জানেন কি? কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে ভগবান শ্রী গৌতম বুদ্ধের অস্থি!
১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ববিদ William Pepe উত্তরপ্রদেশের বস্তি জেলার ভারত-নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন পিপ্রহা নামক একটি গ্রামে খনন কার্য চালানোর সময় একটি Inscribed Relic Casket বা খোদাই করা ভস্মাধার আবিষ্কার করেন। ভূগর্ভের প্রায় ১৮ ফুট নীচে প্রোথিত একটি বড় পাথরের বাক্সের মধ্যে ভস্মাধারটি রক্ষিত ছিল। ভস্মাধারে দুটি হাড়ের অংশ এবং কিছুটা ছাই রক্ষিত ছিল। এছাড়াও এই বাক্সটি থেকে জপমালা, মূল্যবান রত্ন এবং কিছু সোনার পাত পাওয়া যায়।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যে ভস্মাধারটি পাওয়া গিয়েছে, তার উপরে ব্রাহ্মী লিপিতে খোদিত একটি লেখা পাওয়া গিয়েছে এবং সেই লিপিটির পাঠোদ্ধার করাও সম্ভব হয়েছে। গোলাকার পাত্রের উপর ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা রয়েছে:
"সূকিতিভতিং(ম) সভাগিনিকং(ম) সপুতদলং(ম) য়ম সলিলনিধেন বুধসা ভগবতে সকিয়ানম্"
অর্থাৎ,
"পাত্রের মধ্যে রক্ষিত দেহাবশেষটি (অস্থি) হল ভগবান বুদ্ধের, যেটি দান করা হচ্ছে শাক্য-সূকতি ভাই ও তাদের পরিবারের বোন, পুত্র এবং স্ত্রী-দের।"
খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে কপিলাবস্তুর শাক্যবংশীয় রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) জন্মগ্রহণ করেন। খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ভগবান বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ ঘটে এবং তাকে দাহ করবার পরে আটটি রাজ পরিবারের মধ্যে তাঁর পবিত্র দেহাবশেষগুলি বন্টন করে দেওয়া হয়। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল শাক্যবংশ। এছাড়াও অশোকবন্দনা নামক পুস্তকে উল্লেখ আছে যে, সম্রাট অশোক যিনি পাটলিপুত্রের শাসক ছিলেন, তিনি ভগবান বুদ্ধের দেহাবশেষ রক্ষিত আটটি স্তুপের মধ্যে সাতটি থেকে ভগবান বুদ্ধের দেহাবশেষ বার করেন এবং সেগুলিকে ভাগ করে সমস্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ৮৪০০ টি স্তুপের নির্মাণ করেন। একমাত্র এই পিপ্রহা স্তুপটি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়ে যায়।
১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে এই স্তুপটির খননকার্যের দায়িত্ব পড়ে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংস্থার সুপারিনটেনডেন্ট শ্রী কে. এম শ্রীবাস্তবের উপর। তিনি পুনরায় স্তুপটির আরো গভীরে খননকার্য চালান ও উদ্ধার করেন বেশ কিছু টেরাকোটা ফলক, যাতে খোদিত রয়েছে 'ওঁ দেবপুত্র বিহারে কপিলাবস্ত সংঘ' এবং 'মহা কপিলাবস্ত ভিক্ষু সংঘ' যা ইঙ্গিত করে, সম্ভবত এখানেই ছিল সুপ্রাচীন কপিলাবস্ত নগরী।
আজকের দিনে নেপালের তিলাউড়াকোট নামক স্থানকে প্রাচীন কপিলাবস্তু নগরী হিসেবে পরিগণিত করা হয়। নেপালের তিলাউড়াকোট এবং ভারতের উত্তরপ্রদেশের পিপ্রহা গ্রামের মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার ব্যবধান। পিপ্রহা গ্রামের খননকার্যে উদ্ধার হওয়া এই ভস্মাধার এবং টেরাকোটার ফলকগুলি প্রমাণ করে যে, প্রাচীন কপিলাবস্তু নগরী নেপালে নয় বরং ভারতে অবস্থিত।
বর্তমানে ব্রাহ্মীলিপি খোদিত গোলাকার ভস্মাধারটি এবং তার ভিতরে রক্ষিত ভগবান শ্রী গৌতম বুদ্ধের দুটি অস্থি আমাদের কলকাতার জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রয়েছে।
সংগৃহীত।
Source : whatsapp massage.writer and informer : unknown.
No comments:
Post a Comment