Translate

Showing posts with label Hinduism. Show all posts
Showing posts with label Hinduism. Show all posts

Thursday, December 18, 2025

কেন হিন্দু দেবদেবীর বাহন পশু-পাখি? — প্রতীক, ইতিহাস ও দর্শনের অজানা দিক





ভারতীয় মন্দির, মূর্তি বা চিত্রকলায় লক্ষ্য করলে দেখা যায়—প্রায় প্রত্যেক দেবদেবীর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পশু বা পাখি যুক্ত। শিবের নন্দী, দুর্গার সিংহ, বিষ্ণুর গরুড়, গণেশের ইঁদুর, কার্তিকেয়ের ময়ূর—এই বাহনগুলি নিছক অলংকার নয়। এগুলির পেছনে রয়েছে গভীর দার্শনিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক অর্থ। প্রশ্ন হলো—দেবতাদের বাহন হিসেবে পশু-পাখিই বা কেন?


বাহন মানে শুধু যান নয়

‘বাহন’ শব্দের অর্থ কেবল বাহন বা যাতায়াতের মাধ্যম নয়।

ভারতীয় দর্শনে বাহন মানে—
দেবতার শক্তি, গুণ ও নিয়ন্ত্রিত প্রবৃত্তির প্রতীক।

দেবতা বাহনের ওপর বসে আছেন মানে—তিনি সেই প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।




মানবপ্রবৃত্তির প্রতীক হিসেবে পশু

প্রতিটি পশু মানুষের একেকটি প্রবৃত্তির প্রতীক।

সিংহ → শক্তি ও অহংকার

ইঁদুর → লোভ ও ক্ষুদ্র কামনা

সাপ → ভয় ও কুন্ডলিনী শক্তি

ময়ূর → সৌন্দর্য ও অহং


দেবতা যখন সেই পশুর ওপর আরূঢ়, তখন তার অর্থ—
মানুষ সেই প্রবৃত্তিকে জয় করতে সক্ষম।




দেবতা ও প্রকৃতির ঐক্য

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় মানুষ নিজেকে প্রকৃতির অংশ হিসেবে দেখত।

পশু-পাখিকে দেবতার বাহন বানানোর মাধ্যমে বলা হয়েছে—
প্রকৃতি ও ঈশ্বর আলাদা নয়।

এটি এক ধরনের পরিবেশচেতনা ও সহাবস্থানের দর্শন।




সামাজিক ইতিহাসের প্রতিফলন

অনেক বাহন আসলে প্রাচীন জনগোষ্ঠী বা টোটেম সংস্কৃতির চিহ্ন।

নাগ (সাপ) → নাগ উপাসক সম্প্রদায়

গরুড় → আকাশ ও সূর্য উপাসনা


ধীরে ধীরে এই লোকবিশ্বাসগুলি মূলধারার ধর্মে মিশে যায়।




শক্তির ভারসাম্য

দেবতার স্বভাব ও বাহনের স্বভাব অনেক সময় বিপরীত।

শিব ধ্যানমগ্ন → বাহন নন্দী শক্তিশালী ষাঁড়

সরস্বতী শান্ত → বাহন রাজহাঁস


এতে বোঝানো হয়—সাম্য ও ভারসাম্যই আদর্শ জীবন।




শিক্ষামূলক প্রতীক

সাধারণ মানুষের জন্য দর্শন বোঝানো সহজ ছিল না।

তাই পশু-পাখির মাধ্যমে জটিল দর্শনকে সহজ করা হয়েছে।

গণেশ + ইঁদুর = লোভকে বশে আনলে জ্ঞান লাভ সম্ভব

দুর্গা + সিংহ = শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করাই প্রকৃত বীরত্ব




শিল্প ও চেনার সুবিধা

মূর্তি বা চিত্রে দেবতা চেনার জন্য বাহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হাজারো মূর্তির মধ্যে বাহন দেখেই দেবতাকে শনাক্ত করা যায়।

এটি প্রাচীন ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটির এক নিখুঁত উদাহরণ।




ভয় দূর করার মনোবিজ্ঞান

মানুষ যেসব প্রাণীকে ভয় পেত—সাপ, সিংহ, পেঁচা—
সেগুলিকেই দেবতার বাহন বানানো হয়েছে।

ফলে ভয় রূপান্তরিত হয়েছে শ্রদ্ধায়।

এটি একধরনের প্রাচীন মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল।




দেবদেবীর বাহন পশু-পাখি হওয়া কোনো কুসংস্কার নয়। এটি ভারতীয় সভ্যতার গভীর প্রতীকী ভাষা। এখানে বলা হয়েছে—
মানুষ প্রকৃতিকে জয় করে নয়, বোঝে ও নিয়ন্ত্রণ করে উন্নত হয়।
এই বাহনগুলি আমাদের শেখায়, ঈশ্বর কেবল মন্দিরে নয়—প্রকৃতি, প্রাণী ও আমাদের প্রবৃত্তির মধ্যেই বিরাজমান।

Featured Posts

কেন হিন্দু দেবদেবীর বাহন পশু-পাখি? — প্রতীক, ইতিহাস ও দর্শনের অজানা দিক

ভারতীয় মন্দির, মূর্তি বা চিত্রকলায় লক্ষ্য করলে দেখা যায়—প্রায় প্রত্যেক দেবদেবীর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পশু বা পাখি যুক্ত। শিবের নন্দী, দুর...

Popular Posts