্মশালা ও গেস্ট হাউস আছে।
🕰 ভ্রমণের সেরা সময়:
অক্টোবর থেকে মার্চ।
পৌরাণিক কাহিনী আর আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান মিলে বলছে – হ্যাঁ, একটা সমৃদ্ধ প্রাচীন নগরী সত্যিই এখানে ছিল।
তবে পুরোপুরি ‘কৃষ্ণের দ্বারকা’ কিনা, তার রহস্য এখনো সমুদ্রগর্ভেই লুকানো। তবে পুরাণ আর ইতিহাস মিলিয়ে এক বিস্ময়কর রহস্য দ্বারকা। সমুদ্রের তলায় এখনও লুকিয়ে আছে সেই হারানো শহরের গল্প, যা আমাদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অমূল্য সাক্ষী।
This content is subject to copyright© (Mr. Chanda)
Tuesday, April 15, 2025
Thursday, April 3, 2025
রামকিঙ্কর বেইজ - আধুনিক ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন একজন ভারতীয় ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী, আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শকদের একজন এবং প্রাসঙ্গিক আধুনিকতাবাদের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব। বেইজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অর্থনৈতিকভাবে বিনয়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে রামকিঙ্কর ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতি আঁকতেন। 16 বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চ্যাটার্জির নজরে পড়েন। চার বছর পর রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হন। রামকিঙ্করের বিখ্যাত ভাস্কর্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে প্রভাস সেন, শঙ্খো চৌধুরী, অবতার সিং পানওয়ার, মদন ভাটনগর, ধর্মানি, বলবীর সিং কাট্ট, রাজুল ধারিয়াল এবং সুসান ঘোস একটি ছোট ছেলে হিসাবে, তিনি স্থানীয় কারিগর এবং চিত্র-নির্মাতাদের কাজের সময় দেখে বড় হয়েছিলেন; এবং তার পথে যা আসে তা দিয়ে ছোট মাটির চিত্র এবং পেইন্টিং তৈরি করে। 1938 সালে শান্তিনিকেতনে তৈরি "সাঁওতাল পরিবার" এটি তাকে 1925 সালে, জাতীয়তাবাদী প্রকাশক এবং নতুন ভারতীয় শিল্প আন্দোলনের জন্য রামানন্দ চ্যাটার্জির পরামর্শে শান্তিনিকেতনের আর্ট স্কুল কলা ভাবনায় তার পথ চিহ্নিত করতে পরিচালিত করেছিল। শান্তিনিকেতনে, নন্দলাল বোসের নির্দেশনায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা আকৃতির মুক্ত বৌদ্ধিক পরিবেশের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, তাঁর শৈল্পিক দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিগন্ত নতুন গভীরতা এবং জটিলতা অর্জন করে। কলা ভবনে পড়াশোনা শেষ করার পর শীঘ্রই তিনি এর অনুষদের সদস্য হন এবং নন্দলাল এবং বিনোদ বিহারী মুখার্জির সাথে শান্তিনিকেতনকে স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিরিশের দশকের গোড়ার দিকে তিনি ক্যাম্পাসকে একের পর এক ভাস্কর্যে ভরিয়ে দিতে শুরু করেন, যা বিষয়বস্তুতে উদ্ভাবনী এবং ব্যক্তিগত শৈলীতেও ছিল। এই ধারায় তাঁর প্রথম শ্রেষ্ঠ রচনা ছিল 1938 সালে করা সাঁওতাল পরিবার। এই বৃহত্তর জীবন ভাস্কর্যে তিনি এই অঞ্চলের উপজাতীয় কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, চিত্রগুলিকে আইকনিক উপস্থিতি এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুগ্রহ প্রদান করেছিলেন যা এখনও পর্যন্ত ঈশ্বর এবং শাসকদের চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সিমেন্ট এবং ল্যাটারাইট মর্টার ব্যবহার করে চিত্রগুলিকে মডেল করা, এবং একটি ব্যক্তিগত শৈলীর ব্যবহার যাতে আধুনিক পশ্চিমা এবং ভারতীয় প্রাক-শাস্ত্রীয় ভাস্কর্যের মূল্যবোধগুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল। এই মৌলিক কাজের মাধ্যমে রামকিঙ্কর নিজেকে নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ঋত্বিক ঘটক বিচক্ষণতার সাথে বেইজের উপর 'রামকিঙ্কর' (1975) নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি তাকে একজন রাজনৈতিক আইকন হিসেবে তুলে ধরেন। 2012 সালে ভাস্কর কে.এস. রাধাকৃষ্ণান দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এ রামকিঙ্করের একটি গ্র্যান্ড রেট্রোস্পেকটিভ কিউরেট করেছেন। রামকিঙ্কর বাইজ (বই), বিশিষ্ট শিল্প ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আর. শিব কুমারের বইটি রামকিঙ্কর বাইজের সবচেয়ে ব্যাপক গ্রন্থ বলে মনে করা হয়। তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google. "(ছবি Google থেকে সংগৃহীত) পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
অযোধ্যা, রাম জন্মভূমি (প্রভু শ্রীরামের জন্মস্থান), দৈব শক্তি অনুভব করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি ঈশ্বর নিজেই তৈরি করেছেন। শহরটি পবিত্র সার্যু নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি অন্যতম শ্রদ্ধেয় শহর, কারণ এটি বেশ কয়েকটি মন্দিরের আবাসস্থল।
অযোধ্যা সাকেত নামেও পরিচিত, যা মহাকাব্য গাথা রামায়ণের সাথে যুক্ত একটি প্রাচীন শহর: শ্রী রামের মহান বীরত্বের গল্প এবং তাঁর পিতা রাজা দশরথের শাসন। বর্তমানে, অযোধ্যা শহরে মন্দিরগুলির সবচেয়ে অসাধারণ নির্মাণের কাজ চলছে। অযোধ্যা রামমন্দির নির্মাণের কাজ সেই জমিতে হচ্ছে যেখানে প্রভু শ্রী রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারতের বৃহত্তম মন্দির- এর নকশা কাঠামো অনুসারে, অযোধ্যা রাম মন্দির ভারতের বৃহত্তম মন্দির হতে চলেছে৷ মন্দিরের কাঠামো ডিজাইনকারী সোমপুরা পরিবারের মতে, মন্দিরের উচ্চতা প্রায় 161 ফুট এবং 28,000 বর্গফুট এলাকা।
চলুন জেনে নিই অযোধ্যার রামমন্দির সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য যা এখনও অনেকের কাছেই অজানা। মন্দিরকে আরও মহিমান্বিত করে এমন ঘটনা!
অযোধ্যার রাম মন্দির সম্পর্কে তথ্য: একটি ব্যাপক নির্দেশিকা
1. পবিত্র প্রতিষ্ঠা
রাম মন্দিরের ভিত্তি একটি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। ঝাঁসি, বিথুরি, যমুনোত্রী, হলদিঘাটি, চিতোরগড় এবং স্বর্ণ মন্দিরের মতো উল্লেখযোগ্য স্থান সহ 2587টি অঞ্চলের পবিত্র মাটি নিয়ে গঠিত, প্রতিটি কণা মন্দিরের পবিত্রতায় অবদান রাখে, বিভিন্ন অঞ্চলকে আধ্যাত্মিক ঐক্যের টেপেস্ট্রিতে সংযুক্ত করে।
2. সোমপুরের উত্তরাধিকার
রাম মন্দিরের জাঁকজমকের পিছনের স্থপতিরা বিখ্যাত সোমপুরা পরিবারের অন্তর্গত, যা বিশ্বব্যাপী 100 টিরও বেশি মন্দির তৈরির জন্য বিখ্যাত। উল্লেখযোগ্যভাবে, তাদের অবদান শ্রদ্ধেয় সোমনাথ মন্দিরে প্রসারিত। প্রধান স্থপতি, চন্দ্রকান্ত সোমপুরা, তাঁর ছেলে আশিস এবং নিখিল দ্বারা সমর্থিত, একটি উত্তরাধিকার বুনেছেন যা মন্দির স্থাপত্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিক্রম করে।
3. ইস্পাত নেই, লোহা নেই, এবং শক্তির সহস্রাব্দ
প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতি থেকে একটি অসাধারণ প্রস্থান, ইস্পাত বা লোহার ব্যবহার ছাড়াই রাম মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই দাবি করেন যে পাথরের একচেটিয়া ব্যবহার সহস্রাব্দের জন্য মন্দিরের কাঠামোগত অখণ্ডতা নিশ্চিত করে, যা ঐতিহ্যগত নির্মাণ পদ্ধতি থেকে গৃহীত স্থায়ী শক্তির প্রমাণ।
4. শ্রী রাম ইট
ইতিহাসের কাব্যিক সম্মতিতে, রাম মন্দির নির্মাণে নিযুক্ত ইটগুলি পবিত্র শিলালিপি বহন করে 'শ্রী রাম'। এটি রাম সেতু নির্মাণের সময় একটি প্রাচীন রীতির প্রতিধ্বনি করে, যেখানে 'শ্রী রাম' নাম ধারণ করা পাথরগুলি জলের উপর তাদের উচ্ছ্বাসকে সহজতর করেছিল। এই ইটের আধুনিক পুনরাবৃত্তি শক্তি এবং স্থায়িত্ব উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
5. শাস্ত্র এবং চৌলুক্য শৈলীর একীকরণ
রাম মন্দিরের স্থাপত্যের ব্লুপ্রিন্ট সাবধানে বাস্তুশাস্ত্র এবং শিল্প শাস্ত্রের নীতিগুলি মেনে চলে। উত্তর ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যের গুজরা-চৌলুক্য শৈলীতে ডিজাইন করা, মন্দিরটি প্রাচীন জ্ঞান এবং নান্দনিক করুণার সুরেলা মিশ্রণে অনুরণিত।
6. থাইল্যান্ডের মাটি
আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক বন্ধুত্বের ইঙ্গিতে, 22 জানুয়ারী, 2024-এ রাম লালার অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য থাইল্যান্ড থেকে মাটি পাঠানো হয়েছে। এই বিনিময় ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে, ভগবান রামের উত্তরাধিকারের সর্বজনীন অনুরণনকে শক্তিশালী করে।
7. ভগবান রামের দরবার
রাম মন্দিরের স্থাপত্য আখ্যানটি 2.7 একর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তিনটি তলা জুড়ে ফুটে উঠেছে। নিচতলায় ভগবান রামের জীবনকে জটিলভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তার জন্ম ও শৈশবকে জুড়ে রয়েছে। প্রথম তলায় উঠে, দর্শনার্থীরা ভগবান রামের দরবারের মহিমায় নিমজ্জিত হবে, রাজস্থানের ভরতপুর থেকে উৎপন্ন একটি গোলাপী বেলেপাথর বাঁশি পাহাড়পুর দিয়ে তৈরি একটি চাক্ষুষ দৃশ্য।
8. সংখ্যা উন্মোচন
রাম মন্দিরের সাংখ্যিক মাত্রার মধ্যে পড়ে, এটি 360 ফুট দৈর্ঘ্য এবং 235 ফুট প্রস্থে বিস্তৃত। শিখর সহ মোট উচ্চতা 161 ফুটে পৌঁছেছে। তিনটি তলা এবং মোট 12টি গেট সহ, মন্দিরটি স্থাপত্যের মহিমার একটি মহিমান্বিত প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।
9. পবিত্র নদীর জলের অবদান
5 আগস্টের পবিত্রতা অনুষ্ঠানটি ভারতজুড়ে 150টি নদীর পবিত্র জলের উপস্থিতির দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছিল। এই পবিত্র মিশ্রণ, বিভিন্ন নদী এবং অবস্থান থেকে উৎসারিত, একটি আধ্যাত্মিক মিলনের প্রতীক, যা একটি অনন্য সংমিশ্রণ তৈরি করে যা ভারতের পবিত্র জলের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে।
10. আর্থিক অনুদান এবং হাই-প্রোফাইল সমর্থন
রাম মন্দির নির্মাণ বিভিন্ন মহল থেকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা অর্জন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী, ডেপুটি সিএম কেশব প্রসাদ মৌর্য বাপু এবং আধ্যাত্মিক নেতা মোরারি বাপু সহ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা এই স্মারক প্রকল্পের বাস্তবায়নে যথেষ্ট পরিমাণে অবদান রেখেছেন।
11. উত্তরোত্তর জন্য একটি টাইম ক্যাপসুল
মন্দিরের নির্মাণে একটি বাধ্যতামূলক সংযোজন হল একটি টাইম ক্যাপসুল স্থাপন করা, যা মন্দিরের নীচে মাটির 2000 ফুট নীচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মন্দির, ভগবান রাম এবং অযোধ্যা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে খোদাই করা একটি তামার প্লেটে সজ্জিত এই ক্যাপসুলটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মন্দিরের পরিচয় সংরক্ষণের একটি দূরদর্শী প্রচেষ্টা।
12. পৌরাণিক মন্দিরের উপর অমীমাংসিত সমীক্ষা:
আশ্চর্যজনকভাবে, প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ থেকে জানা যায় যে বাবরি মসজিদটি একটি পূর্ব-বিদ্যমান কাঠামোর উপর নির্মিত হয়েছিল। যদিও কিছু সমীক্ষা এই কাঠামোটিকে ভগবান রামের যুগের বলে মনে করে, ভারতীয় ইতিহাসবিদ সর্বপল্লী গোপাল সহ অন্যরা দাবি করেন যে অযোধ্যার মানব সভ্যতা মাত্র 2800 বছর আগের। পৌরাণিক কাহিনী এবং প্রত্নতত্ত্বের মিলন স্থানটির ঐতিহাসিক বর্ণনায় রহস্যের স্তর যুক্ত করে।
13. সূক্ষ্ম স্তম্ভ এবং নাগর শৈলী নকশা
মন্দিরের নকশায় নগর শৈলীতে কারুকাজ করা 360টি স্তম্ভ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এর দৃষ্টি আকর্ষণকে বাড়িয়ে তুলেছে। বংশী পাহাড়পুর এবং নগর শৈলীর ব্যবহার কাঠামোটিকে একটি অনন্য নান্দনিকতা প্রদান করে, এটিকে কেবল একটি উপাসনালয় নয় বরং স্থাপত্যের সূক্ষ্ম নৈপুণ্যে পরিণত করে।
14. মন্দির শহর পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত তহবিল
রামমন্দির নির্মাণ পুরো অযোধ্যা শহরকে পুনর্নির্মাণের জন্য একটি বিস্তৃত উদ্যোগের সূত্রপাত করেছে। নতুন পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা সহ 500 কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি অযোধ্যাকে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য রেখেছেন।
15. ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টি
তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা, শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের মতে, মন্দিরের নির্মাণ প্রায় সমাপ্তিতে পৌঁছেছে। আগামী 2024 সালের 22 শে জানুয়ারী নাগাদ ভক্তদের জন্য তার দরজা খোলার প্রত্যাশিত, অযোধ্যা রাম মন্দির শুধু অতীতের প্রমাণ হিসাবে নয় বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষার পথপ্রদর্শক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।
অযোধ্যা রামমন্দির একটি নির্মাণ প্রকল্পের চেয়ে বেশি হিসাবে আবির্ভূত হয়; এটি বিশ্বাস, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের উজ্জ্বলতার সঙ্গমের একটি জীবন্ত মূর্ত প্রতীক। নির্মাণের অগ্রগতির সাথে সাথে, মন্দিরটি বিশ্বাসীদের এবং উত্সাহীদের একইভাবে এর বহুমুখী আখ্যানটি অন্বেষণ করার জন্য ইশারা দেয়, যেখানে প্রতিটি ইট এবং শিলালিপি আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক অনুরণনে বদ্ধ একটি গল্প প্রকাশ করে।
এইরকম নতুন নতুন বিষয় বাংলায় পড়ার জন্য আমাদের এই ব্লগ নিয়মিত Follow করুন। ধন্যবাদ।।
চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৭ ||
রামকিঙ্কর বেইজ - আধুনিক ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক
রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন একজন ভারতীয় ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী, আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শকদের একজন এবং প্রাসঙ্গিক আধুনিকতাবাদের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব। বেইজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অর্থনৈতিকভাবে বিনয়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে রামকিঙ্কর ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতি আঁকতেন। 16 বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চ্যাটার্জির নজরে পড়েন।
চার বছর পর রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হন। রামকিঙ্করের বিখ্যাত ভাস্কর্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে প্রভাস সেন, শঙ্খো চৌধুরী, অবতার সিং পানওয়ার, মদন ভাটনগর, ধর্মানি, বলবীর সিং কাট্ট, রাজুল ধারিয়াল এবং সুসান ঘোস একটি ছোট ছেলে হিসাবে, তিনি স্থানীয় কারিগর এবং চিত্র-নির্মাতাদের কাজের সময় দেখে বড় হয়েছিলেন; এবং তার পথে যা আসে তা দিয়ে ছোট মাটির চিত্র এবং পেইন্টিং তৈরি করে।
1938 সালে শান্তিনিকেতনে তৈরি "সাঁওতাল পরিবার"
এটি তাকে 1925 সালে, জাতীয়তাবাদী প্রকাশক এবং নতুন ভারতীয় শিল্প আন্দোলনের জন্য রামানন্দ চ্যাটার্জির পরামর্শে শান্তিনিকেতনের আর্ট স্কুল কলা ভাবনায় তার পথ চিহ্নিত করতে পরিচালিত করেছিল। শান্তিনিকেতনে, নন্দলাল বোসের নির্দেশনায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা আকৃতির মুক্ত বৌদ্ধিক পরিবেশের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, তাঁর শৈল্পিক দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিগন্ত নতুন গভীরতা এবং জটিলতা অর্জন করে।
কলা ভবনে পড়াশোনা শেষ করার পর শীঘ্রই তিনি এর অনুষদের সদস্য হন এবং নন্দলাল এবং বিনোদ বিহারী মুখার্জির সাথে শান্তিনিকেতনকে স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিরিশের দশকের গোড়ার দিকে তিনি ক্যাম্পাসকে একের পর এক ভাস্কর্যে ভরিয়ে দিতে শুরু করেন, যা বিষয়বস্তুতে উদ্ভাবনী এবং ব্যক্তিগত শৈলীতেও ছিল।
এই ধারায় তাঁর প্রথম শ্রেষ্ঠ রচনা ছিল 1938 সালে করা সাঁওতাল পরিবার। এই বৃহত্তর জীবন ভাস্কর্যে তিনি এই অঞ্চলের উপজাতীয় কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, চিত্রগুলিকে আইকনিক উপস্থিতি এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুগ্রহ প্রদান করেছিলেন যা এখনও পর্যন্ত ঈশ্বর এবং শাসকদের চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সিমেন্ট এবং ল্যাটারাইট মর্টার ব্যবহার করে চিত্রগুলিকে মডেল করা, এবং একটি ব্যক্তিগত শৈলীর ব্যবহার যাতে আধুনিক পশ্চিমা এবং ভারতীয় প্রাক-শাস্ত্রীয় ভাস্কর্যের মূল্যবোধগুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।
এই মৌলিক কাজের মাধ্যমে রামকিঙ্কর নিজেকে নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ঋত্বিক ঘটক বিচক্ষণতার সাথে বেইজের উপর 'রামকিঙ্কর' (1975) নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি তাকে একজন রাজনৈতিক আইকন হিসেবে তুলে ধরেন। 2012 সালে ভাস্কর কে.এস. রাধাকৃষ্ণান দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এ রামকিঙ্করের একটি গ্র্যান্ড রেট্রোস্পেকটিভ কিউরেট করেছেন। রামকিঙ্কর বাইজ (বই), বিশিষ্ট শিল্প ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আর. শিব কুমারের বইটি রামকিঙ্কর বাইজের সবচেয়ে ব্যাপক গ্রন্থ বলে মনে করা হয়।
তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.
"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৬ ||
“মধুবনী চিত্র” ভারতের এক অনবদ্য শিল্পশৈলী
মধুবনী চিত্রকলা বহু বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পকলার একটি। বিহার ও নেপালের মিথিলা অঞ্চলে এটি প্রচলিত হওয়ায় একে মিথিলা বা মধুবনী শিল্প বলা হয়। প্রায়শই জটিল জ্যামিতিক নিদর্শন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, এই চিত্রগুলি উৎসব, ধর্মীয় আচার ইত্যাদি সহ বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আচার বিষয়বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পরিচিত। মধুবনী চিত্রগুলিতে ব্যবহৃত রঙগুলি সাধারণত গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে উদ্ভূত হয়। এই রঙগুলি প্রায়শই উজ্জ্বল হয় এবং ভুষা এবং গিরিমাটি মতো রঞ্জকগুলি যথাক্রমে কালো এবং বাদামী তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। সমসাময়িক ব্রাশের পরিবর্তে, পেইন্টিংগুলি তৈরি করতে ডাল, ম্যাচস্টিক ইত্যাদির ব্যবহার এবং এমনকি আঙ্গুলও ব্যবহার করা হয়।
ইতিহাস ও বিবর্তন
মধুবনী চিত্রকলার উৎপত্তি বিহারের মিথিলা অঞ্চলে। মধুবনী চিত্রকলার প্রাথমিক কিছু উল্লেখ হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে পাওয়া যায় যখন সীতার পিতা রাজা জনক তার চিত্রশিল্পীদেরকে তার মেয়ের বিয়ের জন্য মধুবনী চিত্রকর্ম তৈরি করতে বলেন। জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং চিত্রগুলি এই অঞ্চলের ঘরে ঘরে শোভা পেতে শুরু করেছিল। গ্রামের মহিলারা নিজ নিজ বাড়ির দেয়ালে এই ছবি আঁকার চর্চা করতেন। তাদের চিত্রগুলি প্রায়শই তাদের চিন্তা, আশা এবং স্বপ্নকে চিত্রিত করে।
সময়ের সাথে সাথে, মধুবনী পেইন্টিংগুলি উৎসব এবং বিবাহের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানগুলির একটি অংশ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে, এই শিল্পটি শিল্পের অনুরাগীদের আকৃষ্ট করেছিল কারণ অনেক সমসাময়িক ভারতীয় শিল্পী এই শিল্পটিকে বৈশ্বিক মঞ্চে নিয়েছিলেন। প্লাস্টার করা মাটির দেয়ালের ঐতিহ্যগত ভিত্তিটি শীঘ্রই হস্তনির্মিত কাগজ, কাপড় এবং ক্যানভাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যেহেতু পেইন্টিংগুলি একটি সীমিত ভৌগলিক পরিসরে সীমাবদ্ধ, তাই থিম এবং শৈলীও কমবেশি একই রকম।
শৈলী এবং কৌশল
মধুবনী পেইন্টিংগুলি প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা অনুশীলন করা হয়েছিল এবং তাই চিত্রগুলিকে পাঁচটি ভিন্ন শৈলীতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল, যেমন তান্ত্রিক, কোহবার, ভরনি, গোদনা, কাচনি। কিন্তু আজ, এই পাঁচটি ভিন্ন শৈলী সমসাময়িক শিল্পীদের দ্বারা একত্রিত হয়েছে। এই পেইন্টিংগুলিতে ব্যবহৃত থিমগুলি প্রায়শই কৃষ্ণ, রাম, লক্ষ্মী, শিব, দুর্গা এবং সরস্বতীর মতো হিন্দু দেবতার চারপাশে আবর্তিত হয়। এছাড়াও, সূর্য এবং চাঁদের মতো স্বর্গীয় দেহগুলি প্রায়শই মধুবনী চিত্রগুলির কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করে।
রাজকীয় দরবার এবং বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের দৃশ্যের উপর ভিত্তি করে কেউ পেইন্টিংও খুঁজে পেতে পারেন। এই পেইন্টিংগুলিতে জ্যামিতিক নিদর্শনগুলির ব্যবহার বেশ স্পষ্ট। মধুবনী পেইন্টিংগুলিতে এই জটিল গাণিতিক নিদর্শনগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল তা তাদের আরও আকর্ষণীয় এবং বিশেষ করে তোলে।
এই পেইন্টিংগুলি তাদের সরলতার জন্যও পরিচিত, কারণ ব্যবহৃত ব্রাশ এবং রঙগুলি প্রায়শই প্রাকৃতিক উৎস থেকে উদ্ভূত হয়। যদিও পেইন্টিংগুলি মূলত গুঁড়ো চাল, হলুদ থেকে প্রাপ্ত রং, পরাগ, রঙ্গক, নীল, বিভিন্ন ফুল, চন্দন, এবং বিভিন্ন গাছপালা ও গাছের পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এছাড়াও, অনেক প্রাকৃতিক উৎস একত্রিত করা হয় এবং পছন্দসই প্রাপ্ত করার জন্য প্রক্রিয়া করা হয়। রঙগুলি প্রায়শই শিল্পীরা নিজেরাই প্রস্তুত করেন। চিত্রকর্ম শেষ করার পরেও শিল্পীরা যদি খালি জায়গা জুড়ে আসে, তবে তারা সাধারণত ফুল, পশু, পাখি এবং জ্যামিতিক নিদর্শনগুলির মোটিফ দিয়ে সেই খালি স্থানগুলি পূরণ করে। একটি ডবল লাইন সাধারণত সীমানা হিসাবে আঁকা হয়।
তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.
"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৫ ||
চিত্রশিল্পী হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নীতিগুলি ভারতের প্রাচীন ও কালজয়ী দর্শনের গভীরে নিহিত ছিল। তার বিশাল জ্ঞান এবং সৃজনশীল প্রতিভা দিয়ে, তিনি উপনিষদ থেকে তার মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর অবদানের জন্য ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। রূপের জগতে তিনি নিরাকারের মধ্যে দেবত্বের সন্ধান করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ঠাকুরের কল্পনাপ্রসূত ধারা কেবল তাঁর লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর ব্রাশস্ট্রোকগুলি তাঁর গদ্য এবং কবিতার মতোই শক্তিশালী ছিল। ঠাকুর তাঁর চিত্রকর্মকে শেষ বয়সের প্রিয়া (শেষ জীবনের সন্ধ্যায় একটি প্রেম) হিসাবে বর্ণনা করেছেন। একজন প্রতিভাধর চিত্রশিল্পী হিসাবে, "দ্য বার্ড অফ বেঙ্গল" প্রথম ভারতীয় শিল্পী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন যার হাজার হাজার চিত্র রাশিয়া, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রদর্শিত হয়েছিল।
ঠাকুরের শৈল্পিক যাত্রা শুরু হয়েছিল 63 বছর বয়সে, তাঁর জীবনের শেষ 15 বছরে, এই ক্ষেত্রের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও। তা সত্ত্বেও, কবিতা, সাহিত্য এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি তার প্রখর সংবেদনশীলতা তার শৈল্পিক কল্পনাকে অবহিত করেছে এবং ক্যানভাসে তার জীবনের চিত্রণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ল্যান্ডস্কেপ থেকে পাখি এবং প্রাণীর প্রতিকৃতি থেকে বিভিন্ন বিষয়ের অন্বেষণ করেছেন। তাঁর খোলামেলা গল্পগুলির মতোই, ঠাকুরের চিত্রগুলি ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট জায়গা দেয়। এগুলি সূক্ষ্ম রেখা, নিদর্শন এবং রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা তার চিত্রগুলিতে একটি অনন্য ব্যক্তিত্ব দেয়।
নিঃসন্দেহে ঠাকুর প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন। গীতাঞ্জলির শ্লোকগুলিতে তাঁর সর্বৈশ্বরবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দৃশ্যমান। তাঁর পরিবারের খামারের শৈশব স্মৃতি এবং শান্তিনিকেতনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রাকৃতিক জগতের প্রতি তাঁর উপলব্ধিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল যা নিঃসন্দেহে তাঁর লেখা এবং চিত্রকর্মে একইভাবে প্রতিফলিত হয়।
ঠাকুরের ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিংগুলি প্রকৃতির তীক্ষ্ণ, বিস্তারিত, বর্ণনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় না; পরিবর্তে, তারা একটি স্বপ্নময়, সিলুয়েটের মতো গুণের অধিকারী। তার ল্যান্ডস্কেপ প্রায়ই আলো এবং ছায়ার একটি পারস্পরিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত; "সন্ধ্যার আকাশের সোনালি চাঁদোয়া" সহ "ভ্রুকুটি বন", সম্ভবত প্রকৃতির পরিবর্তনশীল মেজাজের প্রতি তার সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে। ল্যান্ডস্কেপগুলিতে সাধারণত ভূমি এবং জলের বিস্তৃত বিস্তৃতির বিপরীতে অন্ধকার গাছের গুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা প্রশান্তি এবং পূর্বাভাসিত রহস্য উভয়ের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, সম্ভবত ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের আকাঙ্ক্ষাও।
ঠাকুর একবার প্রকাশ করেছিলেন যে চিত্রকলার, অন্য যেকোন শিল্পের চেয়ে বেশি, একটি নিরবধি গুণ রয়েছে, তিনি বলেছিলেন "... তাই প্রায়শই আমি মনে করি যে কেবল চিত্রেরই একটি মৃত্যুহীন গুণ রয়েছে"।
মানুষের মুখ ও রূপ আঁকার ঠাকুরের ন্যূনতম শৈলী তার প্রজাদের মনের অবস্থাকে কার্যকরভাবে তুলে ধরে বলে মনে হয়। তার প্রতিকৃতি প্রায়ই দুঃখ, ভয় এবং রহস্য সহ বিভিন্ন আবেগ প্রকাশ করে। বিষয়ের লিঙ্গ নির্বিশেষে, ঠাকুর তাদের শারীরিক চেহারাকে আদর্শ করেননি। তাদের চোখ গভীর দুঃখের কথা বলেছিল এবং তারা অন্তহীন জড়তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। এটা সম্ভব যে এটি ঠাকুরের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর তার নিজের ক্ষতি এবং যন্ত্রণার অভিজ্ঞতার ফলাফল ছিল।
আমরা যদি তার পেস্টিচ পেইন্টিংগুলি দেখি, আমরা লক্ষ্য করব যে তারা বিশিষ্ট জ্যামিতিক নিদর্শনগুলিকে বৈশিষ্ট্যযুক্ত করে যা প্রায়শই পাখি এবং এমনকি প্রাণীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে প্রচলিত উপায়ে নয়। এই কাজগুলির একটি পরাবাস্তব গুণ রয়েছে যা পিকাসোর মতো আধুনিক চিত্রশিল্পীদের শৈলীর কথা মনে করিয়ে দেয়। নিদর্শনগুলি অদ্ভুত এবং গতিশীল এবং ঠাকুর তাদের "সম্ভাব্য প্রাণী" হিসাবে উল্লেখ করেছেন যে তারা শুধুমাত্র "আমাদের স্বপ্নে" অস্তিত্বে আসতে পারে। তার অবচেতন মনকে চালিত করার তার প্রচেষ্টার মাধ্যমে, তিনি এমন একটি রচনা তৈরি করেছেন যা বিদ্বেষপূর্ণ এবং চিন্তা-প্ররোচনামূলক, বাস্তবতা এবং প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে চ্যালেঞ্জ করে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে ঠাকুরের রচনা তাঁর আগ্রহের মতোই বিশাল। বহুবিদ্যাজ্ঞ হিসাবে, তিনি স্বপ্ন এবং বাস্তবতা, আশা এবং নিরাশা, রূপ এবং নিরাকারের সংমিশ্রণ সহ বিভিন্ন মাধ্যমের মাধ্যমে তার ধারণা এবং জ্ঞানকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।
তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.
(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
Saturday, March 29, 2025
চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৪ ||
কালীঘাট পেইন্টিংস - ইতিহাস, বিষয় এবং শৈলী :
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পশ্চিমবঙ্গ কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের আবাসস্থল - দেশের এই অংশ থেকে কিছু শ্রেষ্ঠ শিল্পী ও নেতা আবির্ভূত হয়েছেন। সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকলার জ্ঞানের ভিত্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নিবেদিত আমাদের সিরিজে, আজ আমরা শিল্পের এমন একটি রূপ দেখছি যা পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেছিল, কিন্তু আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত – যদি আপনি কখনও গ্রহণ করেন বিশ্বের সেরা লর্ড কৃষ্ণ পেইন্টিংগুলি ব্রাউজ করার সময়, সম্ভবত আপনি ইতিমধ্যেই একটি কালীঘাট পেইন্টিং দেখেছেন৷
ইতিহাস এবং উৎস :
এটি বিশ্বাস করা হয় যে কালীঘাট চিত্রকলার শৈলীটি 19 শতকের মাঝামাঝি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এটি পট্টচিত্রের শৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। আসল শিল্পীরা আসলে স্ক্রোল পেইন্টার ছিলেন এবং এমন চিত্র তৈরি করেছিলেন যা চারপাশে বহন করা যেতে পারে এবং গল্প বলার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাপড় বা পাতার উপর আঁকা হতো এবং প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় বই থেকে গল্প বলা হতো। তারা তখন এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করত, এই ছবিগুলির সাহায্যে গল্প বলত, নিজেদের নাম, পটুয়া বা যারা কাপড়ে আঁকত তাদের নাম আয় করত।
কালীঘাট নামটির উদ্ভবের কারণ হল এই শিল্পের প্রধান অনুশীলনকারীরা ছিলেন কলকাতার কালীঘাট এলাকার কালীঘাট কালী মন্দিরের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা। শিল্পীরা ছোট ছোট পেইন্টিং তৈরি করেন, এবং অত্যন্ত কম দামে বাজারে নিয়ে আসেন, যা মন্দিরে আসা ভক্তরা স্যুভেনির হিসেবে কিনতে পারেন। প্রদত্ত যে এটিও এমন একটি সময় ছিল যখন মেশিনগুলি ক্রমবর্ধমান ছিল এবং যে কোনও মানুষের প্রচেষ্টার চেয়ে অনেক দ্রুত প্রাচীর সজ্জা আইটেমগুলি পুনরুত্পাদন করতে পারত, শিল্পীদের প্রতিভাকে অতিরিক্ত প্রেরণা দিতে হয়েছিল। কালীঘাট স্কুলের শিল্পীরা ব্যাপক উৎপাদন আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা ও সহায়তা নিয়েছিলেন – তারা কলকারখানায় তৈরি হওয়া জলরঙ এবং কাগজ ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন যাতে আরও কম দামে এটি বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, এবং সাধারণ মানুষ সেটা সহজেই কিনতে পারেন। এবং পরিবর্তিত সময়ের সাথে নিজেদের এবং তাদের শিল্পের রূপকে বিকশিত করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, ব্রিটিশরা এই শিল্পের বিকাশে অনেক সাহায্য করেছিল এবং এমনকি কলকাতা স্কুল অফ আর্ট স্থাপনেও সাহায্য করেছিল, যা বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী শিল্পীকে আকৃষ্ট করেছিল।
সময়ের সাথে সাথে, কালীঘাট চিত্রকলা শৈলীর দুটি খুব স্বতন্ত্র শৈলী আবির্ভূত হয়:
প্রাচ্য - এটিই ছিল আদি শৈলী যা কালীঘাট পটচিত্র চিত্রকলার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল - থিমগুলি বেশিরভাগই কৃষ্ণ এবং দুর্গার গল্পের সাথে যুক্ত ছিল, কারণ তারা ছিল এই অঞ্চলের বিশিষ্ট দেবতা। চৈতন্য মহাপ্রভু এবং তাঁর শিষ্য এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের জীবন থেকে নেওয়া থিমগুলিও ছিল। যাইহোক, থিমগুলো সেখানেই থেমে থাকেনি – ধর্মনিরপেক্ষ থিম এবং চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাও এটিকে বেশ কয়েকবার ক্যানভাসে তুলে ধরেছে।
অক্সিডেন্টাল - আরও আধুনিক সংস্করণ, যা প্রায় একই সময়ে আবির্ভূত হয়েছিল, এটি এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল - এটি শুধুমাত্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ধারণ করেনি, বরং সামাজিক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেও তুলে ধরেছিল।
কালীঘাটের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে মজার বিষয় হল যে তাদের মধ্যে কেউই প্রকৃতপক্ষে চিত্রশিল্পী ছিলেন না এই অর্থে যে এটিকে তাদের প্রাথমিক কর্মসংস্থান হিসাবে দেখা হয়েছিল - তারা ছিল ছুতোর, কুমোর এবং পাথর শ্রমিক যারা এই চিত্রগুলিকে আয়ের অতিরিক্ত উৎস হিসাবে তৈরি করেছিলেন।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং প্রধান বিষয়:
যখন পেইন্টিং স্কুল শুরু হয়েছিল, তখন পেইন্টিংগুলি অনেক ছোট ছিল এবং সম্ভবত একক দেবতার - তাই উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সেই দিনগুলিতে একজন ক্রেতা হতেন, তবে আপনি একমাত্র তাকে কেন্দ্র করে বা একটি দেবী দুর্গার চিত্রকর্ম কিনতে সক্ষম হতেন। চিত্রকলার একমাত্র নায়ক হিসেবে ছিলেন কৃষ্ণ। সময়ের সাথে সাথে, রেডিমেড কাগজের ব্যবহারে, চিত্রগুলিতে আরও অক্ষর যুক্ত হতে শুরু করে এবং চিত্রের অন্যান্য শৈলীর প্রভাবও পড়তে থাকে।
পেইন্টিংগুলির একটি অনন্য সচিত্র রূপ ছিল, যা প্রায়শই আলো এবং ছায়া ব্যবহার করে বা রৈখিক আকারে চিত্রিত করা হত। যাইহোক, লিনিয়ার ফর্মটি সহজ ছিল, কারণ সাধারণ ব্রাশ এবং হ্যান্ড স্ট্রোক ব্যতীত কোনও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়নি। যাইহোক, অনেক স্পষ্ট কনট্যুর ছিল, কিন্তু একটি পটভূমির অভাব ছিল। রঙের প্রয়োগ একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে করা হয় এবং একবারে একটি করে – তাই উদাহরণস্বরূপ, মুখ এবং দৃশ্যমান অঙ্গগুলি প্রথমে আঁকা হয় এবং তারপরে অন্যান্য সমস্ত বিবরণ পূরণ করা হয়।
চিত্রশিল্পীরা এমন ছিলেন না যাদের বাইরের জগতের অনেক প্রকাশ ছিল - তারা নিজের চারপাশে যা দেখেছিল তাই এঁকেছিলেন। কালীঘাটের চিত্রকর্মগুলি নম্র মাছ থেকে ভিন্ন হতে পারে, যা বিড়ালের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের খাবারের অবিচ্ছিন্ন অংশ ছিল। দুর্গা এবং কৃষ্ণ সহ ধর্মীয় রূপগুলি নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল যেমন পুরোহিতরা আশেপাশের মন্দিরগুলিতে পূজা পরিচালনা করতেন। প্রকৃতপক্ষে, এমনকি দেবতাদেরকেও সাধারণ মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল - একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় চিত্রকর্মে, কালীঘাট চিত্রশিল্পীরা শিব, পার্বতী এবং গণেশকে একটি সাধারণ পরিবার হিসাবে দেখিয়েছেন। গণেশ যখন তার বাবার কাঁধে চড়ে, পার্বতী একজন সাধারণ বাঙালি মহিলার মতো পোশাক পরে তার বিরক্তিকর ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সেই সময়ে কলকাতায় বসবাসকারী ধনী জমিদারদের ছবিও ছিল, এবং তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার চিত্র সাধারণ ছিল। আপনি চিত্রগুলিতে ব্রিটিশদের একটি উপস্থিতিও দেখতে পারেন।
ব্যবহৃত উপকরণ এবং তৈরি:
পেইন্টিংগুলি সর্বদা খুব মৌলিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল - কাঠবিড়ালি বা ছাগলের চুল ব্যবহার করে ব্রাশগুলি তৈরি করা হয়, রঙগুলি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে নেওয়া হয়। বাতি জ্বালিয়ে রেখে যাওয়া কাঁচ থেকে কালো, ফুল ও পাতা থেকে লাল ও সবুজ, হলুদ থেকে হলুদ ইত্যাদি। শুকনো গুঁড়ো রঙ তৈরি করতে সেগুলি জল বা আঠার সাথে মিশ্রিত করা হয়। যাইহোক, যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, জলরং জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে ওঠে। এবং ধীরে ধীরে কালীঘাট পেইন্টিং জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.
"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
Thursday, March 27, 2025
চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৩ ||
রাজা রবি বর্মার "শকুন্তলা" সম্পর্কে গভীর তথ্য
শিল্পী : রাজা রবি বর্মা
29 এপ্রিল 1848 সালে কেরালার ত্রিভান্দ্রামের কিলিমানুরে জন্মগ্রহণকারী রবি ত্রাভাঙ্কোরের রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন। শুরুতে, রবির কাকা রাজা রাজা ভার্মা, যিনি একজন ভালো শিল্পীও ছিলেন, তাকে চিত্রকলার মূল বিষয়গুলি শিখিয়েছিলেন। রবির বয়স যখন চৌদ্দ, মহারাজা আয়িলিয়াম থিরুনাল তাকে ত্রাভাঙ্কোরে নিয়ে যান এবং তাকে রাজকীয় চিত্রশিল্পী রাম স্বামী নাইডুর অধীনে রাখেন। কোর্ট পেইন্টারের অধীনে একজন শিক্ষানবিশ হওয়ার তিন বছর পর, রবি একজন ব্রিটিশ পেইন্টার থিওডোর জেনসনের অধীনে পেইন্টিং শিখতে শুরু করেন।
আমরা যদি সেই সময়ের দিকে তাকাই যখন শিল্পী শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন, সেই সময়টি ছিল এমন একটি সময় যখন ভারত তার শৈল্পিক যাত্রায় প্রায় একটি নতুন আকার নিয়েছিল, ঐতিহ্যগত চিত্রকলাকে দূরে রেখে এবং নিজেকে আধুনিক শিল্পে জড়িত করেছিল। তাই, একটি নতুন কৌশল প্রতিষ্ঠা করার জন্য, রবি প্রথম শিল্পী হয়ে ওঠেন যিনি তেল রং ব্যবহার করেন, যার কারণে তিনি সেই সময়ের একজন বিতর্কিত শিল্পী হয়ে ওঠেন, কারণ ঠাকুর পরিবার ভারতীয় শিল্পকে পাশ্চাত্যকরণ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। শুরুতে, রেমব্রান্ট রবিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যা শিল্পীকে তার ক্যানভাসে ইউরোপীয় শিল্প কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পরিচালিত করেছিল। যাইহোক, তিনি যে বিষয়গুলি বেছে নিয়েছিলেন তা সর্বদা ভারতীয় দেবী এবং পৌরাণিক ব্যক্তিত্ব ছিল।
রাজা রবি বর্মা ভারতে স্বীকৃত হন, যার ফলে তিনি ভারতীয় আভিজাত্য এবং ইউরোপীয়দের কাছ থেকে কমিশন পান। রবি মাদ্রাজ, ত্রিভান্দ্রম, বরোদা, উদয়পুর এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজাদের প্রতিকৃতি তৈরি করেন। তাঁর কিছু সেরা কাজ, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে শকুন্তলার প্রেমপত্র, বিশ্বামিত্র-মেনকা, মোহিনী, দময়ন্তী এবং শ্রী রামা ভ্যাঙ্কুইশিং দ্য সি।
1893 সালে, এই চিত্রগুলি প্রথম কেরালার বাইরে প্রদর্শিত হয়েছিল, যা জনসাধারণকে রবির শৈল্পিক ক্ষমতা দেখতে পরিচালিত করেছিল। উল্লেখ করার মতো নয়, এটি একজন শিল্পী হিসাবে একটি শতাব্দীর জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রশংসনীয় অর্জন।
শিল্পকর্মের ইতিহাস এবং পটভূমি
আমরা যা জানি, বরোদার গায়কওয়ার (সয়াজি রাও) 1888 থেকে 1890 সালের মধ্যে চৌদ্দটি চিত্রকর্মের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিলেন। সেগুলি মহাভারত এবং রামায়ণের চরিত্র ও গল্পের অন্তর্গত। "শকুন্তলা " ছিলেন কমিশনে অন্তর্ভুক্তদের একজন। এটি বাজার পেইন্টিং স্কুলের অধীনে আসে, যা রোমান এবং গ্রীক শিল্প থেকে এর প্রভাব পেয়েছিল। এখন চৌদ্দটি চিত্রকর্ম ছিল নল দময়ন্তী, রাধা এবং মাধব, ভরত এবং সিংহ শাবক, অর্জুন এবং সুভদ্রা, বিশ্বামিত্র এবং মেনকা, শান্তনু এবং গঙ্গা, কংস মায়া, দ্রৌপদীর ডিরোবিং, হরিশচন্দ্র এবং তারামতি, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট, সীতা স্বয়ম্বরম, কৃষ্ণ, দেবকী ও কৃষ্ণ, শান্তনু ও সত্যবতীর জন্ম। তাদের সকলের জন্য শিল্পীর দ্বারা নেওয়া ফি ছিল 50,000 রুপি (একটি ভাল আকারের হীরার মূল্য সেই সময়ে 1000 টাকা)।
এই কমিশনের জন্য রবিকে পোশাক, আচ্ছাদন এবং স্থানীয় সাজসজ্জা অধ্যয়নের জন্য ভারতজুড়ে ভ্রমণ করতে হয়েছিল। যেহেতু শিল্পী যতটা সম্ভব বাস্তবতার সাথে তার চিত্রগুলি রচনা করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে দর্শকরা কখনই বিদেশী উপাদানগুলি দেখতে পাবে না। তার ভাই, রাজা রাজা ভার্মার সাথে, তিনি গল্পের প্লট নির্ধারণ এবং চরিত্রগুলিকে উন্নত করতে অসংখ্য সংস্কৃত গ্রন্থ এবং মহাকাব্য পড়েছিলেন। এটা জানা গেছে যে "শকুন্তলার" মডেল ছিলেন প্রেসের ফোরম্যানের আত্মীয় রাজীবাই মূলগাভকর।
শকুন্তলার বিষয়বস্তু
1. শকুন্তলা :
রবি শকুন্তলাকে জাফরান পোশাকে জুঁই ফুলের অলংকরণ হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন। কালিদাস তাঁর নাটকে ঠিক তেমনই এক শকুন্তলাকে চিত্রিত করেছেন, যা শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে আয়ত্ত করেছেন। তার একটি হাত তার বন্ধুর পিঠে এবং আরেকটি তার পায়ের কাঁটা সরানোর জন্য, সে একেবারে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকায়। তার উপস্থিতির এক ঝলকানের বিশুদ্ধতম ইচ্ছার সাথে তার অভিব্যক্তিগুলি শান্ত এবং ঐশ্বরিক। তার মুখে তীক্ষ্ণ আলো পড়ছে। শাড়ির স্বচ্ছ ভাঁজগুলি একজন মহিলার শরীরের যে কমনীয় ও আসল রূপ তা বজায় রেখেছে।
2. একটি ফুলের ঝুড়ি হতে মহিলা :
ভদ্রমহিলার একটি ঝুড়িতে ফুল রয়েছে, তার বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় তার মুখ প্রকাশ করা হয়নি। তিনি একটি ব্লাউজ এবং ধুতি পরিহিত যা সাধারণত গ্রামের মেয়েরা পরিধান করে, যা সেই সময়ের ভারতীয় পোশাককে তুলে ধরেছে। তার চুলের খোঁপা, গোলাপী এবং হালকা ধূসর রঙের পোশাক , রচনাটিকে আরও উষ্ণ এবং সুন্দর করে তোলে।
3. অন্য মহিলা :
ভদ্রমহিলা তার বন্ধুর মতো তার পোশাকের সাথে একটি জলের পাত্র ধরে রেখেছেন। সে হাসে যখন সে তার অন্য বন্ধুর সাথে শকুন্তলাকে জ্বালাতন করে।
তারা সবাই একটি বনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে যখন হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড় এবং লতাপাতা এবং গাছগুলি স্থানটি পূরণ করে।
শকুন্তলা পেইন্টিং-এর বিশ্লেষণ
1. লাইন :
"শকুন্তলা" চিত্রকলায় দেখতে পাওয়া যায়, স্বতন্ত্র এবং সূক্ষ্ম কনট্যুর রেখাগুলি প্রকৃতির চিত্র এবং বস্তুর মধ্যে প্রতিটি উপাদানের পরিচয়কে আলাদা করে। দাঁড়িয়ে থাকা চিত্র, একটি লাঠি এবং একটি গাছের গুঁড়ির আকারে উল্লম্ব রেখাগুলি দৃশ্যের জোরালো স্থিতিশীলতা স্থাপন করে। তদুপরি, শকুন্তলার দৃষ্টি একটি সরল অনুভূমিক রেখার সাথে আসে, যা দুষ্মন্তের সাথে তার সম্পর্কের প্রশান্তি নির্দেশ করে।
2. আলোক-প্রপাত এবং মান :
চিত্রটি চিত্র এবং প্রকৃতির বেশিরভাগ অংশের উজ্জ্বল আলোকসজ্জার সাথে তীব্র বৈপরীত্য তৈরি করে। এটি মৃদু গ্রেডেশনের মাধ্যমে যা সমগ্র রচনাকে এক জায়গায় একত্রিত করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দূরত্বে মাটিতে তীক্ষ্ণ সূর্যালোক রয়েছে, যেখানে পরিসংখ্যানের কয়েকটি অংশ আলো এবং ছায়ায় জ্বলছে।
3. রঙ বিশ্লেষণ :
শকুন্তলা সবুজ উষ্ণ রঙে পূর্ণ, একটি আমন্ত্রণমূলক পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়। রঙের ব্যবহারে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রকাশভঙ্গি, যেমন শকুন্তলার জাফরান শাড়ি, লাঠি নিয়ে হাঁটতে থাকা বৃদ্ধের সাদা চাদর।
উপসংহার
"শকুন্তলা" সম্পর্কিত, অসংখ্য উপাদান এবং উপাদান এর উৎকর্ষে অবদান রাখে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে আমরা এই অসাধারণ রচনাটির মাধ্যমে মহিলাদের সামাজিক পোশাক এবং শর্তগুলি জানলাম। কালিদাসের সংস্কৃত নাটকটি প্রজন্মের দ্বারা বোঝার জন্য কোথাও কঠোর ছিল, তবে এই চিত্রটি প্রেম এবং সৌন্দর্যের স্পষ্টতা দেয় যা আমরা এক ঝলক দিয়ে অনুভব করতে পারি।
তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.
"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।
Featured Posts
সখারাম গণেশ পণ্ডিত: এক ভারতীয় যিনি আমেরিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ইতিহাস লিখেছিলেন
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যখন আমাদের দেশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়ছিল, তখন এক ভারতীয় যুবক হাজার মাইল দূরে আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের...
Popular Posts
-
INDOLOGY- Is a subject. But here it is for talking about the heavenly Earth in coming days............. .....PLEASE BECOME A FOLLOWER ...

.jpg)
.jpeg)
%20(9).jpeg)
%20(14).jpeg)
.jpeg)
_-_Hindu_First_Rice_Eating_Ceremony.jpeg)
%20(3).jpeg)
%20(1).jpeg)




.jpeg)






