Translate

Showing posts with label ধার্মিক. Show all posts
Showing posts with label ধার্মিক. Show all posts

Wednesday, August 6, 2025

🕉️ শ্রাবণ মাসে শিবপূজার মাহাত্ম্য ও তার পেছনের পৌরাণিক কাহিনি





হিন্দু ধর্মে শ্রাবণ মাসকে বলা হয় "শিবের মাস"। এই পবিত্র মাসজুড়ে ভক্তরা শিবের উপাসনা, উপবাস এবং নানা পূজা-অর্চনায় ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ করে সোমবার দিনটি শ্রাবণ মাসে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ, যেদিন "শ্রাবণ সোমবার ব্রত" পালন করা হয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই মাসে ভগবান শিবকে তুষ্ট করলে জীবনের দুঃখ, কষ্ট ও সংকট দূর হয়। এই বিশ্বাস শুধু ধর্মীয় নয়, এর পেছনে আছে গভীর পৌরাণিক কাহিনি।



শিবের শ্রেষ্ঠত্ব ও শ্রাবণ মাসে পূজার কারণ:

ভগবান শিব হলেন সৃষ্টির ধ্বংস ও পুনর্জন্মের দেবতা। তিনি আশির্বাদে প্রসন্ন, আর রুষ্ট হলে কঠিন। তিনি শুধু তপস্বী নন, সর্বসাধারণের দেবতা — "আদিদেব" বা "ভোলানাথ"।

শ্রাবণ মাসে শিবপূজার মূল উৎস সমুদ্র মন্থনের ঘটনা, যা বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন পুরাণে, বিশেষ করে শিবপুরাণ ও ভাগবত পুরাণে।




পৌরাণিক কাহিনি: সমুদ্র মন্থন ও হলাহল বিষ

স্বর্গে দেবতারা এবং অসুরেরা যখন অমৃত লাভের জন্য সমুদ্র মন্থন শুরু করে, তখন সমুদ্র থেকে অনেক মূল্যবান বস্তু উঠে আসে — যেমন কামধেনু, ঐরাবত, লক্ষ্মী, চন্দ্র ইত্যাদি। কিন্তু সেইসঙ্গে উঠে আসে এক ভয়ঙ্কর বিষ — হালাহল।

এই হলাহল বিষ এতটাই বিষাক্ত ছিল যে, তা গোটা সৃষ্টি ধ্বংস করে দিতে পারত।

• তখন ভগবান শিব সব দেবতার আর্তি শুনে বিষ গ্রহণ করেন।

• তিনি সেই বিষ গলায় ধরে রাখেন, যাতে তা পাকস্থলীতে না পৌঁছায় ও তাঁর শরীরও ধ্বংস না হয়।

• বিষ ধারণের ফলে তাঁর গলা নীল হয়ে যায় — তাই তিনি পরিচিত হন "নীলকণ্ঠ" নামে।

• এই ঘটনার সময়কাল ধরা হয় শ্রাবণ মাস — তাই এই মাসে শিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শুরু হয় তাঁর পূজা।




শিবপূজার মাহাত্ম্য:

1. বিষগ্রহণের প্রতীক:
শিব তাঁর নিজের কষ্টে গোটা জগতকে রক্ষা করেছেন — তাই তিনি ত্যাগের প্রতীক।


2. আশীর্বাদদাতা ও ভক্তবৎসল:
শিব সহজে তুষ্ট হন, তাই তাঁকে বলা হয় "আশুতোষ"। ভক্তের অন্তরের সত্যতায় তিনি সন্তুষ্ট হন, বড় আয়োজনের প্রয়োজন হয় না।


3. সাধারণ মানুষের দেবতা:
শিব সাদাসিধে জীবনযাপন করেন — পশাকুলা বসন, মাথায় জটা, গলায় সাপ, হাতে ত্রিশূল — তিনি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি।


4. দাম্পত্য ও শুভমঙ্গল কামনার প্রতীক:
পার্বতীকে বহু তপস্যার পর পেয়েছিলেন, তাই কুমারী মেয়েরা ভালো বর পাওয়ার আশায় শ্রাবণ মাসে শিবপূজা করেন।





শ্রাবণ মাসে পূজার আচার ও রীতি:

প্রতিদিন শিবলিঙ্গে জল, দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি নিবেদন

বেলপাতা, ধুতরা, আকাশবেল ফুল নিবেদন করা

“ওঁ নমঃ শিবায়” বা “মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র” জপ করা

সোমবার উপবাস রাখা — এক বেলার আহার, নিরামিষ খাবার

শিবচতুর্দশী, নাগপঞ্চমী, এবং রুদ্রাভিষেক আয়োজন করা



সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:

নারীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ দেখা যায় এই মাসে — তারা বিশেষভাবে সেজে, উপবাস করে, পূজা দেয়।

শ্রাবণী মেলা, কांवাড় যাত্রা ইত্যাদিও এই মাসের একটি অংশ।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, শিবপূজা করলে জীবনে ধৈর্য, ক্ষমা ও ত্যাগের গুণাবলি বৃদ্ধি পায়।





শ্রাবণ মাসে শিবপূজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক মানবিক বার্তা বহন করে — আত্মত্যাগ, সহনশীলতা, এবং সকলের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রেরণা দেয়।
ভগবান শিব যেমন বিষ নিজের মধ্যে রেখে জগতকে রক্ষা করেছেন, তেমনি আমাদেরও জীবন হতে হবে সহিষ্ণু ও আত্মত্যাগে পরিপূর্ণ। শ্রাবণ মাস তাই কেবল শিবের মাস নয় — এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ, উপবাস, পবিত্রতা এবং ভক্তির এক অনন্য সময়।

Featured Posts

প্রতি পূজায় গাছের পাতা ব্যবহার : শাস্ত্রীয় ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে গাছের পাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেল, তুলসী, অশ্বত্থ, দুর্বা ইত্যাদি পাতা ব্যবহার করা হয় প্রায় প্র...

Popular Posts