হিন্দু ঘরে-ঘরে সন্ধ্যা বেলা আরতির সময় শঙ্খ, ঘণ্টা ও করতাল একসাথে বাজানো একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। অনেকে একে কেবল পূজার আচার মনে করেন, কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা
• শঙ্খ
শঙ্খের ধ্বনি বিষ্ণুর প্রতীক।
বিশ্বাস করা হয়, শঙ্খধ্বনি মহাশক্তিকে আহ্বান করে এবং অশুভ শক্তিকে দূরে সরায়।
এটি আধ্যাত্মিক জাগরণ ও দেবতার উপস্থিতি অনুভব করায়।
• ঘণ্টা
ঘণ্টা বাজালে বলা হয়, “অশুভ শক্তি দূর হয়, শুভ শক্তি আহ্বান হয়”।
ঘণ্টাধ্বনির ধ্বনি কম্পন মানুষকে ঈশ্বরচিন্তায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
হিন্দু শাস্ত্রে বলা আছে, ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে “দেবতারা প্রসন্ন হন”।
• করতাল
করতাল মূলত ভক্তির প্রতীক।
মন্দিরে বা নামকীর্তনে করতাল বাজানো মানে হলো ভক্তি-উল্লাসে অংশ নেওয়া।
এটি ভক্তদের একত্রিত করে ও সমবেত আনন্দ প্রকাশ করে।
তিনটির সম্মিলিত ব্যবহার সন্ধ্যা আরতিকে একদিকে আধ্যাত্মিক পবিত্রতা দেয়, অন্যদিকে সৃষ্ট হয় ঐক্যের শক্তি।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
• সাউন্ড ওয়েভ বা ধ্বনিতরঙ্গের প্রভাব
শঙ্খ বাজালে যে শব্দ বের হয় তা ২–৩ কিমি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন বায়ুমণ্ডলকে পরিষ্কার রাখে।
ঘণ্টাধ্বনি “অম্লান” শব্দ সৃষ্টি করে, যা মস্তিষ্কের উভয় দিক (ডান ও বাম) কে একসাথে সক্রিয় করে।
করতালের ধ্বনি বিট রিদম তৈরি করে, যা হৃদস্পন্দন ও মস্তিষ্কের তাল-লয়কে নিয়ন্ত্রণে আনে।
• স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
শঙ্খ বাজালে ফুসফুস ও ডায়াফ্রাম শক্তিশালী হয়, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে।
ঘণ্টাধ্বনি ৬০–৭০ ডেসিবেল শক্তির তরঙ্গ তৈরি করে, যা পরিবেশে অনেক ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে পারে।
করতাল বাজালে হাতের পেশির ব্যায়াম হয়, আকুপ্রেশার পয়েন্টগুলো উদ্দীপিত হয়।
• মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব
এই তিনটি যন্ত্র একসাথে বাজালে এক ধরণের “নাদ যোগ” তৈরি হয়।
মানুষের মস্তিষ্কে আলফা ওয়েভ (শান্তির তরঙ্গ) সৃষ্টি হয়।
এর ফলে ভক্তরা পূজার সময় মানসিক শান্তি, আনন্দ ও একাগ্রতা অনুভব করেন।
সামাজিক দিক
সন্ধ্যা আরতির সময় সমবেতভাবে শঙ্খ, ঘণ্টা ও করতাল বাজানো মানে সবাইকে একই সময়ে ভক্তির আবহে যুক্ত করা।
এর মাধ্যমে তৈরি হয় সম্মিলিত এনার্জি, যা ঘর বা মন্দিরে একটি পজিটিভ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সমাজে ঐক্য, আনন্দ ও মিলনের অনুভূতি জাগ্রত হয়।
সন্ধ্যা আরতির সময় শঙ্খ, ঘণ্টা ও করতাল একসাথে বাজানো কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি একইসাথে আধ্যাত্মিক জাগরণ, বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক।
আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে এটি দেবতার কৃপা আহ্বান করে, আর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও মানসিক শান্তির জন্য উপকারী।
অতএব, এই প্রাচীন প্রথা আজও সমানভাবে মূল্যবান ও প্রাসঙ্গিক।
Visit us:
Another Blog to visit:
No comments:
Post a Comment