দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবীর আসল নাম ‘জগদীশ্বরী’। কিন্তু রাণী রাসমণির গুরু উমাচরণ ভট্টাচার্য্য দেবীর নাম দিয়েছিলেন ‘ভবতারিণী’। তিনি একসময় নবদ্বীপের পোড়া-মা তলায় সাধনা করতেন। নিকটেই কালীমন্দির, অধিষ্ঠাতা দেবী ‘ভবতারিণী’।
উমাচরণ ভবতারিণীর সাধনা করেছিলেন। তিনি তাঁর আরাধ্যা দেবীর নামে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী দেবীর নামকরণ করেছিলেন ‘ভবতারিণী’। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই নামটি রক্ষা করেছিলেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যাকে মা বলে ডাকতেন, যাকে জল না খাইয়ে নিজে কিছু মুখে তুলতেন না সেই মা ভবতারিণীর মূর্তি তৈরি করেছিলেন কাটোয়ার দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর।
১৮৫৫ সালে রানী রাসমণির ইচ্ছায় দাঁইহাটের বিখ্যাত ভাস্কর নবীন মা ভবতারিণীর মূর্তি তৈরি করেছিলেন। কোলকাতায় গিয়ে মাসাধিকাল ধরে হবিষান্ন খেয়ে নিষ্ঠা সহকারে মূর্তি তৈরির কাজ শেষ হলে, রাণী রাসমণির মন হল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের গর্ভ গৃহের মাপে মূর্তি বেমানান হচ্ছে। রাণী ফের নবীন ভাস্কর কে আর একটু বড়ো করে মূর্তি তৈরীর বরাত দেন।
নবীন ভাস্কর মোট তিনটি মায়ের মূর্তি তৈরী করেন। তিনি পুনর্বার যে মূর্তিটি তিনি তৈরী করেন, সেটি রাণীর খুবই পছন্দ হয়। সেটিই ভবতারিণী কালী বলে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পূজিতা এবং জগৎ বিখ্যাত হন।
ভবতারিণীর দু'বোন কৃপাময়ী ও ব্রহ্মময়ী। একই কোষ্ঠীপাথর থেকে তৈরি হয়েছিল ভবতারিণী, কৃপাময়ী আর ব্রহ্মময়ীর বিগ্রহ। সর্বপ্রথম তৈরি হয় মা কৃপাময়ীর মূর্তি। এরপর তৈরি হয় মা ব্রহ্মময়ী ও মা ভবতারিণীর বিগ্রহ।
প্রসঙ্গত এখানে বড় ছোটর হিসাব করা হয় বিগ্রহের উচ্চতার বিচারে। সেই অনুযায়ী ভবতারিণীর মূর্তি সবথেকে বড়। তাই সে বড় বোন। মেজ হলেন মা কৃপাময়ী ও ছোট বোন ব্রহ্মময়ী। এই তিন দেবী মূর্তির এই নামকরণও করেন একই মানুষ। তিনি স্বয়ং ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।
ভবতারিণী, কৃপাময়ী আর ব্রহ্মময়ী থাকেন বরাহনগরে। তিন বোনের বাড়িও একদম পাশাপাশি। ভবতারিণী আর কৃপাময়ীর বাস নদীর পারে। আর ব্রহ্মময়ী থাকেন কৃপাময়ীর থেকে ঠিক দশ মিনিট পায়ে হাঁটাপথ দূরে। ভবতারিণী হলেন দক্ষিণেশ্বরের কালী, কৃপাময়ী হলেন বরাহনগরের জয় নারায়ণ মিত্রর মন্দিরের কালী এবং ব্রহ্মময়ী হলেন কাশীপুরের প্রামানিক ঘাট রোডের কালী।
.
জয় মা
.
(সংগৃহীত)