বেদের ভেতর বিজ্ঞান
ডাঃ রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়
বেদের বিজ্ঞান একটা সমুদ্র। এর অনন্ত দিক। অনন্ত সূত্র আছে যা এখনও প্রকাশ পায়নি। কিন্তু এর মূল ভিত্তিটা 'মানুষ'। বেদের ভিতের উপর এই এই সনাতন ধর্ম আর ভারতবর্ষ দাঁড়িয়ে আছে ।আজ সেই মূলভিত্তিটার কথাই আলোচনা করব। যা নতুন করে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দ। এখনো করে চলেছে রামকৃষ্ণ মিশন। কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনের এক সিনিয়র দাদা যাকে আমি দেব মানুষের মত দেখি, অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, KRMSAA গ্রুপে একবার একটি লেখার প্রত্যুত্তরে কিছু কথা লিখেছিলেন। সেটি যথাসাধ্য প্রথমে তুলে দিলাম এবং তার সূত্র ধরে তার বেদের বিজ্ঞানের অন্বেষণের চাহিদার পথ ধরে বেদের মৌলিক বৈজ্ঞানিক চিন্তার যে ভিত্তি তাকে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। "রজতশুভ্রের উল্লেখ করা অথর্ববেদের ষষ্ঠ কাণ্ডের তৃতীয় অনুবাকের তিন নম্বর সূক্তটির আলোচনা অনেকের কাছে খুব যে একটা আগ্রহী আলোচনা হবে, এমন নয় l বেদের এই অংশটি ডাক্তারবাবুদের ভালো লাগতেই পারে l সবার নয় l তবে সক্কলের একটা বিষয় ভালো লাগবেই লাগবে, তা হোলো, বেদের মধ্যেও এতো ডাক্তারী কথা আছে ! এর আগে আমার classmate এর লেখা মহাভারতের অন্তর্নিহিত মনস্তত্ব, বা আর এক শ্রদ্ধেয় ভাইয়ের লেখা (১০-ই অক্টোবর ১৯-৫৬মিঃ বা ১৩-ই অক্টোবর, ২১টা ৫৬ মিঃ), বা অনুরূপ বেশ কয়েক বিদগ্ধজনের বিজ্ঞান-মনস্ক লেখা আমাকে সুগভীরভাবে প্রভাবিত করেছে l অবাক হই এই কথা ভেবে যে, তথাকথিত ধর্মপুস্তক বলে যেগুলিকে জানি সেগুলির মধ্যে এতো সুগভীর বিজ্ঞান-চেতনা আছেl রজতশুভ্রের লেখার জের টেনে বর্তমান এই সংযোজন-টুকু অনুরূপ ভাবনা থেকেই লিখছি l উদ্দেশ্য একটাই l যদি এমন কাউকে বা কয়েকজনকে পাই, যে বা যারা আমাদের বেদ-বেদান্তের, এই সব পূজা-জপ-ধ্যানের, বিভিন্ন শাস্ত্রের বিভিন্ন Observation গুলোর বা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে নিহিত এই বিজ্ঞান-ধারাকে আমায় মনন করতে সাহায্য করেl খুঁজেছি অনেক। অনেক Group-এ l অজস্র সংস্থা, Club, Group তাদের নিজস্ব অজস্র Newsletter পরিচালনা করে l দেখেওছি l অজস্র Newsletter সময় করে download করতে, করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি l তাঁদের ঐ সব লেখায় এই যে শাস্ত্রাদির মধ্যে নিহিত সনাতন বিজ্ঞান, তার দেখা খুব কমই মিলেছে l দুর্ভাগ্য আমারই ! শেষে হতাশ হয়েছি l দেখি, হয় কপালে বইগুলো ঠোকে আর "আহা রে বাহা রে" করে l ওটাকেই নিজের মতো করে (মানে, subjectly, not at all objectly) হয় "বিজ্ঞান" নামে, নয় "ধম্মো" বলে ঢাক পেটায় l অথবা, "আরে মশায়, এ সব তো 'opium of the people' " বলে নাক সিঁটকায় l গণতন্ত্রের দেশ তো l বাক্-স্বাধীনতা বলে কথা ! মানে মানে কেটে পড়ি l "আমার মনের মানুষ একদম পাই নি" -- কখনো বলবো না l যা দু-এক জন মানুষকে (তাঁদিকে 'মহামানব'-ই বলতে ইচ্ছে করে) পেয়েছি, তাতে এই পাওয়ার লোভটা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে l যেমন, স্বামী রঙ্গনাথানন্দ l গোলপার্কের Calcutta Culture-এ তাঁর বক্তৃতা আছে শুনলে পুলিশে আমার উপরওয়ালাকে পাঁচ শো গন্ডা মিথ্যে কথা বলেও ছুটতাম l দু-একটা বই পেয়েছি l যেমন, Dr. সুহৃৎ দে-র "জগৎ ব্রহ্মময়" l লোভটা আরও আরও বেড়ে গেছে l পরে আর পেলাম কই ! বছরের পর বছর এই জাতীয় বই, Group, Club, Newsletter খুঁজেই চলেছি l দুটো উদাহরণ দিয়ে আমার "কামনা-বাসনা"-টা express করছি l গীতায় জন্মান্তরের কথা আছে l এটা Hindu School of Thought বললে অত্যুক্তি হবে না l ইসলাম ধর্মে নেই l Christian-দের বললে চটে যাবে l ইহুদীদের অনুরূপ reaction. তাহলে objectively সত্যিটা কী ? শ্রীকৃষ্ণ কি অর্জুনের সামনে আবেগে ভেসে বক্ বক্ করলেন ? বহু বছর এই প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে হঠাৎ Tokyo University-র একটা উল্লেখ পেলাম, একটা তিন বছরের বাচ্চা ভালো Chinese বলে l জাপানী পরিবারে জন্মে চীনা ভাষা শেখার কোনো সুযোগ তো তার নেইই; তাছাড়া ওর বয়স তো তিন বছর l আগের জন্মের গল্প গড় গড় করে বলে চলেছে l কোলকাতা University-ও তাদের Psychiatry department-এ দোলনচাঁপা নামের একটি মেয়েকে পেলো যে আগের জন্মে পুরুষ শরীর নিয়ে বর্ধমান জেলায় ছিল l আমি আনন্দের চোটে তিনটে মুরগির ঠ্যাং আর ২৮-টাকার মিষ্টি খেয়েই নিলাম l জন্মান্তর-বাদ সত্যি, সত্যি এবং সত্যি l আরও একটা উদাহরণ না দিলেই নয় l ১৯৬৪ বা ৬৫ l শ্রদ্ধেয় দক্ষিণাদা অংকের class-এ ঢুকলেন l সকলেই বায়না ধরলাম, আজ scheduled ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না l দক্ষিণাদা বায়নাটা মেনে নিলেন l তাঁর শর্ত হল, উনি black board-এ চারটি simple যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ দেবেন, সঠিক উত্তর দিতে হবে l উনি নীচে নীচে চারটে অঙ্ক লিখলেন l Infinity + Infinity = ? ; Infinity - Infinity = ? ; Infinity x Infinity = ? ; Infinity / Infinity = ? অনেক কথার পর জানা গেলো এর সব কয়টার উত্তর একই l Infinity- অনন্ত l বহু বছর ধরে এমন আর একটা problem মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল l ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে l পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ll --- মানে কী ? উপরের ওই বইটিতে Mathematician, Applied Math.-এর আমেরিকা তথা ইউরোপ জুড়ে নাম ডঃ সুহৃৎ দে লিখলেন, "ঐ পূর্ণটি একটি অসীম, অদৃশ্য পূর্ণ l" (ঐ, পৃষ্ঠা ৮৩) ভেবে পাই না, এই বই কি শুধু ধর্মগ্রন্থ stamp মেরে ঠকঠকাঠক করে বইটিতে Mathematician, Applied Math.-এর আমেরিকা তথা ইউরোপ জুড়ে নাম ডঃ সুহৃৎ দে লিখলেন, "ঐ পূর্ণটি একটি অসীম, অদৃশ্য পূর্ণ l" (ঐ, পৃষ্ঠা ৮৩) ভেবে পাই না, এই বই কি শুধু ধর্মগ্রন্থ stamp মেরে ঠকঠকাঠক করে কপালে ঠোকার বস্তু ? না, "বৃহৎ বিজ্ঞান গ্রন্থ" ? আমি সকলের কাছে, আমাদের শাস্ত্রে তথা বাহ্যিক ধর্মাচরণে যে যে কল্যাণকর বিজ্ঞান-ভাবনাগুলি আছে, সেগুলি প্রকাশের অনুরোধ করি l" এইযে আমরা মানুষরা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি পৃথিবীতে, আমাদের শরীরটা যেভাবে তৈরি, তার একটা বৈজ্ঞানিক গঠন আছে । ছন্দ আছে। আমাদের চারপাশের যে পরিমণ্ডল তারও একটা বৈজ্ঞানিক ছন্দ আছে । আমরা যদি ঈশ্বরকে নাও মানি আমাদেরকে এই ছন্দের কাছে পরাজয় স্বীকার করতেই হবে।এটাই আইনস্টাইনও মেনেছিলেন ।ইউনিভার্স এর মধ্যে যে ছন্দ, দেহের এই কোষের মধ্যে যে ছন্দ রয়েছে , এই দিনটার যে ছন্দ আছে, সেরকম অন্তর্জগতের ভেতরের যে জগত, তারও নানা রকমের সুন্দর ছন্দ আছে। এই ছন্দ সেই পরমেশ্বরের পরম প্রকাশ। শরীরের ভেতরের যে গঠন তার অনু পরমাণু , পরমানু থেকেও ছোট ছোট মেসন পার্টিকেল এবং আরো ছোট ছোট বোসন পার্টিকেল ইত্যাদিতেও সেই ছন্দের বিন্যাস। তাই ভালো লেগেছে ভেতরে আর বাইরে।বাইরের একটা জগত যা আকাশের চেয়ে বড় হয়ে একদম মহাকাশে মিলিয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে এই মানুষরূপী শরীরটা নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর কিছু বুঝি না বুঝি, জন্মান্তর, মৃত্যুর পরে কিছু থাকবে কিনা, তার উত্তর না দিয়ে আমি যদি বলি এখন তো আমি আছি এবং পাশাপাশি আমি দেখতে পাচ্ছি আমি একা নই আমার মত আরো মানুষ গাছে , আমার মত অনেক প্রাণী আছে, গরু ছাগল হাঁস মুরগি , অনেক জড়পদার্থ ও রয়েছে। তার পাশে তো আমি আছি। এটা তো সত্যি ।ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য আমির ভেতরে তার মানে একটা সত্ত্বাকে নিয়ে যে 'আমি' তাকে যদি আমি একটা 'নিজস্ব সত্ত্বা' ভাবি, যদি ভাবি এই পরিমণ্ডলে আমি এবং আমরা আছি, তখন মহাবিশ্ব থেকে এই বিশ্ব , বাইরেরও ভেতরের সমস্ত কেন্দ্রটা নিজের দিকে টেনে আসে, চোখ বন্ধ করে যদি এটুকু ধ্যান করা যায় ( আমি সারাবিশ্ব পরিমণ্ডলের একদিকে , আরেকদিকে অনু পরমাণুর মধ্যেখানে আমি ),তাহলে ধ্যান কেন্দ্রস্থ হয়। ) এই পথে সাধনা করে যারা উন্নত হয়েছে তাদেরকে আমরা বলি 'মহৎ'। শুধু মানুষ নন। কারণ তারা জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের সেবায় এবং তাদের চিন্তা তে ভরে গেছে প্রেম আর ভালোবাসা । কিন্তু তার পথটা এই 'অন্তর উপলব্ধির' মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই 'অন্তর উপলব্ধিতে' একটা নতুন জগতের তৈরি সৃষ্টি হয় একে বলা হয় 'মহা মানুষের জগৎ'। 'মহৎলোক'। এই মহৎলোকে যারা সাধনা করেন, তপস্যা করেন,ত্যাগ করেন এবং সংসারের জন্য কল্যাণ কামনা করেন তার স্পন্দন থেকে, সত্তা থেকে জ্যোতি থেকে, উর্যা থেকে যে জগৎ সৃষ্টি হয়, তা 'তপো লোক'। একজন মানুষের সৃষ্টি নয় ,অনেক জনের। তাই বহু মহৎ জন এ লোকে আছে, তাই তাকে বলা হয় 'জনলোক'। তাহলে কি হলো? মহতের দ্বারা একটা সৃষ্টি এবং তারা যেটা করছেন -তপস্যা, তাই সত্য। সেটা হল তাদের বহু সাধনার ধন। সেই 'সত্যি'ই তো লোকদেরকে ধরে আছে। সত্যকে সত্য ধরে আছে। তার মধ্যে জারিত হচ্ছে শৃংখলাবদ্ধ জীব। শৃংখলাবদ্ধ সেই আচরণকে বলে ধর্ম যা ছন্দময়। ছন্দের কিরন চন্দ্রে, ছন্দের অমৃত যখন সূর্য উঠছে সূর্য ডুবছে , সকালবেলা পাখিরা তারা তাদের নীড় ছেড়ে বেরোচ্ছে, সন্ধ্যেবেলায় তারা কুলে যাচ্ছে,-সব জায়গাতেই সেই ছন্দের আবর্তন। আবর্তনের অমৃত। এর মধ্যে নিজেকে ফেলার নামই হচ্ছে ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়া । যে এসব না জেনে ঘুরছে সে পশু আর যে জেনে ঘুরছে সে আনন্দময় দেবতা। এখানে কিন্তু কোন জাত পাতের গণ্ডি নেই। দেশের গণ্ডি গণ্ডি নেই । হাতটা খুলে দুদিকে প্রসার করে যদি আমরা আকাশের নিচে দাঁড়াই, তখন শুধু একটাই সত্যি- আমি, পৃথিবীর আর মাথায় আকাশ। আমি আমার চোখে যা দেখতে পাচ্ছি, যা অনুভব করছি- আলো,বাতাস ,সমুদ্র, এই মাঠ, গাছপালা তা শুধু আমার একার নয়। এ সমস্ত আমার পাশের মানুষেরও এবং যে প্রাণী মন্ডল আছে তাদেরও । এই সাম্যের সুরে এখানে সবার সমান অধিকার। এই যে মহৎ লোকের ধ্যানমন্ডল , বাণী মন্ডল এটি ঘেরা মানুষ দিয়ে। মহৎ মন্ডল আছে মানুষ মন্ডল এর ভেতরে। এই মানুষ কাদের দ্বারা পরিব্যাপ্ত না প্রাণী মন্ডল দিয়ে। প্রাণী মন্ডল ঘেরা আছে উদ্ভিদ মন্ডল দিয়ে। উদ্ভিদ মন্ডল ঘেরা আছে জলবায়ু এবং পৃথিবী মন্ডল দিয়ে। পৃথিবী মন্ডল ঘেরা আছে সৌরমন্ডল দিয়ে। সৌরমণ্ডল ঘেরা আছে নক্ষত্রমন্ডল দিয়ে ।নক্ষত্রমণ্ডলী মহাবিশ্বে আমাদের নিয়ে যায়। এইযে চক্রাকার বিরাট পরিধি একেই দেবতা হিসেবে পুজো করা যায়। ইনিই সেই বিরাট দেবতা। যা কল্পনা নয় যা বাস্তব। বিদ্যমান। কোন অবিশ্বাসী কি এটা অস্বীকার করতে পারে? সুতরাং এরই ধ্যান করা উচিত। প্রাণীদের মধ্যে কোন প্রাণীর দুধ আমরা খেয়ে বেঁচে থাকি ? গরু। তাই গরুকে আমরা মা বলি। তাই গরুকে রক্ষার জন্য সবসময় প্রাণটা আমাদের কেঁদে ওঠে। যে আমাদের দুধ দিচ্ছে তার মাংসটা নাইবা খেলাম। ত্যাগে দেবতা হয়। আর ভোগে পশু। ভুলে গেলে চলবে না মানুষও এক ধরনের প্রাণী। একটা পশুর গুণ মানুষের মধ্যে যখন প্রকাশ পায়, তখন পশুগুলো জেগে ওঠে । খুন ,ধর্ষণ, মিথ্যে কথা বলা- এগুলো সবই নিজের লালসার প্রকাশ। পশুর মধ্যে যা হয় । আহার নিদ্রা মৈথুনের জন্য তাদের দিনরাত ছুটে চলা, এগুলো পশুর গুণ। এই পশুর থেকেও মানুষ নিকৃষ্ট যখন সে পশুতে পরিণত হয় কারণ তার একটা বুদ্ধি সত্তা আছে। পশু কিন্তু নির্লজ্জ হলেও একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। মানুষের নিয়মটা নেই, তাই পশুতে পরিণত হয়। আর যদি সে মানুষ থাকে বা যদি তার ভেতর দেবতার প্রকাশ হয় তখন সেই হয়ে যায় উৎকৃষ্ট। আগে ত্যাগ ,সংযম ,বৈরাগ্য তারপর প্রেম ,প্রীতি ও ভালোবাসা । ভুলে গেলে চলবে না মানুষ স্বভাবত একটা পশু যার মধ্যে একজন দেবতা আছে। তাকে জাগিয়ে তোলাটাই আমাদের ধর্ম। প্রাণীদের যে ধারণ করে আছে, সেই জীবকুল যার অক্সিজেন নিয়ে আমরা বেঁচে আছি তারা হল গাছ। বৃক্ষ লক্ষ লোককে লালন করে মাটির পৃথিবীতে। পৃথিবী একটা গ্রহ। সৌর লোকে আছে। কিন্তু এখানে আছে অক্সিজেন। এখানে আছে জল। তাই আছে প্রাণ। এই অক্সিজেন তৈরি হলো কিভাবে? কোথা থেকে এলো এতো অক্সিজেন? এসব নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রশ্নের অন্ত নেই। কিন্তু দর্শনও এ প্রশ্ন করে। তার উত্তর দেয়। যখন সূর্য গ্রহ নক্ষত্র ভেতরে সূর্যের অস্তিত্ব ছিল না তখন ছিল বায়ু আকারে সমস্ত মৌলিক পদার্থ। এরই ভেতর থেকে আগুনের সংযোগে সৃষ্টি হয়েছে অক্সিজেন সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঘোড়ার মত হয়ে ছুটে এসেছে পৃথিবীতে। তাই তার বেদে নাম মাতরিশ্বা। এ অশ্ব মায়ের মত জন্ম দিয়েছে অক্সিজেন ও জলের। তাই তিনি মাতরিশ্বা। এই মাতরিশ্বাই অক্সিজেন ও জল সৃষ্টির কারণ। এটাই বেদের উত্তর। সূর্য থেকে পৃথিবী এমন একটা দূরত্বে আছে যেখানে তার উষ্ণতা পৃথিবীর জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করছে ।সূর্যের যদিও অনেক গ্রহ আছে কিন্তু প্রাণ আছে এই পৃথিবীতে। এ যেন সূর্যেরই আত্মার জীবন্ত হয়ে ওঠা। তাই পৃথিবীতে এই অভিব্যক্তি। আর সূর্য যে গ্যালাক্সিতে আছে এরকম অনেক গ্যালাক্সি হয়তো আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রাণ কিন্তু এখানেই। এই পৃথিবীতেই। সুতরাং যতই আমরা অস্বীকার করি ,সেই আত্মার এই অভিব্যক্তি এই বিরাট থেকে আস্তে আস্তে মানুষে পরিণত হওয়ায়। এই অভিব্যক্তি প্রমাণ করে পরমেশ্বরের অস্তিত্বের। যা সবসময়ই বিদ্যমান। তাই তিনি 'সৎ'।এবং আমার চেতনা, মানুষের চেতনা প্রমাণ করে তিনি জীবন্ত। বুদ্ধিমত্তা প্রমাণ করে তিনি 'চৈতন্যময়'। আমাদের আনন্দের লালসা প্রমাণ করে তিনি 'আনন্দময়'। আর মহা মানুষরা প্রমাণ করে ভোগ নয় ত্যাগ এবং বৈরাগ্য দিয়েই নিজেকে বড় করা যায়। আর সেই 'বিরাট বড়'র সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। এইযে বেদের বিজ্ঞান একেই শ্রী রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ ঘরে ঘরে পৌঁছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। এই হল 'প্র্যাকটিক্যাল বেদান্ত'। সংসারে যেখানে নিজের আবর্তনে নিজে থেকেও দুঃখ কষ্ট না পেয়েও 'আনন্দে' বহু কাজ করা যায়।তাই 'সেবা'। তাই 'পুজো'। 'বিরাটের'। 'রাজরাজেশ্বরের'। তাই জীবনের লক্ষ্য। সার্থকতা।।