Translate

Wednesday, January 27, 2021

ভারত ভ্রমনের পর স্বামী বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ

 নরেন্দ্রনাথকে দেখে ঠাকুরের খুশী ধরে না। এদিনও ঠাকুর তাঁকে গান শোনাতে বললেন।

নরেন্দ্রনাথ এদিন ঠাকুরকে দুটি গান শুনিয়েছিলেন। 

প্রথম গানটি নরেন্দ্রনাথ গাইলেন ---

"মন চল নিজ নিকেতনে।

সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে, ভ্রম কেন অকারণে॥

..... মন চলো নিজ নিকেতনে।"

'কই, আর একখানা গা' --- বললেন ঠাকুর।

নরেন্দ্রনাথ আবার গান ধরলো, গানটি বেচারাম চট্টোপাধ্যায় রচিত ---

"যাবে কি হে দিন আমার বিফলে চলিয়ে।

আছি নাথ দিবানিশি আশাপথ নিরখিয়ে॥

তুমি ত্রিভুবন নাথ, আমি ভিখারি অনাথ।

কেমনে বলিব তোমায় এস হে মম হৃদয়ে॥

হৃদয়-কুটীর-দ্বার, খুলে রাখি আনিবার।

কৃপা করি একবার এসে কি জুড়াবে হিয়ে॥"

গান শুনে ভাবে বিভোর ঠাকুর, হঠাৎ চমকিয়ে উঠে নরেন্দ্রনাথের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন উত্তরের বারান্দার ঘরে। বন্ধ হলো বাইরের দরজা। মুখোমুখি বসলেন দুজনে।

ঠাকুরের চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে বলছেন, "তোর কি মায়া দয়া নেই ? কোথায় ছিলি এতদিন ? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চেয়ে আছি তোর পথ পানে। কি করে আমায় ভুলে ছিলি ?"

"সেদিন মাঝরাতে তুই এলি আমার ঘরে, আমায় ঘুম থেকে টেনে তুললি। বললি, আমি এলাম...."

ঠাকুরের কথা শুনে চমকে উঠলো নরেন্দ্রনাথ।

এই সাক্ষাত নরেন্দ্রনাথের জীবনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "তাহাকে [রামকৃষ্ণ] একজন সাধারণ লোকের মতো বোধ হইল, কিছু অসাধারণত্ব দেখিলাম না। অতি সরল ভাষায় তিনি কথা কহিতেছিলেন, আমি ভাবিলাম, এ ব্যক্তি কি একজন বড় ধর্মাচার্য হইতে পারেন ? আমি সারা জীবন অপরকে যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, তাহার নিকটে গিয়া তাহাকেও সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম,

'মহাশয়, আপনি কি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ?'

তিনি উত্তর দিলেন --- 'হাঁ।'

'মহাশয়, আপনি কি তাহার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারেন ?'

'হাঁ'। 

'কি প্রমাণ ?' 

'আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাহাকেও ঠিক সেইরূপ দেখি, বরং আরও স্পষ্টতর, আরও উজ্জ্বলতররূপে দেখি।'

আমি একেবারে মুগ্ধ হইলাম।"

.

জয় ঠাকুর

 .

(সংগৃহীত)

No comments:

Popular Posts