Translate

Showing posts with label Bengal. Show all posts
Showing posts with label Bengal. Show all posts

Sunday, August 17, 2025

অন্নপ্রাশন: কেন শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানো হয় পূজার মাধ্যমে



মানবজীবনের প্রতিটি ধাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাকে বাঙালি সমাজে উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো অন্নপ্রাশন—যেখানে শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানো হয় পূজার মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠান শুধু খাদ্যাভ্যাসের সূচনা নয়, বরং শিশুর শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক।

 

অন্নপ্রাশন কি?

অন্নপ্রাশন শব্দের অর্থ হলো—“অন্ন গ্রহণ”। সাধারণত ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে যখন শিশুর দাঁত গজাতে শুরু করে এবং সে মায়ের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তখন পরিবারে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে সাধারণত ষষ্ঠ মাসে এবং মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে পঞ্চম মাসে পালন করার রীতি প্রচলিত।

 

প্রাচীন বেদীয় উল্লেখ

• গৃহ্যসূত্র ও ধর্মশাস্ত্রে অন্নপ্রাশন – বেদ-উত্তরকালের গৃহ্যসূত্রে অন্নপ্রাশনকে “ষোড়শ সংস্কার” (মানুষের জীবনের ১৬টি প্রধান ধর্মীয় আচার) এর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।


• মনুস্মৃতি – মনুস্মৃতিতেও অন্নপ্রাশনের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানোর সময় মন্ত্রপাঠ ও দেবতাদের আহ্বান করতে হবে।


• অর্থ – প্রাচীন ভারতীয়রা বিশ্বাস করতেন, প্রথম অন্ন শিশুর ভবিষ্যৎ দেহ-মন গঠনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই একে পূর্ণ আচার মেনে করা জরুরি।

 

ধর্মীয় ব্যাখ্যা

• অন্নই ব্রহ্ম – বেদে বলা হয়েছে, “অন্নং ব্রহ্ম” অর্থাৎ অন্নই ব্রহ্ম। তাই প্রথম অন্নগ্রহণকে পবিত্র করে পূজার মাধ্যমে সূচনা করা হয়।


• দেবতার আশীর্বাদ – অনুষ্ঠানে দেব-দেবীর পূজা করা হয় যাতে শিশুর জীবনে অন্নের অভাব না হয় এবং সে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে।

• পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা – অনেক পরিবারে এই সময়ে পিতৃপুরুষদের নাম  স্মরণ করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, তাঁদের আশীর্বাদে শিশুর জীবনে সমৃদ্ধি আসে।

 

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা

শিশুর সামাজিক পরিচিতি – অন্নপ্রাশনের মাধ্যমে শিশুকে সমাজে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্যগ্রহণকারীরূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে অনুষ্ঠানের সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা হয়।


উৎসবের আনন্দ – বাঙালি জীবনে প্রতিটি আচার উৎসবমুখর। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পারিবারিক মিলনমেলা ঘটে, যা সমাজ-সংস্কৃতির অংশ।

 ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত – কিছু পরিবারে অন্নপ্রাশনের সময় শিশুর সামনে কলম, বই, টাকা, গয়না ইত্যাদি রাখা হয়। শিশু যেটি বেছে নেয়, সেটিকে তার ভবিষ্যৎ প্রবণতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

• শারীরবৃত্তীয় প্রস্তুতি – ছয় মাস বয়সের পর থেকে শুধু মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টির জন্য যথেষ্ট হয় না। এ সময় শিশুর শরীর অতিরিক্ত শক্তি ও পুষ্টি চায়, তাই প্রথমবার শক্ত খাবার শুরু করার জন্য এই সময়কে বেছে নেওয়া হয়।


• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি – ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে হয়। অন্নপ্রাশনের মাধ্যমে শিশুকে শক্ত খাবারের জগতে প্রবেশ করানো হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়ক।


• পরিবারের অংশগ্রহণ – বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, শিশুর খাদ্যাভ্যাসের সূচনায় পরিবার সকলে মিলে মনোযোগ দেয়। এতে অভিভাবকরা শিশুর খাদ্যগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে।

 

অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা

• চীনে – চীনে শিশু ছয় মাস বা এক বছর পূর্ণ করলে “Zhuazhou” নামে একটি অনুষ্ঠান হয়, যেখানে শিশুর সামনে নানা জিনিস রাখা হয়। যা ধরে, সেটি তার ভবিষ্যতের প্রতীক বলে মনে করা হয়।


• জাপানে – জাপানে “Okuizome” নামক একটি অনুষ্ঠান আছে। শিশুর জন্মের ১০০ দিন পর তাকে প্রতীকীভাবে খাবার খাওয়ানো হয়, যাতে সারাজীবন তার অন্নের অভাব না হয়।


• পশ্চিমে – পাশ্চাত্য দেশে শিশুর প্রথম খাবার শুরু করার নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নেই, তবে পরিবারিক উৎসব হিসেবে “baby’s first solid food” কে অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে পালন করে।

 

অন্নপ্রাশন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি শিশুর জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক রীতি, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তি—সবকিছু একসাথে মিশে আছে। প্রাচীন বেদীয় শাস্ত্রের উল্লেখ থেকে শুরু করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পর্যন্ত—সবই প্রমাণ করে যে এই আচার শুধু কুসংস্কার নয়, বরং শিশুর সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবনের ভিত্তি স্থাপনের একটি উপায়।

Monday, July 28, 2025

Why is there a tradition in Hinduism of immersing idols of gods or goddesses in water?






In the Hindu culture of the Indian subcontinent, the immersion (visarjan) of idols of gods or goddesses in water is an ancient ritual rich with deep meaning. It is not merely a religious custom, but rather carries profound philosophical insights, ecological awareness, and life lessons for humanity. This essay discusses the reasons, significance, and both immediate and long-term impacts of this practice.

 Reflection of the cycle of creation and dissolution

Hindu philosophy holds that the world is impermanent; everything that has been created will eventually decay or dissolve. Idols of deities are usually made from river clay, straw, wood, and other natural materials. At the end of worship, immersing these idols back into water returns them to the lap of nature. This reflects nature’s eternal cycle of creation, preservation, and dissolution, reminding humans that all aspects of life are transient.

God is omnipresent — not limited to idols

In Hindu thought, God does not reside solely within an idol but pervades all of existence. Through worship, devotees focus on a specific form of God; through immersion, it is expressed that God once again merges into everything around us, into every part of nature. This helps shift the mind of devotees from 'idol worship' to 'spiritual worship' or devotion beyond form.

The lesson of detachment and renunciation

During festivals and worship, deep attachment and emotion develop in the hearts of devotees towards the deity. Through immersion, devotees learn to free themselves from this attachment. The lesson is to know how to let go of beloved things or people when the time comes, which helps maintain balance in life.

Aspect of ecological balance

According to ancient practice, idols were made from Ganga clay, straw, wood, and natural colors, which, when immersed in rivers, would not harm the environment. This created an eco-friendly tradition of returning natural materials back to nature. Although nowadays the use of chemical colors and plaster of Paris has raised environmental concerns, the original purpose of the ritual was to protect and respect nature.

Conclusion of the festival and new beginnings

Immersion formally marks the end of the festival. It is also a kind of mental preparation, where after days of joy and devotion, people return to their daily lives inspired. Within this conclusion lies the hope and anticipation for the next year’s celebration.



Immersing idols of gods or goddesses in water is not merely a ritual but carries a deep philosophical message, respect for nature, and a profound lesson for human life. It teaches us that all creation will one day dissolve, that God is omnipresent, and that humanity’s relationship with nature is eternal. Thus, immersion reminds us that true peace lies in renunciation, and the real beauty of life is found in detachment.

Wednesday, July 23, 2025

Anjali — More Than Flowers: The Heart of Indian Spiritual Tradition





Whether it’s Durga Puja or any other ritual, offering anjali at the feet of the Goddess is an integral part of our culture. Many people think anjali simply means holding flowers in hand while reciting mantras. But in truth, anjali is much more than just a handful of flowers; it is the expression of our devotion, humility, and ultimate surrender. While this ritual appears graceful on the outside, it holds deep spiritual and philosophical significance within.

🌸 The meaning of the word ‘Anjali’

The word anjali comes from the Sanskrit root “anj”, which means “to smear” or “to cover.” Over time, it came to signify the special cup-like shape formed by joining both palms together — called hastaputa — in which we offer something sacred (arghya). Thus, anjali is not merely the flowers we hold; it is the sacred vessel made by our own hands, in which we offer our mind, heart, and consciousness.

🪷 Not just flowers, but surrender

Anjali is offered to the deity — but the deity doesn’t really need anything from us. The true meaning lies in our act of surrender: letting go of pride, greed, anger, envy, and inner conflict at the feet of the Divine. The flowers are merely symbols; the real offering is the purity of our heart and our self-restraint.

The threefold Anjali: its spiritual interpretation

During Durga Puja, anjali is offered three times along with sacred chants. These three rounds of anjali symbolize our prayer for purification in thought, word, and deed — so that we may attain not only external but also inner purity.

First anjali: the resolve to rid the body of impurity
Second anjali: the prayer to cleanse the mind of negative thoughts
Third anjali: the prayer to be freed from harsh or hurtful words

 Social and psychological aspects

Anjali is usually offered collectively, by many devotees at once. This creates a sense of shared devotion and emotional connection. In that moment, people feel each other’s presence and grow closer as a community. Bowing our heads in anjali teaches us to let go of our ego and pride.

Anjali as the language of surrender
Anjali is not merely an offering of flowers; it is an act of complete surrender. When we offer anjali at the feet of the Goddess, we silently say:

> “Mother, whatever flaws lie within me, I surrender them to you. Please teach me to become a truly good human being.”


This is what anjali teaches us that the greatest gift we can offer to the Divine is a pure heart and a selfless soul.

Saturday, July 12, 2025

দ্বারকা – এক হারানো পৌরাণিক শহরের গল্প




দ্বারকা (Dwarka) শব্দের অর্থই হল ‘দ্বার’ বা ‘দ্বারকা’ মানে ‘গেটওয়ে’। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এটি ছিল শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী, যিনি মথুরা ছেড়ে সমুদ্রের ধারে এক দুর্ভেদ্য নগরী গড়েছিলেন।



🕉️ পুরাণে দ্বারকা

মহাভারত এবং হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী, কৃষ্ণ যখন মথুরায় জরাসন্ধের আক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইলেন, তখন সমুদ্রের জলে এক নতুন শহর তৈরি করলেন – সেটিই দ্বারকা।

বলা হয়, দ্বারকা ছিল এক বিশাল দুর্গনগরী, সোনার প্রাসাদ, মণিমুক্তার দেয়াল আর বিস্তৃত বন্দর ছিল।

কৃষ্ণের মৃত্যুর পরে, পৌরাণিক গল্পে বলা হয় দ্বারকা সমুদ্রগর্ভে ডুবে যায়।



🔍 প্রাচীন গ্রন্থ ও বিদেশী বর্ণনা

গ্রীক এবং রোমান পর্যটক বা বণিকদের রেকর্ডে পশ্চিম ভারতের বন্দর নগরী হিসেবে দ্বারকার উল্লেখ আছে।

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ও কিছু আরব পর্যটক দ্বারকার সমুদ্রপথের বাণিজ্যের কথা বলেছেন।



🌊 আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে?

🧭 আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)

১৯৮৩ সালে ভারতের ASI ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশিয়ানোগ্রাফি (NIO) সমুদ্রতলে প্রথম বড়সড় অনুসন্ধান চালায়।

গুজরাট উপকূলে বেত দ্বারকা (Bet Dwarka) ও দ্বারকা শহরের কাছে ৩০-৪০ ফুট গভীরে স্থাপনা, নোঙরের খুঁটি, দেয়ালের অংশ, পাথরের ব্লক, মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া যায়।

কার্বন ডেটিংয়ে এদের বয়স ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে।

কিছু পণ্ডিত বলেন, এগুলোই পৌরাণিক দ্বারকার অবশিষ্টাংশ।


 

🔍 আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান

সমুদ্রের নিচে পাওয়া কাঠামোগুলি প্রমাণ করে যে প্রাচীন সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং নদীর ধারা এই শহরটিকে ডুবিয়ে দিয়েছিল।

এখানকার স্থাপনা থেকে বোঝা যায় এটি সমুদ্রবাণিজ্যনির্ভর সমৃদ্ধ শহর ছিল।





⚖️ বিতর্ক

কিছু বিজ্ঞানী বলেন, এই কাঠামো প্রাকৃতিক।

অন্যদের মতে, এগুলো মানুষের তৈরি। তবে সরাসরি ‘কৃষ্ণের দ্বারকা’ কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়।

নতুন ডুবো অনুসন্ধান প্রমাণ করছে, অন্তত প্রাচীন এক বন্দরনগরী এখানে ছিলই।



🕍 বর্তমান দ্বারকা

আজকের দ্বারকা (গুজরাটের জামে নগর জেলার কাছে) হিন্দুদের ৭টি ‘মোক্ষধাম’ তীর্থের একটি।

দ্বারকাধীশ মন্দির (শ্রীকৃষ্ণ মন্দির) বছরে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে টানে।

সমুদ্রগর্ভে দ্বারকা এখনও রহস্য, যা পর্যটক ও গবেষকদের আকর্ষণ করছে।

 

দর্শনার্থীর জন্য তথ্য

 

 কীভাবে যাবেন:

 

নিকটতম বিমানবন্দর: জামনগর (প্রায় ১৩৭ কিমি)।

 

ট্রেনে: দ্বারকা রেলস্টেশন দিল্লি, মুম্বাই, আহমেদাবাদ ইত্যাদি শহরের সঙ্গে সংযুক্ত।

 

রোডে: রাজ্য সড়ক বা বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়।

 

🏨 কোথায় থাকবেন:

 

দ্বারকায় বহু হোটেল, ধর্মশালা ও গেস্ট হাউস আছে।

 

🕰 ভ্রমণের সেরা সময়:

 

অক্টোবর থেকে মার্চ।

 পৌরাণিক কাহিনী আর আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান মিলে বলছে – হ্যাঁ, একটা সমৃদ্ধ প্রাচীন নগরী সত্যিই এখানে ছিল।
তবে পুরোপুরি ‘কৃষ্ণের দ্বারকা’ কিনা, তার রহস্য এখনো সমুদ্রগর্ভেই লুকানো। তবে পুরাণ আর ইতিহাস মিলিয়ে এক বিস্ময়কর রহস্য দ্বারকা। সমুদ্রের তলায় এখনও লুকিয়ে আছে সেই হারানো শহরের গল্প, যা আমাদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অমূল্য সাক্ষী।

 

 This content is subject to copyright© (Mr. Chanda)

Thursday, April 3, 2025

রামকিঙ্কর বেইজ - আধুনিক ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক  রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন একজন ভারতীয় ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী, আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শকদের একজন এবং প্রাসঙ্গিক আধুনিকতাবাদের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব।  বেইজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অর্থনৈতিকভাবে বিনয়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  কিশোর বয়সে রামকিঙ্কর ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতি আঁকতেন।  16 বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চ্যাটার্জির নজরে পড়েন। চার বছর পর রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন।  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হন।  রামকিঙ্করের বিখ্যাত ভাস্কর্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে প্রভাস সেন, শঙ্খো চৌধুরী, অবতার সিং পানওয়ার, মদন ভাটনগর, ধর্মানি, বলবীর সিং কাট্ট, রাজুল ধারিয়াল এবং সুসান ঘোস একটি ছোট ছেলে হিসাবে, তিনি স্থানীয় কারিগর এবং চিত্র-নির্মাতাদের কাজের সময় দেখে বড় হয়েছিলেন;  এবং তার পথে যা আসে তা দিয়ে ছোট মাটির চিত্র এবং পেইন্টিং তৈরি করে। 1938 সালে শান্তিনিকেতনে তৈরি "সাঁওতাল পরিবার"  এটি তাকে 1925 সালে, জাতীয়তাবাদী প্রকাশক এবং নতুন ভারতীয় শিল্প আন্দোলনের জন্য রামানন্দ চ্যাটার্জির পরামর্শে শান্তিনিকেতনের আর্ট স্কুল কলা ভাবনায় তার পথ চিহ্নিত করতে পরিচালিত করেছিল।  শান্তিনিকেতনে, নন্দলাল বোসের নির্দেশনায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা আকৃতির মুক্ত বৌদ্ধিক পরিবেশের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, তাঁর শৈল্পিক দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিগন্ত নতুন গভীরতা এবং জটিলতা অর্জন করে।  কলা ভবনে পড়াশোনা শেষ করার পর শীঘ্রই তিনি এর অনুষদের সদস্য হন এবং নন্দলাল এবং বিনোদ বিহারী মুখার্জির সাথে শান্তিনিকেতনকে স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।  তিরিশের দশকের গোড়ার দিকে তিনি ক্যাম্পাসকে একের পর এক ভাস্কর্যে ভরিয়ে দিতে শুরু করেন, যা বিষয়বস্তুতে উদ্ভাবনী এবং ব্যক্তিগত শৈলীতেও ছিল। এই ধারায় তাঁর প্রথম শ্রেষ্ঠ রচনা ছিল 1938 সালে করা সাঁওতাল পরিবার। এই বৃহত্তর জীবন ভাস্কর্যে তিনি এই অঞ্চলের উপজাতীয় কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, চিত্রগুলিকে আইকনিক উপস্থিতি এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুগ্রহ প্রদান করেছিলেন যা এখনও পর্যন্ত ঈশ্বর এবং শাসকদের চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সিমেন্ট এবং ল্যাটারাইট মর্টার ব্যবহার করে চিত্রগুলিকে মডেল করা, এবং একটি ব্যক্তিগত শৈলীর ব্যবহার যাতে আধুনিক পশ্চিমা এবং ভারতীয় প্রাক-শাস্ত্রীয় ভাস্কর্যের মূল্যবোধগুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।  এই মৌলিক কাজের মাধ্যমে রামকিঙ্কর নিজেকে নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।  ঋত্বিক ঘটক বিচক্ষণতার সাথে বেইজের উপর 'রামকিঙ্কর' (1975) নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি তাকে একজন রাজনৈতিক আইকন হিসেবে তুলে ধরেন।  2012 সালে ভাস্কর কে.এস.  রাধাকৃষ্ণান দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এ রামকিঙ্করের একটি গ্র্যান্ড রেট্রোস্পেকটিভ কিউরেট করেছেন।  রামকিঙ্কর বাইজ (বই), বিশিষ্ট শিল্প ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আর. শিব কুমারের বইটি রামকিঙ্কর বাইজের সবচেয়ে ব্যাপক গ্রন্থ বলে মনে করা হয়।   তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.  "(ছবি Google থেকে সংগৃহীত) পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

 



 

অযোধ্যা, রাম জন্মভূমি (প্রভু শ্রীরামের জন্মস্থান), দৈব শক্তি অনুভব করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি ঈশ্বর নিজেই তৈরি করেছেন। শহরটি পবিত্র সার্যু নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি অন্যতম শ্রদ্ধেয় শহর, কারণ এটি বেশ কয়েকটি মন্দিরের আবাসস্থল।

অযোধ্যা সাকেত নামেও পরিচিত, যা মহাকাব্য গাথা রামায়ণের সাথে যুক্ত একটি প্রাচীন শহর: শ্রী রামের মহান বীরত্বের গল্প এবং তাঁর পিতা রাজা দশরথের শাসন। বর্তমানে, অযোধ্যা শহরে মন্দিরগুলির সবচেয়ে অসাধারণ নির্মাণের কাজ চলছে। অযোধ্যা রামমন্দির নির্মাণের কাজ সেই জমিতে হচ্ছে যেখানে প্রভু শ্রী রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারতের বৃহত্তম মন্দির- এর নকশা কাঠামো অনুসারে, অযোধ্যা রাম মন্দির ভারতের বৃহত্তম মন্দির হতে চলেছে৷ মন্দিরের কাঠামো ডিজাইনকারী সোমপুরা পরিবারের মতে, মন্দিরের উচ্চতা প্রায় 161 ফুট এবং 28,000 বর্গফুট এলাকা।

চলুন জেনে নিই অযোধ্যার রামমন্দির সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য যা এখনও অনেকের কাছেই অজানা। মন্দিরকে আরও মহিমান্বিত করে এমন ঘটনা!

অযোধ্যার রাম মন্দির সম্পর্কে তথ্য: একটি ব্যাপক নির্দেশিকা

1. পবিত্র প্রতিষ্ঠা

রাম মন্দিরের ভিত্তি একটি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। ঝাঁসি, বিথুরি, যমুনোত্রী, হলদিঘাটি, চিতোরগড় এবং স্বর্ণ মন্দিরের মতো উল্লেখযোগ্য স্থান সহ 2587টি অঞ্চলের পবিত্র মাটি নিয়ে গঠিত, প্রতিটি কণা মন্দিরের পবিত্রতায় অবদান রাখে, বিভিন্ন অঞ্চলকে আধ্যাত্মিক ঐক্যের টেপেস্ট্রিতে সংযুক্ত করে।

2. সোমপুরের উত্তরাধিকার

রাম মন্দিরের জাঁকজমকের পিছনের স্থপতিরা বিখ্যাত সোমপুরা পরিবারের অন্তর্গত, যা বিশ্বব্যাপী 100 টিরও বেশি মন্দির তৈরির জন্য বিখ্যাত। উল্লেখযোগ্যভাবে, তাদের অবদান শ্রদ্ধেয় সোমনাথ মন্দিরে প্রসারিত। প্রধান স্থপতি, চন্দ্রকান্ত সোমপুরা, তাঁর ছেলে আশিস এবং নিখিল দ্বারা সমর্থিত, একটি উত্তরাধিকার বুনেছেন যা মন্দির স্থাপত্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিক্রম করে।

3. ইস্পাত নেই, লোহা নেই, এবং শক্তির সহস্রাব্দ

প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতি থেকে একটি অসাধারণ প্রস্থান, ইস্পাত বা লোহার ব্যবহার ছাড়াই রাম মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই দাবি করেন যে পাথরের একচেটিয়া ব্যবহার সহস্রাব্দের জন্য মন্দিরের কাঠামোগত অখণ্ডতা নিশ্চিত করে, যা ঐতিহ্যগত নির্মাণ পদ্ধতি থেকে গৃহীত স্থায়ী শক্তির প্রমাণ।

4. শ্রী রাম ইট

ইতিহাসের কাব্যিক সম্মতিতে, রাম মন্দির নির্মাণে নিযুক্ত ইটগুলি পবিত্র শিলালিপি বহন করে 'শ্রী রাম'। এটি রাম সেতু নির্মাণের সময় একটি প্রাচীন রীতির প্রতিধ্বনি করে, যেখানে 'শ্রী রাম' নাম ধারণ করা পাথরগুলি জলের উপর তাদের উচ্ছ্বাসকে সহজতর করেছিল। এই ইটের আধুনিক পুনরাবৃত্তি শক্তি এবং স্থায়িত্ব উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

5. শাস্ত্র এবং চৌলুক্য শৈলীর একীকরণ

রাম মন্দিরের স্থাপত্যের ব্লুপ্রিন্ট সাবধানে বাস্তুশাস্ত্র এবং শিল্প শাস্ত্রের নীতিগুলি মেনে চলে। উত্তর ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যের গুজরা-চৌলুক্য শৈলীতে ডিজাইন করা, মন্দিরটি প্রাচীন জ্ঞান এবং নান্দনিক করুণার সুরেলা মিশ্রণে অনুরণিত।

6. থাইল্যান্ডের মাটি

আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক বন্ধুত্বের ইঙ্গিতে, 22 জানুয়ারী, 2024-এ রাম লালার অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য থাইল্যান্ড থেকে মাটি পাঠানো হয়েছে। এই বিনিময় ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে, ভগবান রামের উত্তরাধিকারের সর্বজনীন অনুরণনকে শক্তিশালী করে।

7. ভগবান রামের দরবার

রাম মন্দিরের স্থাপত্য আখ্যানটি 2.7 একর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তিনটি তলা জুড়ে ফুটে উঠেছে। নিচতলায় ভগবান রামের জীবনকে জটিলভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তার জন্ম ও শৈশবকে জুড়ে রয়েছে। প্রথম তলায় উঠে, দর্শনার্থীরা ভগবান রামের দরবারের মহিমায় নিমজ্জিত হবে, রাজস্থানের ভরতপুর থেকে উৎপন্ন একটি গোলাপী বেলেপাথর বাঁশি পাহাড়পুর দিয়ে তৈরি একটি চাক্ষুষ দৃশ্য।

8. সংখ্যা উন্মোচন

রাম মন্দিরের সাংখ্যিক মাত্রার মধ্যে পড়ে, এটি 360 ফুট দৈর্ঘ্য এবং 235 ফুট প্রস্থে বিস্তৃত। শিখর সহ মোট উচ্চতা 161 ফুটে পৌঁছেছে। তিনটি তলা এবং মোট 12টি গেট সহ, মন্দিরটি স্থাপত্যের মহিমার একটি মহিমান্বিত প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।

9. পবিত্র নদীর জলের অবদান

5 আগস্টের পবিত্রতা অনুষ্ঠানটি ভারতজুড়ে 150টি নদীর পবিত্র জলের উপস্থিতির দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছিল। এই পবিত্র মিশ্রণ, বিভিন্ন নদী এবং অবস্থান থেকে উৎসারিত, একটি আধ্যাত্মিক মিলনের প্রতীক, যা একটি অনন্য সংমিশ্রণ তৈরি করে যা ভারতের পবিত্র জলের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে।

10. আর্থিক অনুদান এবং হাই-প্রোফাইল সমর্থন

রাম মন্দির নির্মাণ বিভিন্ন মহল থেকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা অর্জন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী, ডেপুটি সিএম কেশব প্রসাদ মৌর্য বাপু এবং আধ্যাত্মিক নেতা মোরারি বাপু সহ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা এই স্মারক প্রকল্পের বাস্তবায়নে যথেষ্ট পরিমাণে অবদান রেখেছেন।

11. উত্তরোত্তর জন্য একটি টাইম ক্যাপসুল

মন্দিরের নির্মাণে একটি বাধ্যতামূলক সংযোজন হল একটি টাইম ক্যাপসুল স্থাপন করা, যা মন্দিরের নীচে মাটির 2000 ফুট নীচে পুঁতে রাখা হয়েছে। মন্দির, ভগবান রাম এবং অযোধ্যা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে খোদাই করা একটি তামার প্লেটে সজ্জিত এই ক্যাপসুলটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মন্দিরের পরিচয় সংরক্ষণের একটি দূরদর্শী প্রচেষ্টা।

12. পৌরাণিক মন্দিরের উপর অমীমাংসিত সমীক্ষা:

আশ্চর্যজনকভাবে, প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ থেকে জানা যায় যে বাবরি মসজিদটি একটি পূর্ব-বিদ্যমান কাঠামোর উপর নির্মিত হয়েছিল। যদিও কিছু সমীক্ষা এই কাঠামোটিকে ভগবান রামের যুগের বলে মনে করে, ভারতীয় ইতিহাসবিদ সর্বপল্লী গোপাল সহ অন্যরা দাবি করেন যে অযোধ্যার মানব সভ্যতা মাত্র 2800 বছর আগের। পৌরাণিক কাহিনী এবং প্রত্নতত্ত্বের মিলন স্থানটির ঐতিহাসিক বর্ণনায় রহস্যের স্তর যুক্ত করে।

13. সূক্ষ্ম স্তম্ভ এবং নাগর শৈলী নকশা

মন্দিরের নকশায় নগর শৈলীতে কারুকাজ করা 360টি স্তম্ভ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এর দৃষ্টি আকর্ষণকে বাড়িয়ে তুলেছে। বংশী পাহাড়পুর এবং নগর শৈলীর ব্যবহার কাঠামোটিকে একটি অনন্য নান্দনিকতা প্রদান করে, এটিকে কেবল একটি উপাসনালয় নয় বরং স্থাপত্যের সূক্ষ্ম নৈপুণ্যে পরিণত করে।

14. মন্দির শহর পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত তহবিল

রামমন্দির নির্মাণ পুরো অযোধ্যা শহরকে পুনর্নির্মাণের জন্য একটি বিস্তৃত উদ্যোগের সূত্রপাত করেছে। নতুন পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা সহ 500 কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদি অযোধ্যাকে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য রেখেছেন।

15. ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টি

তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা, শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের মতে, মন্দিরের নির্মাণ প্রায় সমাপ্তিতে পৌঁছেছে। আগামী 2024 সালের 22 শে জানুয়ারী নাগাদ ভক্তদের জন্য তার দরজা খোলার প্রত্যাশিত, অযোধ্যা রাম মন্দির শুধু অতীতের প্রমাণ হিসাবে নয় বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষার পথপ্রদর্শক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।

অযোধ্যা রামমন্দির একটি নির্মাণ প্রকল্পের চেয়ে বেশি হিসাবে আবির্ভূত হয়; এটি বিশ্বাস, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের উজ্জ্বলতার সঙ্গমের একটি জীবন্ত মূর্ত প্রতীক। নির্মাণের অগ্রগতির সাথে সাথে, মন্দিরটি বিশ্বাসীদের এবং উত্সাহীদের একইভাবে এর বহুমুখী আখ্যানটি অন্বেষণ করার জন্য ইশারা দেয়, যেখানে প্রতিটি ইট এবং শিলালিপি আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক অনুরণনে বদ্ধ একটি গল্প প্রকাশ করে।

এইরকম নতুন নতুন বিষয় বাংলায় পড়ার জন্য আমাদের এই ব্লগ নিয়মিত Follow করুন। ধন্যবাদ।।

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৭ ||


রামকিঙ্কর বেইজ - আধুনিক ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক

 



 রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন একজন ভারতীয় ভাস্কর এবং চিত্রশিল্পী, আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শকদের একজন এবং প্রাসঙ্গিক আধুনিকতাবাদের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব।  বেইজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অর্থনৈতিকভাবে বিনয়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  কিশোর বয়সে রামকিঙ্কর ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতি আঁকতেন।  16 বছর বয়সে তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক রামানন্দ চ্যাটার্জির নজরে পড়েন।

 

চার বছর পর রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন।  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হন।  রামকিঙ্করের বিখ্যাত ভাস্কর্য শিষ্যদের মধ্যে রয়েছে প্রভাস সেন, শঙ্খো চৌধুরী, অবতার সিং পানওয়ার, মদন ভাটনগর, ধর্মানি, বলবীর সিং কাট্ট, রাজুল ধারিয়াল এবং সুসান ঘোস একটি ছোট ছেলে হিসাবে, তিনি স্থানীয় কারিগর এবং চিত্র-নির্মাতাদের কাজের সময় দেখে বড় হয়েছিলেন;  এবং তার পথে যা আসে তা দিয়ে ছোট মাটির চিত্র এবং পেইন্টিং তৈরি করে।





1938 সালে শান্তিনিকেতনে তৈরি "সাঁওতাল পরিবার"

 

 এটি তাকে 1925 সালে, জাতীয়তাবাদী প্রকাশক এবং নতুন ভারতীয় শিল্প আন্দোলনের জন্য রামানন্দ চ্যাটার্জির পরামর্শে শান্তিনিকেতনের আর্ট স্কুল কলা ভাবনায় তার পথ চিহ্নিত করতে পরিচালিত করেছিল।  শান্তিনিকেতনে, নন্দলাল বোসের নির্দেশনায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা আকৃতির মুক্ত বৌদ্ধিক পরিবেশের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, তাঁর শৈল্পিক দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিগন্ত নতুন গভীরতা এবং জটিলতা অর্জন করে।

 

 কলা ভবনে পড়াশোনা শেষ করার পর শীঘ্রই তিনি এর অনুষদের সদস্য হন এবং নন্দলাল এবং বিনোদ বিহারী মুখার্জির সাথে শান্তিনিকেতনকে স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে আধুনিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।  তিরিশের দশকের গোড়ার দিকে তিনি ক্যাম্পাসকে একের পর এক ভাস্কর্যে ভরিয়ে দিতে শুরু করেন, যা বিষয়বস্তুতে উদ্ভাবনী এবং ব্যক্তিগত শৈলীতেও ছিল।

 

এই ধারায় তাঁর প্রথম শ্রেষ্ঠ রচনা ছিল 1938 সালে করা সাঁওতাল পরিবার। এই বৃহত্তর জীবন ভাস্কর্যে তিনি এই অঞ্চলের উপজাতীয় কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, চিত্রগুলিকে আইকনিক উপস্থিতি এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুগ্রহ প্রদান করেছিলেন যা এখনও পর্যন্ত ঈশ্বর এবং শাসকদের চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সিমেন্ট এবং ল্যাটারাইট মর্টার ব্যবহার করে চিত্রগুলিকে মডেল করা, এবং একটি ব্যক্তিগত শৈলীর ব্যবহার যাতে আধুনিক পশ্চিমা এবং ভারতীয় প্রাক-শাস্ত্রীয় ভাস্কর্যের মূল্যবোধগুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল।

 

 এই মৌলিক কাজের মাধ্যমে রামকিঙ্কর নিজেকে নিঃসন্দেহে আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।  ঋত্বিক ঘটক বিচক্ষণতার সাথে বেইজের উপর 'রামকিঙ্কর' (1975) নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি তাকে একজন রাজনৈতিক আইকন হিসেবে তুলে ধরেন।  2012 সালে ভাস্কর কে.এস.  রাধাকৃষ্ণান দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এ রামকিঙ্করের একটি গ্র্যান্ড রেট্রোস্পেকটিভ কিউরেট করেছেন।  রামকিঙ্কর বাইজ (বই), বিশিষ্ট শিল্প ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আর. শিব কুমারের বইটি রামকিঙ্কর বাইজের সবচেয়ে ব্যাপক গ্রন্থ বলে মনে করা হয়।

 

তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.

 

 "(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

 

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৬ ||



 

 “মধুবনী চিত্র” ভারতের এক অনবদ্য শিল্পশৈলী

 

 মধুবনী চিত্রকলা বহু বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পকলার একটি।  বিহার ও নেপালের মিথিলা অঞ্চলে এটি প্রচলিত হওয়ায় একে মিথিলা বা মধুবনী শিল্প বলা হয়।  প্রায়শই জটিল জ্যামিতিক নিদর্শন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, এই চিত্রগুলি উৎসব, ধর্মীয় আচার ইত্যাদি সহ বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আচার বিষয়বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পরিচিত। মধুবনী চিত্রগুলিতে ব্যবহৃত রঙগুলি সাধারণত গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে উদ্ভূত হয়।  এই রঙগুলি প্রায়শই উজ্জ্বল হয় এবং ভুষা এবং গিরিমাটি মতো রঞ্জকগুলি যথাক্রমে কালো এবং বাদামী তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।  সমসাময়িক ব্রাশের পরিবর্তে, পেইন্টিংগুলি তৈরি করতে ডাল, ম্যাচস্টিক ইত্যাদির ব্যবহার এবং এমনকি আঙ্গুলও ব্যবহার করা হয়।

 

ইতিহাস ও বিবর্তন

 

 মধুবনী চিত্রকলার উৎপত্তি বিহারের মিথিলা অঞ্চলে।  মধুবনী চিত্রকলার প্রাথমিক কিছু উল্লেখ হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে পাওয়া যায় যখন সীতার পিতা রাজা জনক তার চিত্রশিল্পীদেরকে তার মেয়ের বিয়ের জন্য মধুবনী চিত্রকর্ম তৈরি করতে বলেন।  জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং চিত্রগুলি এই অঞ্চলের ঘরে ঘরে শোভা পেতে শুরু করেছিল।  গ্রামের মহিলারা নিজ নিজ বাড়ির দেয়ালে এই ছবি আঁকার চর্চা করতেন।  তাদের চিত্রগুলি প্রায়শই তাদের চিন্তা, আশা এবং স্বপ্নকে চিত্রিত করে।

 

 সময়ের সাথে সাথে, মধুবনী পেইন্টিংগুলি উৎসব এবং বিবাহের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানগুলির একটি অংশ হয়ে ওঠে।  ধীরে ধীরে, এই শিল্পটি শিল্পের অনুরাগীদের আকৃষ্ট করেছিল কারণ অনেক সমসাময়িক ভারতীয় শিল্পী এই শিল্পটিকে বৈশ্বিক মঞ্চে নিয়েছিলেন।  প্লাস্টার করা মাটির দেয়ালের ঐতিহ্যগত ভিত্তিটি শীঘ্রই হস্তনির্মিত কাগজ, কাপড় এবং ক্যানভাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।  যেহেতু পেইন্টিংগুলি একটি সীমিত ভৌগলিক পরিসরে সীমাবদ্ধ, তাই থিম এবং শৈলীও কমবেশি একই রকম।

 

শৈলী এবং কৌশল

 

 মধুবনী পেইন্টিংগুলি প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা অনুশীলন করা হয়েছিল এবং তাই চিত্রগুলিকে পাঁচটি ভিন্ন শৈলীতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল, যেমন তান্ত্রিক, কোহবার, ভরনি, গোদনা, কাচনি।  কিন্তু আজ, এই পাঁচটি ভিন্ন শৈলী সমসাময়িক শিল্পীদের দ্বারা একত্রিত হয়েছে।  এই পেইন্টিংগুলিতে ব্যবহৃত থিমগুলি প্রায়শই কৃষ্ণ, রাম, লক্ষ্মী, শিব, দুর্গা এবং সরস্বতীর মতো হিন্দু দেবতার চারপাশে আবর্তিত হয়।  এছাড়াও, সূর্য এবং চাঁদের মতো স্বর্গীয় দেহগুলি প্রায়শই মধুবনী চিত্রগুলির কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করে।

 

 রাজকীয় দরবার এবং বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের দৃশ্যের উপর ভিত্তি করে কেউ পেইন্টিংও খুঁজে পেতে পারেন।  এই পেইন্টিংগুলিতে জ্যামিতিক নিদর্শনগুলির ব্যবহার বেশ স্পষ্ট।  মধুবনী পেইন্টিংগুলিতে এই জটিল গাণিতিক নিদর্শনগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল তা তাদের আরও আকর্ষণীয় এবং বিশেষ করে তোলে।

 

 এই পেইন্টিংগুলি তাদের সরলতার জন্যও পরিচিত, কারণ ব্যবহৃত ব্রাশ এবং রঙগুলি প্রায়শই প্রাকৃতিক উৎস থেকে উদ্ভূত হয়।  যদিও পেইন্টিংগুলি মূলত গুঁড়ো চাল, হলুদ থেকে প্রাপ্ত রং, পরাগ, রঙ্গক, নীল, বিভিন্ন ফুল, চন্দন, এবং বিভিন্ন গাছপালা ও গাছের পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এছাড়াও, অনেক প্রাকৃতিক উৎস একত্রিত করা হয় এবং পছন্দসই প্রাপ্ত করার জন্য প্রক্রিয়া করা হয়।  রঙগুলি প্রায়শই শিল্পীরা নিজেরাই প্রস্তুত করেন।  চিত্রকর্ম শেষ করার পরেও শিল্পীরা যদি খালি জায়গা জুড়ে আসে, তবে তারা সাধারণত ফুল, পশু, পাখি এবং জ্যামিতিক নিদর্শনগুলির মোটিফ দিয়ে সেই খালি স্থানগুলি পূরণ করে।  একটি ডবল লাইন সাধারণত সীমানা হিসাবে আঁকা হয়।

 

তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.

 

 "(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

 

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৫ ||


 

চিত্রশিল্পী হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নীতিগুলি ভারতের প্রাচীন ও কালজয়ী দর্শনের গভীরে নিহিত ছিল।  তার বিশাল জ্ঞান এবং সৃজনশীল প্রতিভা দিয়ে, তিনি উপনিষদ থেকে তার মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর অবদানের জন্য ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।  রূপের জগতে তিনি নিরাকারের মধ্যে দেবত্বের সন্ধান করেছিলেন।

 

 উল্লেখযোগ্যভাবে, ঠাকুরের কল্পনাপ্রসূত ধারা কেবল তাঁর লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  তাঁর ব্রাশস্ট্রোকগুলি তাঁর গদ্য এবং কবিতার মতোই শক্তিশালী ছিল।  ঠাকুর তাঁর চিত্রকর্মকে শেষ বয়সের প্রিয়া (শেষ জীবনের সন্ধ্যায় একটি প্রেম) হিসাবে বর্ণনা করেছেন। একজন প্রতিভাধর চিত্রশিল্পী হিসাবে, "দ্য বার্ড অফ বেঙ্গল" প্রথম ভারতীয় শিল্পী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন যার হাজার হাজার চিত্র রাশিয়া, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রদর্শিত হয়েছিল।

 

ঠাকুরের শৈল্পিক যাত্রা শুরু হয়েছিল 63 বছর বয়সে, তাঁর জীবনের শেষ 15 বছরে, এই ক্ষেত্রের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও।  তা সত্ত্বেও, কবিতা, সাহিত্য এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি তার প্রখর সংবেদনশীলতা তার শৈল্পিক কল্পনাকে অবহিত করেছে এবং ক্যানভাসে তার জীবনের চিত্রণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।  তিনি ল্যান্ডস্কেপ থেকে পাখি এবং প্রাণীর প্রতিকৃতি থেকে বিভিন্ন বিষয়ের অন্বেষণ করেছেন।  তাঁর খোলামেলা গল্পগুলির মতোই, ঠাকুরের চিত্রগুলি ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট জায়গা দেয়।  এগুলি সূক্ষ্ম রেখা, নিদর্শন এবং রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা তার চিত্রগুলিতে একটি অনন্য ব্যক্তিত্ব দেয়।

 

নিঃসন্দেহে ঠাকুর প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন।  গীতাঞ্জলির শ্লোকগুলিতে তাঁর সর্বৈশ্বরবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দৃশ্যমান।  তাঁর পরিবারের খামারের শৈশব স্মৃতি এবং শান্তিনিকেতনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রাকৃতিক জগতের প্রতি তাঁর উপলব্ধিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল যা নিঃসন্দেহে তাঁর লেখা এবং চিত্রকর্মে একইভাবে প্রতিফলিত হয়।




ঠাকুরের ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিংগুলি প্রকৃতির তীক্ষ্ণ, বিস্তারিত, বর্ণনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় না;  পরিবর্তে, তারা একটি স্বপ্নময়, সিলুয়েটের মতো গুণের অধিকারী।  তার ল্যান্ডস্কেপ প্রায়ই আলো এবং ছায়ার একটি পারস্পরিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত;  "সন্ধ্যার আকাশের সোনালি চাঁদোয়া" সহ "ভ্রুকুটি বন", সম্ভবত প্রকৃতির পরিবর্তনশীল মেজাজের প্রতি তার সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে।  ল্যান্ডস্কেপগুলিতে সাধারণত ভূমি এবং জলের বিস্তৃত বিস্তৃতির বিপরীতে অন্ধকার গাছের গুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা প্রশান্তি এবং পূর্বাভাসিত রহস্য উভয়ের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, সম্ভবত ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের আকাঙ্ক্ষাও।

 

ঠাকুর একবার প্রকাশ করেছিলেন যে চিত্রকলার, অন্য যেকোন শিল্পের চেয়ে বেশি, একটি নিরবধি গুণ রয়েছে, তিনি বলেছিলেন "... তাই প্রায়শই আমি মনে করি যে কেবল চিত্রেরই একটি মৃত্যুহীন গুণ রয়েছে"।


 

 মানুষের মুখ ও রূপ আঁকার ঠাকুরের ন্যূনতম শৈলী তার প্রজাদের মনের অবস্থাকে কার্যকরভাবে তুলে ধরে বলে মনে হয়।  তার প্রতিকৃতি প্রায়ই দুঃখ, ভয় এবং রহস্য সহ বিভিন্ন আবেগ প্রকাশ করে।  বিষয়ের লিঙ্গ নির্বিশেষে, ঠাকুর তাদের শারীরিক চেহারাকে আদর্শ করেননি।  তাদের চোখ গভীর দুঃখের কথা বলেছিল এবং তারা অন্তহীন জড়তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল।  এটা সম্ভব যে এটি ঠাকুরের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর তার নিজের ক্ষতি এবং যন্ত্রণার অভিজ্ঞতার ফলাফল ছিল।

 

আমরা যদি তার পেস্টিচ পেইন্টিংগুলি দেখি, আমরা লক্ষ্য করব যে তারা বিশিষ্ট জ্যামিতিক নিদর্শনগুলিকে বৈশিষ্ট্যযুক্ত করে যা প্রায়শই পাখি এবং এমনকি প্রাণীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে প্রচলিত উপায়ে নয়।  এই কাজগুলির একটি পরাবাস্তব গুণ রয়েছে যা পিকাসোর মতো আধুনিক চিত্রশিল্পীদের শৈলীর কথা মনে করিয়ে দেয়।  নিদর্শনগুলি অদ্ভুত এবং গতিশীল এবং ঠাকুর তাদের "সম্ভাব্য প্রাণী" হিসাবে উল্লেখ করেছেন যে তারা শুধুমাত্র "আমাদের স্বপ্নে" অস্তিত্বে আসতে পারে।  তার অবচেতন মনকে চালিত করার তার প্রচেষ্টার মাধ্যমে, তিনি এমন একটি রচনা তৈরি করেছেন যা বিদ্বেষপূর্ণ এবং চিন্তা-প্ররোচনামূলক, বাস্তবতা এবং প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে চ্যালেঞ্জ করে।

 

 এতে কোন সন্দেহ নেই যে ঠাকুরের রচনা তাঁর আগ্রহের মতোই বিশাল। বহুবিদ্যাজ্ঞ হিসাবে, তিনি স্বপ্ন এবং বাস্তবতা, আশা এবং নিরাশা, রূপ এবং নিরাকারের সংমিশ্রণ সহ বিভিন্ন মাধ্যমের মাধ্যমে তার ধারণা এবং জ্ঞানকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।

 

তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.

(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

Saturday, March 29, 2025

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৪ ||




কালীঘাট পেইন্টিংস - ইতিহাস, বিষয় এবং শৈলী :

 

 শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পশ্চিমবঙ্গ কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের আবাসস্থল - দেশের এই অংশ থেকে কিছু শ্রেষ্ঠ শিল্পী ও নেতা আবির্ভূত হয়েছেন।  সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকলার জ্ঞানের ভিত্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নিবেদিত আমাদের সিরিজে, আজ আমরা শিল্পের এমন একটি রূপ দেখছি যা পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেছিল, কিন্তু আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত – যদি আপনি কখনও গ্রহণ করেন  বিশ্বের সেরা লর্ড কৃষ্ণ পেইন্টিংগুলি ব্রাউজ করার সময়, সম্ভবত আপনি ইতিমধ্যেই একটি কালীঘাট পেইন্টিং দেখেছেন৷

 

ইতিহাস এবং উৎস :

 

এটি বিশ্বাস করা হয় যে কালীঘাট চিত্রকলার শৈলীটি 19 শতকের মাঝামাঝি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এটি পট্টচিত্রের শৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।  আসল শিল্পীরা আসলে স্ক্রোল পেইন্টার ছিলেন এবং এমন চিত্র তৈরি করেছিলেন যা চারপাশে বহন করা যেতে পারে এবং গল্প বলার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।  কাপড় বা পাতার উপর আঁকা হতো এবং প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় বই থেকে গল্প বলা হতো।  তারা তখন এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করত, এই ছবিগুলির সাহায্যে গল্প বলত, নিজেদের নাম, পটুয়া বা যারা কাপড়ে আঁকত তাদের নাম আয় করত।

 

 কালীঘাট নামটির উদ্ভবের কারণ হল এই শিল্পের প্রধান অনুশীলনকারীরা ছিলেন কলকাতার কালীঘাট এলাকার কালীঘাট কালী মন্দিরের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা।  শিল্পীরা ছোট ছোট পেইন্টিং তৈরি করেন, এবং অত্যন্ত কম দামে বাজারে নিয়ে আসেন, যা মন্দিরে আসা ভক্তরা স্যুভেনির হিসেবে কিনতে পারেন। প্রদত্ত যে এটিও এমন একটি সময় ছিল যখন মেশিনগুলি ক্রমবর্ধমান ছিল এবং যে কোনও মানুষের প্রচেষ্টার চেয়ে অনেক দ্রুত প্রাচীর সজ্জা আইটেমগুলি পুনরুত্পাদন করতে পারত, শিল্পীদের প্রতিভাকে অতিরিক্ত প্রেরণা দিতে হয়েছিল।  কালীঘাট স্কুলের শিল্পীরা ব্যাপক উৎপাদন আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা ও সহায়তা নিয়েছিলেন – তারা কলকারখানায় তৈরি হওয়া জলরঙ এবং কাগজ ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন যাতে আরও কম দামে এটি বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, এবং সাধারণ মানুষ সেটা সহজেই কিনতে পারেন। এবং পরিবর্তিত সময়ের সাথে নিজেদের এবং তাদের শিল্পের রূপকে বিকশিত করেছিলেন।  প্রকৃতপক্ষে, ব্রিটিশরা এই শিল্পের বিকাশে অনেক সাহায্য করেছিল এবং এমনকি কলকাতা স্কুল অফ আর্ট স্থাপনেও সাহায্য করেছিল, যা বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী শিল্পীকে আকৃষ্ট করেছিল।

 সময়ের সাথে সাথে, কালীঘাট চিত্রকলা শৈলীর দুটি খুব স্বতন্ত্র শৈলী আবির্ভূত হয়:

 

প্রাচ্য - এটিই ছিল আদি শৈলী যা কালীঘাট পটচিত্র চিত্রকলার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল - থিমগুলি বেশিরভাগই কৃষ্ণ এবং দুর্গার গল্পের সাথে যুক্ত ছিল, কারণ তারা ছিল এই অঞ্চলের বিশিষ্ট দেবতা।  চৈতন্য মহাপ্রভু এবং তাঁর শিষ্য এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের জীবন থেকে নেওয়া থিমগুলিও ছিল।  যাইহোক, থিমগুলো সেখানেই থেমে থাকেনি – ধর্মনিরপেক্ষ থিম এবং চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাও এটিকে বেশ কয়েকবার ক্যানভাসে তুলে ধরেছে।

 

 অক্সিডেন্টাল - আরও আধুনিক সংস্করণ, যা প্রায় একই সময়ে আবির্ভূত হয়েছিল, এটি এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল - এটি শুধুমাত্র মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ধারণ করেনি, বরং সামাজিক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেও তুলে ধরেছিল।

 

 কালীঘাটের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে মজার বিষয় হল যে তাদের মধ্যে কেউই প্রকৃতপক্ষে চিত্রশিল্পী ছিলেন না এই অর্থে যে এটিকে তাদের প্রাথমিক কর্মসংস্থান হিসাবে দেখা হয়েছিল - তারা ছিল ছুতোর, কুমোর এবং পাথর শ্রমিক যারা এই চিত্রগুলিকে আয়ের অতিরিক্ত উৎস হিসাবে তৈরি করেছিলেন। 

 

বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং প্রধান বিষয়:

 

 যখন পেইন্টিং স্কুল শুরু হয়েছিল, তখন পেইন্টিংগুলি অনেক ছোট ছিল এবং সম্ভবত একক দেবতার - তাই উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সেই দিনগুলিতে একজন ক্রেতা হতেন, তবে আপনি একমাত্র তাকে কেন্দ্র করে বা একটি দেবী দুর্গার চিত্রকর্ম কিনতে সক্ষম হতেন।  চিত্রকলার একমাত্র নায়ক হিসেবে ছিলেন কৃষ্ণ।  সময়ের সাথে সাথে, রেডিমেড কাগজের ব্যবহারে, চিত্রগুলিতে আরও অক্ষর যুক্ত হতে শুরু করে এবং চিত্রের অন্যান্য শৈলীর প্রভাবও পড়তে থাকে।

 

 পেইন্টিংগুলির একটি অনন্য সচিত্র রূপ ছিল, যা প্রায়শই আলো এবং ছায়া ব্যবহার করে বা রৈখিক আকারে চিত্রিত করা হত।  যাইহোক, লিনিয়ার ফর্মটি সহজ ছিল, কারণ সাধারণ ব্রাশ এবং হ্যান্ড স্ট্রোক ব্যতীত কোনও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়নি।  যাইহোক, অনেক স্পষ্ট কনট্যুর ছিল, কিন্তু একটি পটভূমির অভাব ছিল।  রঙের প্রয়োগ একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে করা হয় এবং একবারে একটি করে – তাই উদাহরণস্বরূপ, মুখ এবং দৃশ্যমান অঙ্গগুলি প্রথমে আঁকা হয় এবং তারপরে অন্যান্য সমস্ত বিবরণ পূরণ করা হয়।

 

 চিত্রশিল্পীরা এমন ছিলেন না যাদের বাইরের জগতের অনেক প্রকাশ ছিল - তারা নিজের চারপাশে যা দেখেছিল তাই এঁকেছিলেন।  কালীঘাটের চিত্রকর্মগুলি নম্র মাছ থেকে ভিন্ন হতে পারে, যা বিড়ালের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের খাবারের অবিচ্ছিন্ন অংশ ছিল।  দুর্গা এবং কৃষ্ণ সহ ধর্মীয় রূপগুলি নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল যেমন পুরোহিতরা আশেপাশের মন্দিরগুলিতে পূজা পরিচালনা করতেন।  প্রকৃতপক্ষে, এমনকি দেবতাদেরকেও সাধারণ মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল - একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় চিত্রকর্মে, কালীঘাট চিত্রশিল্পীরা শিব, পার্বতী এবং গণেশকে একটি সাধারণ পরিবার হিসাবে দেখিয়েছেন।  গণেশ যখন তার বাবার কাঁধে চড়ে, পার্বতী একজন সাধারণ বাঙালি মহিলার মতো পোশাক পরে তার বিরক্তিকর ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।  সেই সময়ে কলকাতায় বসবাসকারী ধনী জমিদারদের ছবিও ছিল, এবং তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার চিত্র সাধারণ ছিল।  আপনি চিত্রগুলিতে ব্রিটিশদের একটি উপস্থিতিও দেখতে পারেন।

 

ব্যবহৃত উপকরণ এবং তৈরি:

 

 পেইন্টিংগুলি সর্বদা খুব মৌলিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল - কাঠবিড়ালি বা ছাগলের চুল ব্যবহার করে ব্রাশগুলি তৈরি করা হয়, রঙগুলি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে নেওয়া হয়।  বাতি জ্বালিয়ে রেখে যাওয়া কাঁচ থেকে কালো, ফুল ও পাতা থেকে লাল ও সবুজ, হলুদ থেকে হলুদ ইত্যাদি। শুকনো গুঁড়ো  রঙ তৈরি করতে সেগুলি জল বা আঠার সাথে মিশ্রিত করা হয়।  যাইহোক, যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, জলরং জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে ওঠে। এবং ধীরে ধীরে কালীঘাট পেইন্টিং জনপ্রিয়তা লাভ করে।

 

 

তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.

 

 "(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

 

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

Thursday, March 27, 2025

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ৩ ||




রাজা রবি বর্মার  "শকুন্তলা" সম্পর্কে গভীর তথ্য

শিল্পী : রাজা রবি বর্মা


29 এপ্রিল 1848 সালে কেরালার ত্রিভান্দ্রামের কিলিমানুরে জন্মগ্রহণকারী রবি ত্রাভাঙ্কোরের রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন। শুরুতে, রবির কাকা রাজা রাজা ভার্মা, যিনি একজন ভালো শিল্পীও ছিলেন, তাকে চিত্রকলার মূল বিষয়গুলি শিখিয়েছিলেন। রবির বয়স যখন চৌদ্দ, মহারাজা আয়িলিয়াম থিরুনাল তাকে ত্রাভাঙ্কোরে নিয়ে যান এবং তাকে রাজকীয় চিত্রশিল্পী রাম স্বামী নাইডুর অধীনে রাখেন। কোর্ট পেইন্টারের অধীনে একজন শিক্ষানবিশ হওয়ার তিন বছর পর, রবি একজন ব্রিটিশ পেইন্টার থিওডোর জেনসনের অধীনে পেইন্টিং শিখতে শুরু করেন।

আমরা যদি সেই সময়ের দিকে তাকাই যখন শিল্পী শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন, সেই সময়টি ছিল এমন একটি সময় যখন ভারত তার শৈল্পিক যাত্রায় প্রায় একটি নতুন আকার নিয়েছিল, ঐতিহ্যগত চিত্রকলাকে দূরে রেখে এবং নিজেকে আধুনিক শিল্পে জড়িত করেছিল। তাই, একটি নতুন কৌশল প্রতিষ্ঠা করার জন্য, রবি প্রথম শিল্পী হয়ে ওঠেন যিনি তেল রং ব্যবহার করেন, যার কারণে তিনি সেই সময়ের একজন বিতর্কিত শিল্পী হয়ে ওঠেন, কারণ ঠাকুর পরিবার ভারতীয় শিল্পকে পাশ্চাত্যকরণ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। শুরুতে, রেমব্রান্ট রবিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যা শিল্পীকে তার ক্যানভাসে ইউরোপীয় শিল্প কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পরিচালিত করেছিল। যাইহোক, তিনি যে বিষয়গুলি বেছে নিয়েছিলেন তা সর্বদা ভারতীয় দেবী এবং পৌরাণিক ব্যক্তিত্ব ছিল।


রাজা রবি বর্মা ভারতে স্বীকৃত হন, যার ফলে তিনি ভারতীয় আভিজাত্য এবং ইউরোপীয়দের কাছ থেকে কমিশন পান। রবি মাদ্রাজ, ত্রিভান্দ্রম, বরোদা, উদয়পুর এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজাদের প্রতিকৃতি তৈরি করেন। তাঁর কিছু সেরা কাজ, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে শকুন্তলার প্রেমপত্র, বিশ্বামিত্র-মেনকা, মোহিনী, দময়ন্তী এবং শ্রী রামা ভ্যাঙ্কুইশিং দ্য সি।

1893 সালে, এই চিত্রগুলি প্রথম কেরালার বাইরে প্রদর্শিত হয়েছিল, যা জনসাধারণকে রবির শৈল্পিক ক্ষমতা দেখতে পরিচালিত করেছিল। উল্লেখ করার মতো নয়, এটি একজন শিল্পী হিসাবে একটি শতাব্দীর জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রশংসনীয় অর্জন।

শিল্পকর্মের ইতিহাস এবং পটভূমি

আমরা যা জানি, বরোদার গায়কওয়ার (সয়াজি রাও) 1888 থেকে 1890 সালের মধ্যে চৌদ্দটি চিত্রকর্মের একটি সিরিজ পরিচালনা করেছিলেন। সেগুলি মহাভারত এবং রামায়ণের চরিত্র ও গল্পের অন্তর্গত। "শকুন্তলা " ছিলেন কমিশনে অন্তর্ভুক্তদের একজন। এটি বাজার পেইন্টিং স্কুলের অধীনে আসে, যা রোমান এবং গ্রীক শিল্প থেকে এর প্রভাব পেয়েছিল। এখন চৌদ্দটি চিত্রকর্ম ছিল নল দময়ন্তী, রাধা এবং মাধব, ভরত এবং সিংহ শাবক, অর্জুন এবং সুভদ্রা, বিশ্বামিত্র এবং মেনকা, শান্তনু এবং গঙ্গা, কংস মায়া, দ্রৌপদীর ডিরোবিং, হরিশচন্দ্র এবং তারামতি, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট, সীতা স্বয়ম্বরম, কৃষ্ণ, দেবকী ও কৃষ্ণ, শান্তনু ও সত্যবতীর জন্ম। তাদের সকলের জন্য শিল্পীর দ্বারা নেওয়া ফি ছিল 50,000 রুপি (একটি ভাল আকারের হীরার মূল্য সেই সময়ে 1000 টাকা)।

এই কমিশনের জন্য রবিকে পোশাক, আচ্ছাদন এবং স্থানীয় সাজসজ্জা অধ্যয়নের জন্য ভারতজুড়ে ভ্রমণ করতে হয়েছিল। যেহেতু শিল্পী যতটা সম্ভব বাস্তবতার সাথে তার চিত্রগুলি রচনা করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে দর্শকরা কখনই বিদেশী উপাদানগুলি দেখতে পাবে না। তার ভাই, রাজা রাজা ভার্মার সাথে, তিনি গল্পের প্লট নির্ধারণ এবং চরিত্রগুলিকে উন্নত করতে অসংখ্য সংস্কৃত গ্রন্থ এবং মহাকাব্য পড়েছিলেন। এটা জানা গেছে যে "শকুন্তলার" মডেল ছিলেন প্রেসের ফোরম্যানের আত্মীয় রাজীবাই মূলগাভকর।

শকুন্তলার বিষয়বস্তু

1. শকুন্তলা  :

রবি শকুন্তলাকে জাফরান পোশাকে জুঁই ফুলের অলংকরণ হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন। কালিদাস তাঁর নাটকে ঠিক তেমনই এক শকুন্তলাকে চিত্রিত করেছেন, যা শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে আয়ত্ত করেছেন। তার একটি হাত তার বন্ধুর পিঠে এবং আরেকটি তার পায়ের কাঁটা সরানোর জন্য, সে একেবারে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকায়। তার উপস্থিতির এক ঝলকানের বিশুদ্ধতম ইচ্ছার সাথে তার অভিব্যক্তিগুলি শান্ত এবং ঐশ্বরিক। তার মুখে তীক্ষ্ণ আলো পড়ছে। শাড়ির স্বচ্ছ ভাঁজগুলি একজন মহিলার শরীরের যে কমনীয় ও আসল রূপ তা বজায় রেখেছে।

2. একটি ফুলের ঝুড়ি হতে মহিলা  :

ভদ্রমহিলার একটি ঝুড়িতে ফুল রয়েছে, তার বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় তার মুখ প্রকাশ করা হয়নি। তিনি একটি ব্লাউজ এবং ধুতি পরিহিত যা সাধারণত গ্রামের মেয়েরা পরিধান করে, যা সেই সময়ের ভারতীয় পোশাককে তুলে ধরেছে। তার চুলের খোঁপা, গোলাপী এবং হালকা ধূসর রঙের পোশাক , রচনাটিকে আরও উষ্ণ এবং সুন্দর করে তোলে।

3. অন্য মহিলা  :

ভদ্রমহিলা তার বন্ধুর মতো তার পোশাকের সাথে একটি জলের পাত্র ধরে রেখেছেন। সে হাসে যখন সে তার অন্য বন্ধুর সাথে শকুন্তলাকে জ্বালাতন করে।

তারা সবাই একটি বনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে যখন হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড় এবং লতাপাতা এবং গাছগুলি স্থানটি পূরণ করে।

শকুন্তলা পেইন্টিং-এর বিশ্লেষণ

1. লাইন  :

"শকুন্তলা" চিত্রকলায় দেখতে পাওয়া যায়, স্বতন্ত্র এবং সূক্ষ্ম কনট্যুর রেখাগুলি প্রকৃতির চিত্র এবং বস্তুর মধ্যে প্রতিটি উপাদানের পরিচয়কে আলাদা করে। দাঁড়িয়ে থাকা চিত্র, একটি লাঠি এবং একটি গাছের গুঁড়ির আকারে উল্লম্ব রেখাগুলি দৃশ্যের জোরালো স্থিতিশীলতা স্থাপন করে। তদুপরি, শকুন্তলার দৃষ্টি একটি সরল অনুভূমিক রেখার সাথে আসে, যা দুষ্মন্তের সাথে তার সম্পর্কের প্রশান্তি নির্দেশ করে।

2. আলোক-প্রপাত এবং মান  :

চিত্রটি চিত্র এবং প্রকৃতির বেশিরভাগ অংশের উজ্জ্বল আলোকসজ্জার সাথে তীব্র বৈপরীত্য তৈরি করে। এটি মৃদু গ্রেডেশনের মাধ্যমে যা সমগ্র রচনাকে এক জায়গায় একত্রিত করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু দূরত্বে মাটিতে তীক্ষ্ণ সূর্যালোক রয়েছে, যেখানে পরিসংখ্যানের কয়েকটি অংশ আলো এবং ছায়ায় জ্বলছে।

3. রঙ বিশ্লেষণ  :

শকুন্তলা সবুজ উষ্ণ রঙে পূর্ণ, একটি আমন্ত্রণমূলক পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়। রঙের ব্যবহারে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রকাশভঙ্গি, যেমন শকুন্তলার জাফরান শাড়ি, লাঠি নিয়ে হাঁটতে থাকা বৃদ্ধের সাদা চাদর।

উপসংহার

"শকুন্তলা" সম্পর্কিত, অসংখ্য উপাদান এবং উপাদান এর উৎকর্ষে অবদান রাখে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে আমরা এই অসাধারণ রচনাটির মাধ্যমে মহিলাদের সামাজিক পোশাক এবং শর্তগুলি জানলাম। কালিদাসের সংস্কৃত নাটকটি প্রজন্মের দ্বারা বোঝার জন্য কোথাও কঠোর ছিল, তবে এই চিত্রটি প্রেম এবং সৌন্দর্যের স্পষ্টতা দেয় যা আমরা এক ঝলক দিয়ে অনুভব করতে পারি।

তথ্যসূত্র : Wikipedia, Google.

"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ  Follow করুন।

Sunday, March 23, 2025

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ২ ||



 

মোনালিসা, শিল্পী লিওনার্দো ভিঞ্চি

মোনালিসা, যাকে ফ্রান্সেসকো দেল জিওকোন্ডো, ইতালিয়ান লা জিওকোন্ডা, বা ফরাসি লা জোকোন্ডের স্ত্রী লিসা ঘেরার্ডিনির প্রতিকৃতিও বলা হয়, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি পপলার কাঠের প্যানেলে তেলরং-এ আঁকা, সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম। এটি 1503 থেকে 1519 সালের মধ্যে আঁকা হয়েছিল, যখন লিওনার্দো ফ্লোরেন্সে বাস করছিলেন, এবং এটি এখন প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে আছে, যেখানে এটি 21 শতকে তীর্থযাত্রার একটি বস্তু ছিল। মোনালিসার রহস্যময় হাসি এবং তার অপ্রমাণিত পরিচয় পেইন্টিংটিকে চলমান তদন্ত এবং মুগ্ধতার উৎস করে তুলেছে।

পেইন্টিংটি একজন মহিলাকে অর্ধ-শরীরের প্রতিকৃতিতে উপস্থাপন করে, যার পটভূমিতে একটি দূরবর্তী ল্যান্ডস্কেপ রয়েছে। তবুও একটি আপাতদৃষ্টিতে আদর্শ এই রচনার সাধারণ বর্ণনা লিওনার্দোর কৃতিত্বের সামান্যই ধারণা দেয়। তিন- চতুর্থাংশ দৃশ্য, যেখানে মডেল মোনালিসার অবস্থান বেশিরভাগই দর্শকের দিকে মোড় নেয়, ইতালীয় শিল্পে ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড প্রোফাইল ভঙ্গি থেকে ভেঙ্গে যায় এবং দ্রুত সমস্ত প্রতিকৃতির জন্য সম্মেলন হয়ে ওঠে, যেটি 21 শতকে ভালো ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বিষয়ের নরম ভাস্কর্যের মুখটি লিওনার্দোর স্ফুমাটো (সূক্ষ্ম ছায়ার ব্যবহার) দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে এবং ত্বকের নীচে পেশী এবং মাথার খুলি সম্পর্কে তার উপলব্ধি প্রকাশ করে। সূক্ষ্মভাবে আঁকা ঘোমটা, সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা বেণী এবং ভাঁজ করা কাপড়ের যত্ন সহকারে সূক্ষ্ম অনুবাদ লিওনার্দোর অধ্যয়ন করা পর্যবেক্ষণ এবং অক্ষয় ধৈর্য প্রদর্শন করে। আবার, সিটারের চুল এবং পোশাকের সংবেদনশীল বক্ররেখাগুলি তার পিছনের উপত্যকা এবং নদীগুলির আকারে প্রতিধ্বনিত হয়। পেইন্টিংটিতে অর্জিত সামগ্রিক সম্প্রীতির অনুভূতি - বিশেষত মডেলের ক্ষীণ হাসিতে স্পষ্ট - মানবতা এবং প্রকৃতিকে সংযুক্তকারী মহাজাগতিক সংযোগ সম্পর্কে লিওনার্দোর ধারণাকে প্রতিফলিত করে, এই চিত্রটিকে লিওনার্দোর দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্থায়ী রেকর্ড করে তোলে। মডেল এবং ল্যান্ডস্কেপের সূক্ষ্ম সংশ্লেষণে, মোনালিসা, ভবিষ্যত সমস্ত প্রতিকৃতির জন্য মান নির্ধারণ করেছে।

পোর্ট্রেটের সিটারের পরিচয় নিয়ে অনেক জল্পনা ও বিতর্ক হয়েছে। পণ্ডিত এবং ঐতিহাসিকগণ অসংখ্য ব্যাখ্যা করেছেন, যার মধ্যে তিনি হলেন লিসা ডেল জিওকোন্ডো (নি ঘেরার্ডিনি), ফ্লোরেন্টাইন বণিক ফ্রান্সেস্কো ডি বার্তোলোমিও দেল জিওকোন্ডোর স্ত্রী, তাই এই পেইন্টিং-এর বিকল্প নাম হল, লা জিওকোন্ডা। এই পরিচয়টি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন 1550 সালে শিল্পী জীবনীকার জর্জিও ভাসারি। আরেকটি তত্ত্ব ছিল যে মডেলটি লিওনার্দোর মা ক্যাটেরিনা হতে পারে। এই ব্যাখ্যাটি অন্যদের মধ্যে, সিগমুন্ড ফ্রয়েড দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল, যিনি মনে করেছিলেন যে মোনালিসার রহস্যময় হাসিটি ক্যাটেরিনার হাসির স্মৃতি থেকে - সম্ভবত অচেতন - থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তৃতীয় একটি পরামর্শ ছিল যে চিত্রকর্মটি প্রকৃতপক্ষে লিওনার্দোর স্ব-প্রতিকৃতি ছিল, মডেল এবং শিল্পীর মুখের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। কিছু পণ্ডিত পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নিজেকে একজন মহিলা হিসাবে ছদ্মবেশ ধারণ করা ছিল শিল্পীর ধাঁধা। মডেলের পরিচয় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি। 21 শতকে লিসা ডেল জিওকোন্ডোর দেহাবশেষ খোঁজার মাধ্যমে তার ডি এন এ পরীক্ষা করার এবং তার মুখের একটি চিত্র পুনরায় তৈরি করার মাধ্যমে বিতর্কের নিষ্পত্তি করার অসংখ্য প্রচেষ্টা নিষ্পত্তিযোগ্য ছিল।

ইতিহাস মোনালিসা

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি 1503 সালের দিকে মোনালিসা আঁকতে শুরু করেছিলেন, এবং এটি তার স্টুডিওতে ছিল যখন তিনি 1519 সালে মারা যান। তিনি সম্ভবত বেশ কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝে এটিতে কাজ করেছিলেন, বিভিন্ন সময়ে পাতলা তেল গ্লেজের একাধিক স্তর যুক্ত করেছিলেন। পেইন্টে ছোট ছোট ফাটল, যাকে ক্র্যাকুলিউর বলা হয়, পুরো টুকরো জুড়ে দেখা যায়, তবে সেগুলি হাতে আরও সূক্ষ্ম, যেখানে পাতলা গ্লেজগুলি লিওনার্দোর শেষ সময়ের সাথে মিলে যায়।

ফরাসি রাজা ফ্রান্সিস প্রথম, যার দরবারে লিওনার্দো তার জীবনের শেষ বছরগুলি কাটিয়েছিলেন, শিল্পীর মৃত্যুর পরে কাজটি অধিগ্রহণ করেন এবং এটি রাজকীয় সংগ্রহের অংশ হয়ে ওঠে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রতিকৃতিটি ফরাসি প্রাসাদে নির্জন ছিল, যতক্ষণ না বিদ্রোহীরা ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৭-৯৯) সময় রাজকীয় সংগ্রহকে জনগণের সম্পত্তি বলে দাবি করে। নেপোলিয়নের শয়নকক্ষে ঝুলে থাকার পর মোনালিসা 19 শতকের শুরুতে ল্যুভর মিউজিয়ামে স্থাপন করা হয়েছিল।

1911 সালে পেইন্টিংটি চুরি হয়ে গিয়েছিল, যা একটি অবিলম্বে মিডিয়া সংবেদন সৃষ্টি করেছিল। লোকে লুভরে ছুটে আসে সেই ফাঁকা জায়গাটি দেখতে যেখানে পেইন্টিংটি একবার ঝুলানো হয়েছিল, যাদুঘরের চিত্রকর্মের পরিচালক পদত্যাগ করেছিলেন এবং কবি গুইলাম অ্যাপোলিনায়ার এবং এমনকি শিল্পী পাবলো পিকাসোকে সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দুই বছর পর ফ্লোরেন্সের একজন আর্ট ডিলার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন যে একজন ব্যক্তি তাকে পেইন্টিংটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ একটি ট্রাঙ্কের তলায় লুকিয়ে রাখা প্রতিকৃতিটি খুঁজে পেয়েছে, যা একজন ইতালীয় অভিবাসী ভিনসেঞ্জো পেরুগিয়ার, যিনি মোনালিসা সহ বিভিন্ন চিত্রকর্মে ল্যুভর ফিটিং গ্লাসে সংক্ষিপ্তভাবে কাজ করেছিলেন। তিনি এবং সম্ভবত অন্য দুই কর্মী রাতারাতি একটি কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন, 21শে আগস্ট, 1911-এর সকালে দেয়াল থেকে প্রতিকৃতিটি নিয়েছিলেন এবং সন্দেহ ছাড়াই পালিয়ে যান। পেরুগিয়াকে গ্রেফতার করা হয়, বিচার করা হয় এবং কারারুদ্ধ করা হয়, যখন মোনালিসা ইতালি ভ্রমণ করে, ফ্রান্সে বিজয়ী হিসাবে ফেরার পূর্বে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মোনালিসা, ল্যুভরের সবচেয়ে বিপন্ন শিল্পকর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, পরে শান্তি ঘোষণার পর 1945 সালে এটি যাদুঘরে ফিরে এসেছিল। এটি পরবর্তীতে 1963 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করে, নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট এবং ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট-এ ছয় সপ্তাহের থাকার সময় প্রতিদিন প্রায় 40,000 লোককে আকর্ষণ করে। এটি 1974 সালে টোকিও এবং মস্কোতেও ভ্রমণ করেছিল।

"(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

Wednesday, March 19, 2025

চিত্রকথার ইতিহাস || পর্ব - ১ ||

 




 

The Starry Night (দ্য স্টারি নাইট) - শিল্পী : ভ্যানগঘ, তৈলচিত্র, 1889

দ্য স্টারি নাইট, একটি মাঝারি বিমূর্ত ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং (1889) একটি ছোট পাহাড়ি গ্রামের উপর একটি অভিব্যক্তিপূর্ণ রাতের আকাশের চিত্র, ডাচ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগঘের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে একটি।

 

 অয়েল-অন-ক্যানভাস পেইন্টিং-এ বর্ণময় নীল ঘূর্ণি, একটি উজ্জ্বল হলুদ অর্ধচন্দ্র, এবং বিকিরণকারী কক্ষপথ হিসাবে উপস্থাপিত নক্ষত্রগুলির সাথে একটি রাতের আকাশের আধিপত্য রয়েছে। এক বা দুটি সাইপ্রাস গাছ, প্রায়শই শিখার মতো, বাম দিকে অগ্রভাগের উপর টাওয়ার, তাদের অন্ধকার শাখাগুলি কুঁচকে যায় এবং আকাশের গতিবিধিতে দুলতে থাকে যা তারা আংশিকভাবে অস্পষ্ট।  যেন এই সমস্তটাই একটা অ্যানিমেশনের মত, ক্যানভাসের নীচের ডানদিকে দূরত্বে একটি কাঠামোবদ্ধ গ্রাম বসে আছে। সোজা নিয়ন্ত্রিত রেখাগুলি ছোট কুটির এবং একটি গির্জার সরু স্টিপল তৈরি করে, যা ঘূর্ণায়মান নীল পাহাড়ের বিরুদ্ধে একটি আলোকবর্তিকা হিসাবে রয়েছে।  বাড়ির উজ্জ্বল হলুদ স্কোয়ারগুলি শান্তিপূর্ণ ঘরগুলির স্বাগত জানাই, পেইন্টিংয়ের অশান্তির মধ্যে একটি শান্ত কোণ তৈরি করে।

 

 ভ্যানগঘ ফ্রান্সের সেন্ট-রেমি-ডি-প্রোভেন্সের কাছে সেন্ট-পল-ডি-মৌসোলে আশ্রয়ে 12 মাস থাকার সময় দ্য স্টারি নাইট এঁকেছিলেন। একজন শিল্পী হিসেবে তিনি পর্যবেক্ষণ থেকে কাজ করতে পছন্দ করতেন।  ভ্যানগঘ তাকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন—তার নিজের উপমা, তার স্টুডিওর জানালার বাইরের দৃশ্য এবং আশেপাশের গ্রামাঞ্চল।

 

 যদিও ভ্যানগঘের বিষয়গুলি সীমাবদ্ধ ছিল, তার শৈলী সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বিভিন্ন আবহাওয়ার চিত্র এবং আলোর পরিবর্তন ইত্যাদি সাথে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন তার চিত্রকর্মের জন্য, প্রায়শই গ্রীষ্মের উজ্জ্বল সূর্য বা অন্ধকার ঝড়ের মেঘের নীচে কাছাকাছি গমের ক্ষেতগুলিকে আঁকতেন। ভ্যানগঘ বিশেষ করে রাতের ল্যান্ডস্কেপ আঁকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এবং এটি সম্পর্কে কেবল তার ভাই থিওকেই নয়, একজন সহ চিত্রশিল্পী এমিল বার্নার্ড এবং তার বোন উইলেমিয়েনকেও লিখেছিলেন। পরবর্তীতে সম্বোধন করা একটি চিঠিতে, তিনি অভিযোগ করেছেন যে রাতটি দিনের চেয়ে বেশি রঙিন ছিল এবং তারাগুলি কালোতে সাদা বিন্দুর চেয়ে বেশি, পরিবর্তে হলুদ, গোলাপী বা সবুজ দেখায়।  ভ্যানগঘ সেন্ট-রেমিতে আসার সময়, তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাতের দৃশ্য এঁকেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্য স্টারি নাইট (রোন, Rhône) (1888)। এই কাজটিতে, তারাগুলি একটি নীল-কালো আকাশের বিপরীতে হলুদের বিস্ফোরণে উপস্থিত হয় এবং নীচের জ্বলন্ত গ্যাস বাতি এবং রোন নদীতে তাদের প্রতিফলনের সাথে প্রতিযোগিতা করে।

 

 অ্যাসাইলামে, ভ্যানগঘ তার বাঁধা বেডরুমের জানালা থেকে রাতের আকাশ দেখেছিলেন এবং 1889 সালের গ্রীষ্মে খুব ভোরে সকালের তারার একটি দুর্দান্ত দৃশ্য বর্ণনা করে থিওকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। কারণ তাকে তার বেডরুমে ছবি আঁকার অনুমতি দেওয়া হয়নি,  তিনি স্মৃতি বা সম্ভবত অঙ্কন থেকে দৃশ্যটি এঁকেছেন এবং তার কল্পনাশক্তি ব্যবহার করেছেন সেই ছোট্ট গ্রামের যা বাস্তবে নেই। 1886-88 সালে প্যারিসে থাকার সময় তিনি যে অভিব্যক্তিমূলক শৈলী গড়ে তুলেছিলেন, সেটিকে কাজে লাগিয়ে তিনি টিউব থেকে সরাসরি ক্যানভাসে রং প্রয়োগ করেছিলেন, ঘন ইম্পাস্টো এবং তীব্র রঙ তৈরি করেছিলেন। তার কল্পনা থেকে কাজ করার ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত, ভ্যানগঘ শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত স্টারি নাইটকে একটি ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য করেছিলেন এবং থিও স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করেছিলেন যে চিত্রকর্মটি পদার্থের চেয়ে শৈলীতে বেশি প্রাধান্য পায়।

 

 পেইন্টিংটি ভ্যানগঘের শেষের কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল, কারণ এর পরে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তার শৈল্পিক কর্মজীবন সংক্ষিপ্ত ছিল, মাত্র 10 বছরের কিন্তু যা ছিল খুবই কার্যক্ষম।  তিনি তার ভাইয়ের জন্য 800 টিরও বেশি পেইন্টিং এবং 700 থেকে 850 টি ড্রয়িং রেখে গিয়েছিলেন।  নিউইয়র্ক সিটির মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (MoMA) যখন 1941 সালে একটি ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছ থেকে দ্য স্টারি নাইট কিনেছিল, তখন এটি সুপরিচিত ছিল না, কিন্তু তারপর থেকে এটি ভ্যানগঘের অন্যতম বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।

 

(ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

 

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও লেখা এই ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

Tuesday, March 18, 2025

ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব - ৭ || (শেষ পর্ব)


 

ভাস্কর্য

ভাস্কর্য ভারতে শৈল্পিক অভিব্যক্তির জন্য একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় শিল্পের একটি রূপ। বিল্ডিংগুলি প্রচুরভাবে সজ্জিত ছিল, এবং যেখানে বিষয়বস্তু হিসাবে মূলত হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের নীতিগুলিকে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহৃত বিমূর্ত মানব রূপ নিয়ে গঠিত করা হয়। শক্তি, কালী এবং ব্রহ্মার মতো নারী দেবতাদের প্রায়ই ভারতীয় ভাস্কর্যে চিত্রিত করা হয়েছে।

ভারতীয় ভাস্কর্য সিন্ধু উপত্যকা থেকে বিস্তৃত, যেখানে পোড়ামাটির মূর্তিগুলি উৎপাদিত প্রথম ভাস্কর্যগুলির মধ্যে কয়েকটি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে ২য় শতক পর্যন্ত বিস্তৃত মৌর্য রাজবংশ জুড়ে, বড় বড় পাথরের স্তম্ভগুলি চৌরাস্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উপস্থাপিত করা হয়। এবং সেগুলির প্রায়ই পদ্ম-আকৃতির শীর্ষ এবং সিংহের মূর্তি ছিল যা সাম্রাজ্য শাসনের প্রতীক ছিল। এই সময়ের মধ্যে দেবতাদের অনেক বড় পাথরের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে ছোট সংস্করণগুলি বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভগুলিতে স্থাপন করা হয়েছিল। স্তূপ, কবরের ঢিবি, শোভাময়ভাবে খোদাই করা গেটওয়ে দ্বারা বেষ্টিত ছিল যাতে ধর্মীয় চিহ্নগুলির একটি বিন্যাস রয়েছে। আরও পরিপক্ক ভারতীয় রূপক ভাস্কর্য খ্রিস্টপূর্ব ২য় এবং ১ম শতাব্দীতে আবির্ভূত হতে শুরু করে।

পরবর্তী শতাব্দীতে, শৈলী এবং ঐতিহ্যের বিস্তৃত পরিসর পরবর্তীকালে বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে বিকাশ লাভ করে। সবচেয়ে বিশিষ্ট স্থাপনাগুলির মধ্যে একটি হল এলিফ্যান্ট গুহা, প্রধানত হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত গুহা মন্দিরগুলির একটি সংগ্রহ, যা খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। ৯ম এবং ১০ম শতাব্দীতে, ভারতীয় ভাস্কর্য একটি ফর্মে পৌঁছেছিল যা আজকের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সামান্য পরিবর্তিত হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে স্থাপত্য সজ্জার অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

২০ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতীয় ভাস্কর্য পাশ্চাত্য একাডেমিক শিল্প ঐতিহ্যের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, এবং শৈলীগুলি বাস্তববাদী শিল্পীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় যারা ব্রিটিশ আর্ট স্কুলে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলিতে কাজ করেছিলেন। পুরাণ এবং দেবতাদের চিত্রিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী ফর্ম থেকে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্থান দেখা যায়। 1940 এবং 1950-এর দশকে, চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর রামকিঙ্কর বাইজ কংক্রিট, নুড়ি এবং সিমেন্টের মতো অপ্রচলিত উপকরণগুলির সাথে পরীক্ষা করে পাশ্চাত্য শিল্প এবং ঐতিহ্যগত ভারতীয় ফর্ম উভয়কে একত্রিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। এই পরীক্ষাটি সমসাময়িক ভারতীয় ভাস্কর্যের অন্যতম সৃষ্টি, যা নতুন পদ্ধতির অন্বেষণ করার সময় ঐতিহ্যগত কৌশল এবং বিষয়বস্তু থেকে সমানভাবে ধার নেয়।

-:উল্লেখযোগ্য ভারতীয় ভাস্কর্য :-

মহেঞ্জোদারোর ডান্সিং গার্ল (Dancing Girl)

এই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি প্রায় 4,500 বছরের পুরানো বলে মনে করা হয়। সূক্ষ্ম ধাতু দিয়ে তৈরি, এটি একটি অল্প বয়স্ক মেয়েকে তার বাহুতে চুড়ির আধিক্য সহ চিত্রিত করেছে, রাজস্থানের একটি সম্প্রদায় বানজারার মহিলাদের মতো।




 

অশোক স্তম্ভ

৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক দ্বারা নির্মিত, কলামের এই সিরিজটি সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বিখ্যাত স্তম্ভ, সারনাথের সিংহ রাজধানী, চারটি সিংহ তাদের পিছনের পায়ে তাদের পিঠ স্পর্শ করে। এটি 1950 সালে ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।




অজন্তা গুহা

মহারাষ্ট্র অঞ্চলে অবস্থিত, শিলা-কাটা বৌদ্ধ গুহাগুলির এই গোষ্ঠীতে বিভিন্ন ধরনের গুহাচিত্র এবং ভাস্কর্য রয়েছে। ২য় শতাব্দীতে নির্মিত, এগুলিকে মূলত ভারতের শিল্প ও স্থাপত্যের সেরা জীবিত নমুনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

 

প্রাগৈতিহাসিক শিলা খোদাই থেকে শুরু করে প্রথাগত শৈলীর সমসাময়িক ব্যাখ্যা পর্যন্ত, ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশীয় শিল্প শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিস্তৃতি প্রদর্শন করে চলেছে যা ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে এর নান্দনিকতাকে অবহিত করেছে এবং আকার দিয়েছে। শিল্পের ঐতিহ্যগত কাজগুলি ধর্মীয় মোটিফ এবং পৌরাণিক চিত্রনাট্য প্রদর্শন করে, সমসাময়িক কাজগুলি জাতির সাংস্কৃতিক এবং আদর্শিক বৈচিত্র্যের সাথে মিলন সৃষ্টি করেছে।

(Written by Bachchu Chanda, Master of Fine Art, Kolkata)

(এই ব্লগের সমস্ত ছবি Google থেকে সংগৃহীত

এটি "ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস" এর শেষ পর্ব, কিন্তু শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

Monday, March 17, 2025

ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব - ৬ ||



স্থাপত্য

অনেকটা পেইন্টিংয়ের মতো, ভারতীয় স্থাপত্য বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন শৈলী এবং ফর্ম নিয়ে এসেছে। এই কাঠামোগুলির মধ্যে অনেকগুলি বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, যেমন তাজমহল এবং দক্ষিণ ভারতীয় মন্দির। সময়ের সাথে সাথে স্থাপত্য শৈলী পরিবর্তিত হয়েছে এবং আধুনিক কাঠামো ভারতের বৈশ্বিক আলোচনার ফলে বিভিন্ন দেশে এর প্রভাব প্রতিফলিত করে।

গুহা স্থাপত্য ছিল প্রাচীনতম রূপগুলির মধ্যে একটি, যা হিন্দু, জৈন এবং বৌদ্ধরা তৈরি করেছিল যারা পাথর থেকে পুরো মন্দির তৈরি করেছিল। সবচেয়ে বিখ্যাত শিলা-কাটা মন্দিরগুলির মধ্যে একটি হল কৈলাসা মন্দির, যা ভারতের মহারাষ্ট্রের ইলোরা গুহায় অবস্থিত এবং এটি এর আকার এবং ভাস্কর্য শৈলীর জন্য পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর শুরুতে, বড়, মুক্ত-স্থায়ী মন্দিরগুলি আবির্ভূত হয়েছিল। ভারতীয় স্থাপত্যে প্রায়শই ধর্মীয় উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল যেমন একটি বেদী এবং জ্ঞানার্জনের জন্য উপাসকদের আশ্রয়।

1193 সালে ঘরের মুহাম্মাদ দিল্লিকে মুসলিম রাজধানী করার পর 12 শতক জুড়ে, ইসলামী পৃষ্ঠপোষকদের জন্য উৎপাদিত স্থাপত্যের আবির্ভাব ঘটে। দিল্লি সুলতানী - যা 1206 সালে গঠিত হয়েছিল এবং 320 বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল অংশে রাজত্ব করেছিল - এটি মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে এসেছিল এবং স্থাপত্যের একটি শৈলীকে উপস্থাপিত করে যা মূলত ইরানি প্রভাব থেকে উদ্ভূত।

মুসলিম নেতারা বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণের জন্য স্থানীয় কারিগরদের নিয়োগ করতেন, যা পূর্বে ভারতে নির্মিত কাঠামোর চেয়ে অনেক আলাদা। এর মধ্যে মসজিদগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেগুলি পবিত্র শহরগুলির দিকে অভিমুখী আচ্ছাদিত হলঘর দ্বারা বেষ্টিত খোলা উঠোন বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বিভিন্ন ধরনের ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর আবির্ভাব ঘটে, যা স্থানীয় ও ইসলামিক ঐতিহ্যকে একত্রিত করে এবং আধুনিক ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশী স্থাপত্যকে প্রভাবিত করে।

আধুনিক ভারতীয় স্থাপত্য এখনও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর সময় ঐতিহ্যকে সম্মান ও সমর্থন করে। 1947 সালে ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ না করা পর্যন্ত আধুনিক কাঠামোর আবির্ভাব ঘটেনি। সেই সময়ে, ভারতীয় পাঞ্জাব সরকার চণ্ডীগড় শহরের নগর পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিখ্যাত সুইস-ফরাসি স্থপতি এবং ডিজাইনার লে করবুসিয়ারকে কমিশন দিয়েছিল। এই প্রকল্পের সাথে ভারতীয় স্থাপত্যের পুনর্জন্মের প্রতি নতুন করে আগ্রহ জন্মায়।

উল্লেখযোগ্য ভারতীয় স্থাপত্য

লোহার স্তম্ভ (দি আয়রন পিলার), দিল্লি

চতুর্থ শতাব্দীতে নির্মিত এই স্তম্ভটিতে ব্রাহ্মী লিপিতে সংস্কৃত শিলালিপি রয়েছে যা বলে যে এটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সম্মানে তৈরি করা হয়েছিল। স্তম্ভটি ধাতুবিদ্যায় ভারতের দক্ষতা প্রদর্শন করে, বিজ্ঞানের একটি শাখা যা বিশেষ করে ধাতুর বৈশিষ্ট্য, উৎপাদন এবং পরিশোধনকে কেন্দ্র করে।




কোনার্ক সূর্য মন্দির, কোনার্ক, উড়িষ্যা

13 শতকে নির্মিত এই চিত্তাকর্ষক মন্দিরটি হিন্দু সূর্য দেবতা সূর্যকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এটি বিশাল চাকা এবং ঘোড়া সহ 100 ফুট উঁচু রথের আকারে পাথর থেকে খোদাই করা হয়েছিল।






তাজমহল, আগ্রা, উত্তরপ্রদেশ

বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি, এই সমাধিটি 17 শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অধীনে নির্মিত হয়েছিল। স্থাপত্যের বিস্ময় হিন্দু এবং ইন্দো-ইসলামিক কৌশলগুলির সংমিশ্রণ বহন করে।







(এই ব্লগের সমস্ত ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

Sunday, March 16, 2025

ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব - ৫ ||

 





উল্লেখযোগ্য ভারতীয় চিত্রকর্ম

 

   রাজা রবি বর্মা, "শকুন্তলা," 1870

   এই মহাকাব্য চিত্রটি প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান সংস্কৃত মহাকাব্যের একটি মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শকুন্তলাকে চিত্রিত করেছে।

রবি বর্মা শকুন্তলাকে জাফরান পোশাকে জুঁই ফুলের অলংকরণ হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন।  কালিদাস তাঁর নাটকে ঠিক তেমনই এক শকুন্তলাকে চিত্রিত করেছেন, যা শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে আয়ত্ত করেছেন।ni  তার একটি হাত তার বন্ধুর পিঠে এবং আরেকটি তার পায়ের কাঁটা সরানোর জন্য, সে একেবারে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকায়।  তার অভিব্যক্তিগুলি শান্ত এবং ঐশ্বরিক, তার উপস্থিতির এক ঝলকানের বিশুদ্ধতম ইচ্ছার সাথে।  তার মুখে তীক্ষ্ণ আলো পড়ছে।  শাড়ির স্বচ্ছ ড্রেপারগুলি একজন মহিলাকে তার শরীরে আদর করার আসল রূপ বজায় রাখে।








   অবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "ভারত মাতা," 1905

   বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা, ঠাকুরের চিত্রকর্মটি মহান এবং ঐতিহাসিক মূল্যের কারণ এতে একজন মহিলাকে চিত্রিত করা হয়েছে। তাকে জাফরান রঙের পোশাক পরা, একটি বই, ধানের শিল, একটি জাপ মালা বা পুঁতি এবং একটি সাদা কাপড় পরা চার-বাহু দেবী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।  তার মাথার চারপাশে একটি হললো এবং তার পায়ের নীচে সাদা পদ্ম ফুটেছে।  তাকে খুব শান্ত এবং শান্ত দেখাচ্ছে।  অবনীন্দ্রনাথ শক্তি এবং ভালবাসা, সমস্ত মায়ের গুণ উভয়ই দেখাতে চেয়েছিলেন এবং গান, উপন্যাস এবং সাম্প্রতিক উত্থানগুলি তাঁর মনে কাজ করে, এই অমর চিত্রটিতে তিনি তাঁর আবেগ প্রকাশ করেছিলেন।


 




   অমৃতা শের-গিল, "সেল্ফ পোর্ট্রেট," 1931

   অমৃতা শের-গিল ছিলেন ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক শিল্পীদের একজন।  এটি ছিল ক্রিস্টি'স দ্বারা অফার করা শিল্পীর প্রথম পেইন্টিং এবং বিশ্বব্যাপী নিলাম করা শিল্পীর মাত্র আটটি কাজের মধ্যে একটি।

অমৃতা শের-গিলকে প্রায়ই জনপ্রিয় মেক্সিকান চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর সাথে তুলনা করা হয়।  উভয় নারী শিল্পীই তাদের নিজ নিজ দেশের শিল্পে পুরুষদের আধিপত্যে একটি দাগ তৈরি করেছেন।  তাদের শিল্পের মাধ্যমে, তারা নারীদের, তাদের প্রজন্মের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।  এই তুলনা এই "সেলফ-পোর্ট্রেট"-এ স্পষ্ট।  প্রতিকৃতিতে শিল্পীর অত্যন্ত ভারতীয় বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে, আধুনিক কৌশলগুলির সাথে মিশ্রিত যা তার ইউরোপীয় লালন-পালন নিয়ে এসেছে।  এটি একটি প্রতিকৃতি যা ইউরোপীয় এবং ভারতীয় শৈলীর পাশাপাশি ভারতীয় শিল্পের ঐতিহ্যবাহী এবং নতুন চেহারাকে মিশ্রিত করে।





 

(এই ব্লগের সমস্ত ছবি Google থেকে সংগৃহীত

Thursday, March 13, 2025

ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব - ৪ ||


 

ভারতীয় শিল্পের প্রকারভেদ : চিত্রকলা - ৪ ও আরও কয়েকটি

 

 ওয়ার্লি পেইন্টিংস

 

 ওয়ার্লি লোক চিত্র, ২,৫০০ বছর আগের আদিবাসী ভারতীয় শিল্পের একটি রূপ।  শৈলীটি মধ্য ভারতের পশ্চিম অংশে বিস্তৃত একটি রাজ্য মহারাষ্ট্রে উদ্ভূত হয়েছিল, যেখানে এটি আজও ব্যাপকভাবে প্রচলিত।  সাধারণত কুঁড়েঘরের দেয়ালে তৈরি করা হয়, ওয়ার্লি পেইন্টিংগুলি রৈখিক এবং একরঙা রঙ এবং একটি প্রাথমিক শৈলী যা গুহাচিত্রের অনুরূপ ব্যবহার করে।  অন্যান্য ধরণের উপজাতীয় শিল্পের বিপরীতে, যেখানে প্রচুর রঙের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই শৈলীটি আর্থ-টোন এবং নিরপেক্ষ ছায়াগুলি ব্যবহার করে স্থানীয় লোকদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ যেমন কৃষিকাজ, নাচ এবং শিকারকে চিত্রিত করেছে।



 

যদিওমধুবনী, পট্টচিত্র, ওয়ারলি এবং মিনিয়েচার চিত্রকলাগুলি সবচেয়ে বিশিষ্ট শৈলীগুলির মধ্যে কয়েকটি, তবে উপমহাদেশের বিভিন্ন সময়কাল এবং অঞ্চল থেকে উদ্ভূত আরও বেশ কয়েকটি ভারতীয় লোকচিত্র রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

 

 থাঞ্জাভুর পেইন্টিং: এই দক্ষিণ ভারতীয় চিত্রশৈলীটি ১৬ এবং ১৮ শতকের মধ্যে বিকাশ লাভ করে।  থাঞ্জাভুর পেইন্টিংগুলি হল রঙিন প্যানেল পেইন্টিং যা কাঠের তক্তার উপর করা হয়, সাধারণত কোনও দেবতাকে রচনার প্রাথমিক বিষয় হিসাবে চিত্রিত করা হয়।






 

কলমকারি: এই ধরনের হাতে আঁকা বা ব্লক-প্রিন্ট করা সুতির টেক্সটাইল ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যে উত্পাদিত হয়।  এটি ঐতিহ্যগতভাবে বর্ণনামূলক স্ক্রোল এবং প্যানেল তৈরির জন্য ব্যবহৃত হত এবং ফার্সি মোটিফগুলির সাথে এর একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে।






 গোন্ড পেইন্টিং: মধ্য ভারতের গোন্ডি উপজাতির দ্বারা বিকশিত, এই ধরনের শিল্প প্রাকৃতিক জগতকে উদযাপন করে, যা সবুজ প্রকৃতি থেকে শুরু করে প্রাণী পর্যন্ত সমস্ত কিছুকে চিত্রিত করে।  পেইন্টিংগুলি জটিলভাবে সাজানো বিন্দু এবং ড্যাশগুলির একটি সিরিজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।




 

 ফাড পেইন্টিংস: ফাড পেইন্টিংগুলি হাজার হাজার বছর আগের স্ক্রোল পেইন্টিংয়ের একটি ধর্মীয় রূপ যা যুদ্ধক্ষেত্র, দুঃসাহসিক গল্প এবং লোক দেবতাদের চিত্রিত করে।

 






 

(সমস্ত ছবি Google থেকে সংগৃহীত)

 

আমাদের এই ব্লগটিকে নিয়মিত Follow করুন। এখানে আপনি ভারতীয় শিল্পের ইতিহাস সমন্ধে পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন।

 

ধন্যবাদ।।

 

Wednesday, March 12, 2025

ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব - ৩ ||

ভারতীয় শিল্পের প্রকারভেদ : চিত্রকলা - ২ এবং ৩

 

 মিনিয়েচার পেইন্টিং :

 

 পাণ্ডুলিপির চিত্র হিসাবে তৈরি করা এই ছোট কাজগুলি প্রাথমিকভাবে তাল পাতায় পাওয়া গিয়েছিল, যা বণিকদের জন্য আঁকা হয়েছিল। যারা দশম এবং দ্বাদশ শতকে উপমহাদেশ জুড়ে তাদের ভ্রমণের সময় তাদের বহন করেছিল।  মুঘল ও রাজপুত দরবারে শিল্পের রূপটি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।  মিনিয়েচার পেইন্টিংগুলি অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং জটিল ছিল, যা ফরাসি কৌশল থেকে আঁকা। এই চিত্রশৈলীর  থিমগুলি  ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক দৃশ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের চিত্রাঙ্কন পর্যন্ত।



 

পটচিত্রপেইন্টিং :

 

 এটি চিত্রকলার আরেকটি প্রাথমিক রূপ, এই শৈলীটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ শতকের।  উড়িষ্যার কাছে, বঙ্গোপসাগরের একটি পূর্ব ভারতীয় রাজ্য। এই এলাকার ছোট গ্রামগুলি আজও এই শৈলীর চিত্রকর্ম তৈরি করে।  পটচিত্র আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ করে "কাপড়ের ছবি", যথাযথভাবে এই ঐতিহ্যবাহী, কাপড়-ভিত্তিক স্ক্রল (গোটানো) পেইন্টিংকে বর্ণনা করে।  এর জটিল বিবরণ এবং পৌরাণিক আখ্যানের জন্য পরিচিত, চিত্রগুলিতে কৌণিক, গাঢ় রেখাগুলিকে স্পষ্ট এবং মুঘল-যুগের প্রভাব থেকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত।




 

আমাদেরএই ব্লগটিকে নিয়মিত Follow করুন। এখানে আপনি ভারতীয় শিল্পের ইতিহাস সমন্ধে পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন।

 

ধন্যবাদ।।

 

Featured Posts

অন্নপ্রাশন: কেন শিশুকে প্রথমবার ভাত খাওয়ানো হয় পূজার মাধ্যমে

মানবজীবনের প্রতিটি ধাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনাকে বাঙালি সমাজে উৎসবের মাধ্যমে পালন করা...

Popular Posts